মুজিব একটি কবিতা; ঐশ্বরিক আগুন
হাসান হামিদ
‘রাসেল অবোধ শিশু তোর জন্য আমিও কেঁদেছি
খোকা, তোর মরহুম পিতার নামে
যারা একদিন তুলছিলে আকাশ ফাটানো জয়ধ্বনি
তারাই দু’দিন বাদে থুতু দেয়, আগুন ছড়ায়
আমি ক্ষমা চাই, আমি সভ্যতার কাছে ক্ষমা চাই’।
(সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়)
বৃটিশ লর্ড ফেন্যার ব্রোকওয়ে বলেছিলেন, ‘শেখ মুজিব জর্জ ওয়াশিংটন, গান্ধী এবং দ্যা ভ্যালেরার থেকেও মহান নেতা’। নিউজ উইকে বঙ্গবন্ধুকে আখ্যা দেওয়া হয় ‘পয়েট অফ পলিটিক্স’ বলে। বেশ কয়েকদিন ধরে ‘আমি মুজিব বলছি’ নামের একটি বই পড়ছি। বইয়ের লেখক কৃত্তিবাস ওঝা, আসল নাম রণেন মুখার্জি। ভারতের সাংবাদিকদের আন্দোলনের জনক হিসাবে পরিচিত রণেন মুখার্জি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করেছিলেন। দৈনিক বসুমতি পত্রিকার সাংবাদিক হিসাবে তিনি মুক্তিযুদ্ধের সংবাদ সংগ্রহ করেন। সে সময় পাকিস্তানী বাহিনীর বর্বতার উপর তার লেখা বেশ কিছু রিপোর্ট দারুণ আলোড়ন তুলেছিল। এই বইয়ের আমাদের জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান-এর বেশ কিছু বিষয় তিনি লিখেছেন, যেগুলো অন্য কোথাও পড়িনি।
কবি শামসুর রাহমান শেখ মুজিবকে কাছ থেকে দেখেছেন। ১৯৪৯ সালের মার্চে শেখ মুজিবসহ ছাত্ররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলনে নামে। শামসুর রাহমানও সেই দলে ছিলেন। তাঁর জবানীতে সেদিনের স্মৃতিতে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে ছাত্রনেতা মুজিবের নেতৃত্বগুণ। শামসুর রাহমান লিখেছেন : ‘শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আমরা কিছু সংখ্যক সাধারণ ছাত্র তখন ভাইস চ্যান্সেলরের বাসভবন ঘেরাও করেছিলাম।…মনে পড়ে, সেদিন দশাসই ঘোড়সওয়ার পুলিশের তাড়া খেয়েছিলাম। একটি বলবান অশ্বের খুরের ঠোকন আর পুলিশের ব্যাটের বাড়ি খেতে খেতে বেঁচে যাই কোনোমতে। দীর্ঘকায় কান্তিমান শেখ মুজিব তাঁর কথা এবং জ্বলজ্বলে দৃষ্টি দিয়ে আমাদের অনুপ্রাণিত করছিলেন, যোগাচ্ছিলেন সাহস। সেদিন ঘোড়ার পায়ের নিচে পড়ে থেঁৎলে গেলেও হয়তো কোনো খেদ থাকতো না। প্রকৃত নেতার প্রেরণার শক্তি বোধহয় এইরকমই হয়’। শুধু একটি নয়, এমন অসংখ্য ঘটনার মধ্য দিয়েই শেখ মুজিব ধাপে ধাপে উঠে এসেছেন বাঙালির হৃদয়ে।
শেখ মুজিবুর রহমান নিজের ভাবনা সম্পর্কে তাঁর আত্মজীবনীতে বলেছেন, ‘একজন মানুষ হিসাবে সমগ্র মানবজাতি নিয়েই আমি ভাবি। একজন বাঙালি হিসাবে যা কিছু বাঙালিদের সঙ্গে সম্পর্কিত তা-ই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়। এই নিরন্তর সম্পৃক্তির উৎস ভালোবাসা, অক্ষয় ভালোবাসা, যে ভালোবাসা আমার রাজনীতি এবং অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে।’ বাঙালিদেরকে নিরন্তর ভালোবাসার কারণেই বঙ্গবন্ধুর পথচলা হয়ে উঠেছিলো কণ্টকময়তায় পরিপূর্ণ, সংগ্রাম ও ত্যাগের মহিমায় উৎকীর্ণ। হুমায়ূন আজাদ মনে করতেন বঙ্গবন্ধু আর সবার মতো রাজনীতি করেন নি। তাঁর নীতি জনতার নীতি ছিলো। তিনি ‘যুগান্তরের রাজনীতি’ করেছিলেন। তিনি শৈশব, কৈশোর, যৌবন থেকে বেড়ে উঠেছিলেন ইতিহাস বদলে দেয়ার জন্যে। দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় শেখ মুজিব পরিণত হয়েছেন মহানায়কে।
