যুক্তরাষ্ট্রের ২৮টি বড় শহরে মুসলিম বিরোধী বিক্ষোভ
কাউসার মুমিন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে-
মুসলিম বিরোধী হেইট গ্রুপ ‘এক্ট ফর আমেরিকা’র নেতৃত্বে গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের ২৮টি বড় শহরে মুসলিম বিরোধী বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ব্যাপক ঢাকঢোল পিটিয়ে এই কর্মসূচীর ঘোষণাকালে যদিও আয়োজকরা একে ‘শরীয়া আইনের বিরুদ্ধে’ বিক্ষোভ কর্মসূচী বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন, কিন্তু কার্যত যুক্তরাষ্ট্রে শরীয়া আইনের উপস্থিতি না থাকায় এখানকার বিভিন্ন মুসলিম সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এমনকি মুসলমানদের প্রতিবেশী মার্কিনীরাও একে মূলত মুসলিম বিরোধী বিক্ষোভ বলেই অভিহিত করেছেন। উল্লেখ্য, স্বঘোষিত তৃণমূল সংগঠন ‘এক্ট ফর আমেরিকা’ নিজেরা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করে বলে দাবী করে। তাদের মতে, মুসলিম শরিয়া আইন এবং এর বিভিন্ন বিধিবিধান যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি বড় হুমকি। স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ অবশ্য সংগঠনটির কর্মকান্ডের মূল উদ্দেশ্য মুসলিম বিদ্ধেষ ছড়ানো বলে মনে করেন। সিভিল রাইটস বিষয়ক আইনী সহযোগীতা প্রদানকারী যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত বেসরকারী সংস্থা সাউদার্ন পোভার্টি ল সেন্টার আয়োজক সংগঠনটিকে অনেক আগে থেকেই ‘এন্টি মুসলিম হেইট গ্রূপ’ হিসেবে তালিকাবদ্ধ করেছে। গতকাল পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচী অনুযায়ী ‘এক্ট ফর আমেরিকা’র উদ্যোগে নিউ ইয়র্ক, পেনসিলভানিয়া, শিকাগো, ডেনভার, বোস্টন, সিয়াটলসহ যুক্তরাষ্ট্রের আরও অন্তত ২২টি শহরে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে শতশত ইসলাম বিদ্ধেষী মার্কিনী এই বিক্ষোভ কর্মসূচীতে অংশ নেয়। বিক্ষোভকারীদের একজন পেনসিলভ্যানিয়ার এলেনটাউন এলাকার ক্রিস আচেহ (৪৭) মিডিয়াকে বলেন, সংবিধান হচ্ছে আমাদের সকল আইনের উৎস। আমাদেরকে অবশ্যই সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে আইনের ফাঁকে আমরা কাদেরকে এই দেশে প্রবেশ করতে দিচ্ছি। অপরদিকে, এই বিক্ষোভ কর্মসূচির সমালোচনা করে মুসলিমদের পক্ষে এবং ‘এক্ট ফর আমেরিকা’র বিপক্ষেও বিক্ষোভ করেছেন শত শত মার্কিনী। তাদের মতে, শরীয়া আইনের অস্তিত্বই নেই আমেরিকাতে। তারপরও এ ধরণের কর্মসূচি মূলত মার্কিন মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানোর প্রয়াস। এদেরই একজন ফিলাডেলফিয়ার মলি ফ্রেইবার্গ (৩৩) বলেন, আমেরিকায় শরীয়া আইনের কোন হুমকি নেই। এই ধরণের কর্মসূচি মূলত আমাদের মুসলিম প্রতিবেশীদের অস্বস্তিতে ফেলবে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমদের সর্ববৃহৎ এডভোকেসি গ্রূপ ‘কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশন্স (সিএআইআর)’-এর মুখপাত্র কোরি সেইলোর বিক্ষোভকারীদের ‘ইসলামোফোবিক’ বলে মন্তব্য করেছেন। বিক্ষোভ কর্মসূচির প্রেক্ষিতে এই সংগঠনটি শনিবার সারাদিন ব্যাপী আমেরিকাজুড়ে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে শিক্ষামূলক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে এবং এই কর্মসূচিগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের অমুসলিম প্রতিবেশীদের অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে তাদের মধ্যে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করেছে। ‘এক্ট ফর আমেরিকা’র প্রতিষ্ঠাতা ব্রিজিত গ্যাব্রিয়েল একজন লেবানিজ আমেরিকান। অতীতে তিনি একবার মন্তব্য করেন যে, মুসলিম ব্রাদারহুড নামের মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক সংগঠনটি আমেরিকা দখল করার ষড়যন্ত্র করছে। তিনি আরব মুসলমানদের বর্বর এবং হৃদয়হীন বলেও মন্তব্য করেন।
উল্লেখ্য, সিএআইআর-এর এক গবেষনা প্রতিবেদন মতে, ‘এক্ট ফর আমেরিকা’ যুক্তরাষ্ট্রের ৩৩টি ইসলামবিদ্বেষী গ্রুপের একটি যার বার্ষিক রাজস্ব আয় সর্বশেষ ২০১৩ সালের তথ্য অনুযায়ী ২০৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। সিএআইআর-এর দেওয়া পরিসংখ্যান মোতাবেক, যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমানদের উপর আক্রমণের হার গত বছর শতকরা ৫৭ শতাংশ বেড়েছে যার মধ্যে ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে ঘৃণা বা বিদ্ধেষ মূলক অপরাধের হার বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা ৪৪ শতাংশ। ২০১৩ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত সময়ে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে কমপক্ষে ১০টি মুসলিম বিরোধী আইন পাশ হয়েছে, একই সময়ে মুসলিমদেরকে টার্গেট করে আরও অতিরিক্ত ৮১টি বিল উত্থাপন করা হয়েছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ও সামাজিক অপরাধ বিশ্লেষকরা মুসলিম বিরোধী অপরাধের হার বৃদ্ধির পেছনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বেশকিছু মুসলিম বিরোধী নীতিমালাকে দায়ী করছেন, যদিও তারা বলছেন মার্কিন সমাজে মুসলিম বিদ্ধেষ ট্রাম্প জামানার আগে থেকেই বিদ্যমান রয়েছে।