যার নেতৃত্বে হত্যা তাকেই আসামি করা হয়নি : আবরারের বাবা
বার্তা ডেস্ক :: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ ছিলেন কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থী। ক্লাসের ফার্স্টবয় ছিলেন তিনি। নিজে পড়তেন, ক্লাসের পড়া বুঝিয়ে দিতেন সহপাঠীদেরও। সেই স্মৃতি স্মরণ করে কাঁদলেন সহপাঠী ও তার সাবেক শিক্ষকরা। বুধবার বেলা ১১টার দিকে কুষ্টিয়া জিলা স্কুল প্রাঙ্গণে জিলা স্কুল জামে মসজিদে আবরারের জন্য দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। আবরারের সাবেক সহপাঠী ও শিক্ষকসহ শত শত মানুষ এ দোয়া মাহফিলে অংশ নেন। সেখানে আবরারের এক সহপাঠী বলেন, আবরার আমার বন্ধু ছিল। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত তার সঙ্গে পড়েছি। আবরার এত ভালো ছাত্র ছিল যে, টিফিনের ফাঁকে আমাকে অংক করাতো। আমার মতো আরও অনেককে ক্লাসের পড়া বুঝিয়ে দিতো আবরার। জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, জিলা স্কুলে দুই প্রকার ছেলে থাকে। কেউ কেউ ভদ্র, কেউ কেউ দুষ্টু, যাকে বলে চঞ্চল। আবরার ছিল ভদ্র ছেলেদের কাতারে সবার ওপরে। দোয়া মাহফিলে উপস্থিত কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পরিষদের চেয়ারম্যান ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান বলেন, সন্তান হারানোর বেদনা ভুলিয়ে দেয়া যায় না। তবে আল্লাহর ঘরে দাঁড়িয়ে কথা দিচ্ছি, দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে যা প্রয়োজন সবই করা হবে। কোনো অপরাধীকে ছাড় দেয়া হবে না।
স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিল শেষে আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ বুয়েট কর্তৃপক্ষের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সিসিটিভি ফুটেজে যাদের দেখা গেছে তাদের অনেকেই মামলা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। যার নেতৃত্বে টর্চার করে আবরারকে হত্যা করা হয়েছে তাকেই মামলার আসামি করা হয়নি। বাদ পড়াদের মামলায় অন্তর্ভুক্ত করার জোর দারি জানাই আমি। সরকারের পদক্ষেপে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বাবা বরকত উল্লাহ বলেন, প্রধানমন্ত্রী জানেন স্বজন হারানোর ব্যথা। তিনি যদি সিসিটিভি ফুটেজ দেখেন তাহলে আমার বিশ্বাস আবরার হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়া, যারা মামলার এজাহারে বাদ পড়েছেন তারা ধরা পড়বে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার অনুরোধ তিনি যেন সিসিটিভি ফুটেজ দেখে বাদ পড়াদের মামলায় অন্তর্ভুক্ত করার পদক্ষেপ নেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- কুষ্টিয়া সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা, জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক ইফতেখারুল ইসলামসহ আবরারের সাবে সহপাঠী, শিক্ষক-কর্মকর্তাসহ শিক্ষার্থী ও সুধীজন। এদিকে, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালীর রায়ডাঙ্গা গ্রামে গিয়ে তোপের মুখে পড়েছেন বুয়েট উপাচার্য সাইফুল ইসলাম।
স্থানীয় লোকজনের প্রতিরোধের মুখে ভিসি পালিয়ে এসেছেন। বুধবার বিকেল ৫টার দিকে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের গাড়িতে ওই এলাকা ত্যাগ করেন তিনি। এর আগে উপাচার্য আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ ও ভাই আবরার ফায়াজসহ সবাই মিলে কবর জিয়ারত করেন। পরে আবরারের ভাই ও বাবার প্রশ্নবানে জর্জরিত হন উপাচার্য। তাদের জিজ্ঞাসা ছিল, উপাচার্য কেন ওই হত্যাকাণ্ডের পরপর সেখানে উপস্থিত হননি। এখন কেন এসেছেন? প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেল ৫টার দিকে আবরারের মা রোকেয়া খাতুনের সঙ্গে দেখা করার জন্য রওনা দেন উপাচার্য। একই সড়কের পাশে আবরারের কবর ও পৈতৃক ভিটা। কুমারখালী থেকে যেতে প্রথমে কবরস্থান পড়ে। পরে আধা কিলোমিটারের মাথায় ওই বাড়ি। কিন্তু উপাচার্যের যাওয়ার কথা শুনে স্থানীয় শত শত নারী-পুরুষ আবরারদের গ্রামের বাড়ির সামনের সড়কে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপাচার্যকে ঘিরে ধরেন। এ পরিস্থিতিতে আবরারের মায়ের সঙ্গে দেখা না করে উপাচার্য পুলিশ প্রহরায় জেলা প্রশাসকের গাড়িতে রায়ডাঙ্গা গ্রাম ছাড়েন।
স্থানীয়রা জানান, আবরারের বাড়িতে ঢোকার আগে উপাচার্যকে বাধা দেয় স্থানীয় গ্রামবাসী। আবরারের বাড়ি ঢোকার মুখে ভিসির গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন নারীরা। পরে পুলিশ লাঠিচার্জ করলে এক নারী ও আবরারের ছোট ভাই আবরার ফায়াজসহ পাঁচজন আহত হন। গ্রামবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আবরারকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হলেও ভিসি দেখতে যাননি। এমনকি লাশ দেখতেও আসেননি। এখন কিসের সমবেদনা জানাতে এসেছেন ভিসি। লোক দেখানো কবর জিয়ারত লাগবে না আবরারের। আমরা আবরারের হত্যাকারীদের কঠোর বিচার চাই। কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন বলেন, ভিসি কুষ্টিয়া সার্কিট হাউসে অবস্থান করেছেন কিছুক্ষণ। পরে এখান থেকে ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা হন তিনি। গ্রামবাসীর সঙ্গে সংঘর্ষ হলেও ভিসির কোনো ক্ষতি হয়নি। তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ। সৌজন্যে : জাগোনিউজ২৪