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখালেখি অনেক দিন ধরেই চলছে। বিদেশি পত্র-পত্রিকা ছাড়াও বিদেশি লেখকদের গল্পে, উপন্যাসে এবং কবিতায় বঙ্গবন্ধুকে স্থান দিয়েছেন। যেমন মার্কিন লেখক রবার্ট পেইনের ‘দি চর্টার্ড এন্ড দ্য ডেমড’, সালমান রুশদীর ‘মিড নাইট বিলড্রেম’ এবং ‘শেইম’, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পূর্ব পশ্চিম, জাপানি কবি মাৎসুও শুকাইয়া, গবেষক ড. কাজুও আজুমা, প্রফেসর নারা, মার্কিন কবি লোরি এ্যান ওয়ালশ, জার্মান কবি গিয়ার্ড লুইপকে, বসনিয়া কবি ইভিকা পিচেস্কি, ব্রিটিশ কবি টেড হিউজের কবিতায় বঙ্গবন্ধু উপস্থাপিত হয়েছেন।
১৯৭৫ সালে ২২ জন ব্যক্তিকে বঙ্গবন্ধু স্বর্ণপদকে ভূষিত করা হয়। তাঁদের মধ্যে চারজন ছিলেন ভারতীয় বাঙালি। ভারতের উর্দু কবি কাইফি আজমী “বাংলাদেশ” শিরোনামে ১৯৭১ সালে একটি কবিতা লিখেন, যার ভেতর শেখ মুজিবের ছবি ভেসে উঠেছে। কবি নির্মলেন্দু গুণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে কবি এ্যালেন গিনসবার্গকে শেখ মুজিবকে নিয়ে একটি কবিতা লেখার অনুরোধ করেন।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক আবিদ খান তার ‘সিজনাল এডজাস্টমেন্ট’ শিরোনামে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা উপন্যাসটি ১৯৯৫-এ কমনওয়েলথ লেখক পুরস্কার পান। এ গ্রন্থে প্রসঙ্গ ক্রমেই এসেছেন শেখ মুজিব। শেখ মুজিব অনেক অসুস্থ কবি-সাহিত্যিকদের সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মহাদেব সাহা অন্যতম। বার্লিনে চিকিৎসাকালীন সময়ে আরেকটি চিত্র পাওয়া যায়, ‘আমি কি বলতে পেরেছিলাম’ কবিতায় : “তাই আমার কাছে বার্লিনে যখন একজন ভায়োলিন বাদক/বাংলাদেশ সম্বদ্ধে জানতে চেয়েছিল/ আমি আমার দু’পকেট থেকে ভাঁজ করা একখানি দশ/ টাকার নোট বের করে শেখ মুজিবের ছবি দেখিয়েছিলাম/ বলেছিলাম, দেখো এই বাংলাদেশ।”
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বিশ্বের খ্যাতিমান অনেক ব্যক্তি মন্তব্য করেছেন। নোবেল পুরস্কার বিজয়ী উইলি ব্রান্ট বলেছেন, ‘মুজিব হত্যার পর বাঙ্গালীদের আর বিশ্বাস করা যায় না’। ফিদেল ক্যাস্ট্রো বলেছেন, ‘আমি হিমালয় দেখিনি, বঙ্গবন্ধুকে দেখেছি’। হেনরি কিসিঞ্জার বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবের মত তেজী এবং গতিশীল নেতা আগামী ২০০ বছরের মধ্যে এশিয়া মহাদেশে আর পাওয়া যাবে না’। প্রভাবশালী ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের মতে, ‘শেখ মুজিব ছিলেন এক বিস্ময়কর ব্যক্তিত্ব।’
ভারতীয় বেতার আকাশ বানী ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট তাদের সংবাদ পর্যালোচনা অনুষ্ঠানে বলে, ‘যিশুমারা গেছেন। এখন লক্ষ লক্ষ লোক ক্রস ধারণ করে তাকে স্মরণ করছে।মূলত একদিন মুজিবই হবেন যিশুর মতো’।
বাঙালি জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বাঙালির মুক্তির দূত। উইলিয়াম শেক্সপিয়ার একবার বলেছিলেন, ‘এ জগতে কেউ কেউ জন্মগতভাবে মহান, কেউ মহত্তের লক্ষণ নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন, আবার কেউ স্বীয় প্রচেষ্টায় মহানুভবতা অর্জন করেন।’ কথাটি বঙ্গবন্ধুর জীবনের সাথেও মিলে যায়। শৈশব থেকেই শেখ মুজিব সচেতন ও সমগ্রতার মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠেছেন। তিনি জন্ম থেকেই যেন ঐশ্বরিকভাবে নেতৃত্বের ও মানবতার গুণাবলি পেয়ে এসেছেন। তাঁর সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এপিজে আবদুল কালাম বলেছেন, শেখ মুজিব ছিলেন ‘ঐশ্বরিক আগুন’।
