পুলিশ হেফাজতে থাকা ব্যক্তিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কারাদণ্ড দেয়ায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, ‘এটা কোন ধরনের খেলা চলছে?’ চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় মো. বেলাল উদ্দিন নামে এক ব্যক্তিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেয়ার অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে হাইকোর্টের নির্দেশে গতকাল লোহাগাড়া উপজেলার ইউএনও ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহবুব আলম, লোহাগাড়া থানার ওসি (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) ও একই থানার দুজন এসআইসহ (উপ-পরিদর্শক) চারজন আদালতে হাজির হলে এমন মন্তব্য করেন বিচারপতি সৈয়দ মো. দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। শুনানি নিয়ে এ বিষয়ে আজ আদেশের জন্য ধার্য করেন আদালত। আদালতে ইউএনও ও পুলিশ কর্মকর্তাদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী ফারজানা শারমিন। রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) সভাপতি আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।  আইনজীবী ফারজানা শারমিনকে উদ্দেশ্য করে আদালত বলেন, পুলিশ হেফাজতে থাকা ব্যক্তিকে মোবাইল কোর্টে কিভাবে সাজা দিলো? ম্যাজিস্ট্রেট কি অন্ধ ছিলেন? আদালত বলেন, আপনারাই (পুলিশ) গ্রেপ্তার করলেন আবার আপনারাই মোবাইল কোর্টে হাজির করলেন কিভাবে? ১৩ তারিখে (গত বছরের ১৩ই অক্টোবর) গ্রেপ্তার করে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে পরদিন (১৪ই অক্টোবর) মোবাইল কোর্ট বসানো হয় কী করে? এ সময় লোহাগাড়ার ইউএনও ওই থানার ওসি ও দুই এসআইয়ের পক্ষে শুনানি করা আইনজীবী ফারজানা শারমিন ভ্রাম্যমাণ আদালতের ওই সাজার বিষয়ে যুক্তি তুলে ধরেন।

 

এসময়  রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ আদালতকে বলেন, ওনাদের (লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) মতো ব্যক্তিদের কারণে সাধারণ  মানুষ ভ্রাম্যমাণ আদালতের ওপর আস্থা হারিয়েছে। এসময় তিনি লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা না দেয়া এবং লোহাগাড়া থানার ওসিকে প্রত্যাহারের আবেদন জানান। শুনানিতে আদালতের এক প্রশ্নের জবাবে আইনজীবী ফারজানা শারমিন ওই চারজনের পক্ষে আদালতে কনটেস্ট (আইনি লড়াই) করার কথা বললে আদালত আইনজীবীকে ভর্ৎসনা করে বলেন, যেখানে তাদের অপরাধ স্পষ্ট, সেখানে কী করে আপনারা কনটেস্ট করতে চান? ১৩ তারিখে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ১৪ তারিখে তাকে আদালতে হাজির করতে হবে। কিন্তু সেখানে কেন ভ্রাম্যমাণ আদালত বসবে? আদালত বলেন, এটা কোন ধরনের খেলা চলছে? আবার উকিলদের মাধ্যমে কনটেস্ট করতে চাইছে। আপনার সাহস কত! এ ধরনের প্র্যাকটিস করবেন না। সরাসরি বার কাউন্সিলে অভিযোগ পাঠিয়ে দেব। আদালত বলেন, আমরা অর্ডার দিয়ে দিচ্ছি। এ সময় আইনজীবী ফারজানা শারমিন আদালতের কাছে বেশ কয়েকবার দুঃখপ্রকাশ করে বলেন, আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আমি দুঃখিত। আমরা কনটেস্ট করতে চাই না। এরপর আদালত এ বিষয়ে দুপুরে আদেশের সময় নির্ধারণ করলে রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদেশের জন্য আজ দিন ধার্য করেন।
রিটকারীর আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জানান, গত বছরের ১৩ই অক্টোবর রাত নয়টায় বেলাল উদ্দিনকে দুই পুরিয়া গাঁজা রাখার অপরাধে গ্রেপ্তার করে লোহাগাড়া থানা পুলিশ। পরদিন ১৪ই অক্টোবর তাকে আদালতে পাঠানো হয়। এরই মধ্যে ইউএনও মাহবুব আলমের ভ্রাম্যমাণ আদালত বেলাল উদ্দিনকে গাঁজা রাখার অপরাধে ১৪ই অক্টোবর দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে আট মাসের কারাদণ্ড দেন। গত ১০ই জানুয়ারি বেলাল জামিন পান। ভ্রাম্যমাণ আদালতের ওই সাজার বৈধতা চ্যালেঞ্জ ও ক্ষতিপূরণ চেয়ে বেলাল উদ্দিন এ রিট আবেদনটি করেন। গত ১৪ই জানুয়ারি হাইকোর্ট রুল জারিসহ এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ওই থানার ওসি ও দুজন এসআইকে তলব করেন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn