মুক্তিযোদ্ধা কাঁকন বিবি গুরুতর অসুস্থ, হাসপাতালে ভর্তি
গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধা কাঁকন বিবিকে সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ব্রেইন স্ট্রোক করা কাঁকন বিবি অনেকটা অচেতন অবস্থায় রয়েছেন। কাঁকন বিবির একমাত্র মেয়ে সকিনা বিবি জানান, গত বুধবার তিনি ব্রেনস্ট্রোক করার পর থেকে তার শরীর অনেকটাই নিস্তেজ। গত শুক্রবার তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওসমানী হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. দেবপদ রায় বলেন, ওয়ার্ড থেকে শনিবার রাতে কাঁকন বিবিকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছে। রোববার ছাতক-দোয়ারাবাজার এলাকার সাংসদ মুহিবুর রহমান মানিক হাসপাতালে কাঁকন বিবিকে দেখে আসেন। ১৯৭১ সালে কাঁকন বিবি তিন দিনের কন্যা সন্তান সখিনাকে রেখে যুদ্ধে চলে যান। মুক্তিযোদ্ধাদের গুপ্তচর হিসেবে কাজ করতে গিয়ে তিনি রাজাকারদের হাতে শ্লীলতাহানির শিকার হন। তিনি কেবল মুক্তিবাহিনীর গুপ্তচর হিসেবেই কাজ করেননি। সেই সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধেও অংশ নেন।
১৯৭১ এর জুনে পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে ধরা পড়েন কাঁকন বিবি। তাদের বাঙ্কারে দিনের পর দিন অমানুষিকভাবে নির্যাতন সহ্য করতে হয় তাকে। এরপর তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। তখনই কাঁকন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নেন। জুলাই মাসে তার সঙ্গে দেখা হয় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের। মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী তার সঙ্গে সেক্টর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মীর শওকতের সঙ্গে দেখা করিয়ে দেন। তার ওপর দায়িত্ব পড়ে গুপ্তচর হিসেবে বিভিন্ন তথ্য জোগাড়ের। কাঁকন বিবি শুরু করেন পাকিস্তানিদের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্যসংগ্রহ করার। তার সংগৃহীত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ চালিয়ে সফল হন।
গুপ্তচরের কাজ করতে গিয়েই দোয়ারাবাজার উপজেলার বাংলাবাজারে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে পুনরায় ধরা পড়েন তিনি। এবার একনাগাড়ে ৭ দিন পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকারেরা তাকে বিবস্ত্র করে অমানুষিক নির্যাতন চালায়। লোহার রড গরম করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে দেয়া হয় ছ্যাঁকা। মৃত ভেবে অজ্ঞান কাঁকন বিবিকে পাকি বাহিনী ফেলে রেখে যায়। তাকে উদ্ধার করে বালাট সাব-সেক্টরে নিয়ে যাওয়া হয়। সুস্থ হয়ে তিনি পুনরায় ফিরে যান বাংলাবাজারে। অস্ত্র চালনায় প্রশিক্ষণ নেন। মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলীর তাকে প্রশিক্ষণ দেন। এর পরবর্তীকালে তিনি সম্মুখযুদ্ধ আর গুপ্তচর উভয় কাজই শুরু করেন। কাঁকন বিবি প্রায় ২০টি যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।