বিশেষত ১৯৭১ সাল পরবর্তীতে শেখ মুজিব হয়ে উঠেন বিশ্ব নেতাদের চোখে বিস্ময়, ঘোরলাগা এক ব্যক্তিত্ব। তৎকালীন বিশ্ব মিডিয়াগুলোও বঙ্গবন্ধুকে যথার্থভাবে মূল্যায়ন করতে সক্ষম হয়েছিলো। ১৯৭১ সালের ২ মে নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বলা হয়েছিলো : ‘সাধারণ বাঙালির কাছে তাঁর কাপড় স্পর্শ করা ছিল তাবিজে শুভ ফল পাওয়ার মতো। তাঁর বাক্যই হয়ে উঠেছিল আইন।তাঁর বাসা থেকে তিনি সব করছিলেন। সবার সঙ্গেই ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, তাঁর কাছে যাওয়ায় কোনো বাধা ছিল না।…সম্পদ বা পদমর্যাদার দিকে তাঁর কোনো নজর ছিল না, সম্পূর্ণভাবে আন্তরিক ছিলেন জনগণের প্রতি।’
মূলত মুজিব চরিত্রে আবেগ, বাগ্মিতা, সাহসিকতা ও ত্যাগের অপূর্ব সম্মিলন ঘটেছে। যার ফলে তিনি পরিণত হয়েছেন মহানায়কে। মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত এই নেতা সবসময়ই জনগণকে আপন ভেবেছেন। তাদের কষ্টকে নিজের কষ্ট হিসেবে দেখেছেন। অন্যায় ও অপশাসনের বিরুদ্ধে তাঁর কণ্ঠ এতই সুউচ্চ ছিলো যে, মৃত্যুভয়ও তাঁকে কুণ্ঠিত করতে পারেনি। জেল-জুলুম-নিপীড়নের মাধ্যমে শাসকগোষ্ঠী শেখ মুজিবকে দমাতে চেয়েছে। কিন্তু বাংলার মেহনতি মানুষের সম্মিলিত কণ্ঠধারকের স্বর থেমে যায় নি। বরং বিরুদ্ধ স্রোতেও তিনি পথ চলেছেন অবিরাম, স্বপ্ন দেখেছেন সোনার বাংলার। তাঁর এবং সাতকোটি মানুষের স্বপ্ন পূরণ হয়েছিলো একাত্তরের যুদ্ধ জয়ের মধ্য দিয়ে। এ কারণেই তিনি মহৎ ও মহান।
বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনের পর বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠনের কাজে হাত দেন। তাঁর প্রচেষ্টায় স্বল্প সময়েই বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। তিনি দেশ গঠনের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে মনোযোগী হন। সে-সময়ে বিশ্বের অধিকাংশ প্রভাবশালী নেতাই বঙ্গবন্ধুকে সম্মান করতেন। বঙ্গবন্ধু যখনই কোনো আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গিয়েছেন তখনই বঙ্গবন্ধুর প্রতি বিশ্ব নেতাদের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্টভাবে ধরা পড়েছে। ১৯৭৩ সালের আগস্টে কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেন শেখ মুজিবুর রহমান। সেই সময়ে তাঁর সাথে ছিলেন বাংলাদেশী কূটনৈতিক ফারুক চৌধুরী। সেই সম্মেলনে বিশ্বনেতা বঙ্গবন্ধুকে কীভাবে গ্রহণ করেছেন তাঁর বর্ণনা ফারুক চৌধুরী ‘আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বঙ্গবন্ধু’ নিবন্ধে পাওয়া যায়। তাঁর ভাষ্যে : ‘অটোয়াতে প্রথমবারের মতো অনেক রাষ্ট্রনায়কের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর পরিচয় হয়। অস্ট্রেলিয়ার হুইটলাম, জ্যামাইকার মাইকেল ম্যানলি, মালয়েশিয়ার টুন রাজ্জাক, মরিশাসের শিবসাগর রাম গোলাপ, সিঙ্গাপুরের লি কোয়ান ইউ, নিউজিল্যান্ডের নরম্যান কার্ক, শ্রীলংকার শ্রীমাভো বন্দরনায়েকে সহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনের জাঁদরেল সব ব্যক্তিত্ব। প্রথম পরিচয়েই মনে হতো বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে যেন তাঁদের পরিচয় অনেকদিনের। বঙ্গবন্ধুর ব্যবহারের উষ্ণতা ও অমায়িকতা তাদের সবার মনকে ছুঁয়ে যেতে দেখেছি।’ ১৯৭৩ সালে ‘জুলিও কুরি শান্তি পদক’ পেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। এ পদক বঙ্গবন্ধুর হাতে তুলে দিয়েছিলেন বিশ্ব শান্তি পরিষদের মহাসচিব রমেশচন্দ্র। তিনি তাঁর বক্তব্যের এক পর্যায়ে সেদিন বলেছিলেন, ‘শেখ মুজিব শুধু বঙ্গবন্ধু নন, আজ থেকে তিনি বিশ্ববন্ধুও বটে।’
১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু যখন ওআইসি সম্মেলনে যোগ দেন, তখন তাঁর সফর সঙ্গী ছিলেন তোফায়েল আহমেদ। কমেনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনের মতোই বিশ্বনেতারা ওআইসি সম্মেলনেও বঙ্গবন্ধুকে বিশেষ সম্মান করেন। তোফায়েল আহমেদের লিখনী : ‘বক্তা হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে পরিষদের সভাপতি স্বীয় আসন থেকে উঠে এসে বঙ্গবন্ধুকে মঞ্চে তুলে নিয়েছিলেন। পিনপতন নিস্তব্ধতার মধ্যে বঙ্গবন্ধুর প্রায় ৪৫ মিনিটের বক্তৃতা শেষে সভাপতি নিজেই যখন দাঁড়িয়ে করতালি দিচ্ছেন, তখন স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনায়ক ও প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বিপুলভাবে করতালি দিয়ে আলিঙ্গন করে অভিনন্দিত করেছেন বঙ্গবন্ধুকে। অভাবনীয় সেই দৃশ্য। নিজ চোখে না দেখলে লিখে বোঝানো সম্ভবপর নয়। বঙ্গবন্ধুর প্রতি বিশ্ব নেতাদের ছিল গভীর শ্রদ্ধা। আন্তর্জাতিক রাজনীতির হিমালয়সম উচ্চতায় আসীন ছিলেন তিনি। আমার মনে পড়ে, অধিবেশনে আগত বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা আমাদের কাছে এসে বলেছিলেন, ‘সত্যিই তোমরা গর্বিত জাতি। তোমরা এমন এক নেতার জন্ম দিয়েছ, যিনি শুধু বাংলাদেশের নেতা নন, এশিয়ার নেতা নন; তিনি সমগ্র বিশ্বের নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নেতা।
জাপানি মুক্তি ফুকিউরা আজও বাঙালি দেখলে বলে বেড়ান, ‘তুমি বাংলার লোক? আমি কিন্তু তোমাদের জয় বাংলা দেখেছি। শেখ মুজিব দেখেছি। জানো এশিয়ায় তোমাদের শেখ মুজিবের মতো সিংহ হৃদয়বান নেতার জন্ম হবে না বহুকাল। তিনি তাঁর নেতৃত্বে এ দেশের মানুষকে সেই মুক্তির পথ দেখিয়েছেন, যে পথ পূর্বে আর কেউ দেখাতে পারে নি। বঙ্গবন্ধুর আত্মত্যাগ, আজন্ম লালিত স্বপ্নের বাস্তবায়ন তাঁকে ব্যক্তি থেকে প্রতিষ্ঠানে, দেশ থেকে বিশ্বে, কাল থেকে মহাকালের শাশ্বত পথের দিকে ধাবিত করেছে। অন্যায়কে প্রতিরোধ, অবিচারকে প্রতিহত, শৃঙ্খলকে বন্ধনহীন করার মধ্য দিয়ে তাঁর ঐশ্বরিক আগুন জ্বলে উঠেছে বারংবার। যার ফলে বাঙালি জাতি পেয়েছে তাদের বহুল প্রতীক্ষিত নেতাকে, স্বাধীনতাকে।
‘যতদিন রবে পদ্মা মেঘনা গৌরী যমুনা বহমান
ততদিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান’।
(অন্নদা শংকর রায়)
- হাসান হামিদ- গবেষক ও সদস্য, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র ।