যুক্তরাষ্ট্রে মসজিদে ‘বৈষম্য’র রুহি’র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
জানা যায়, গত ২৯ এপ্রিল হাডসন ইসলামিক সেন্টারের নির্মাণ কাজ শুরু উপলক্ষে অনুষ্ঠান হয়েছে। কিন্তু রুহির অভিযোগ, বারবার অনুরোধের পরও সেখানে মুসলিম নারীদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। অথচ ওই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত তালিকায় ছিলেন নারীরাও। যদিও মসজিদ কমিটির সভাপতির দাবি, পর্যাপ্ত আসন না থাকায় নারী ও শিশুদেরকে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছিল। ইসলামিক সেন্টারে কোনও ধরনের বৈষম্যের জায়গা নেই বলেও দাবি করেছেন তিনি। হাডসনে স্থানীয় মুসলিম কমিউনিটি এতদিন ভবনের বেজমেন্টে নামাজ আদায় করেছে। অবশেষে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের প্রায় ২০ বছর পর নিজস্ব ইসলামিক সেন্টারের নির্মাণ কাজ শুরু করছেন তারা। মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য তাই এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছিল উল্লেখযোগ্য ব্যাপার। জানা গেছে, ‘ভাই ও বোনেরা’ সম্বোধন করে নারীদের কাছেও আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু পুরুষদেরকে স্পষ্ট বলে দেওয়া হলো, নারীরা ওই জমায়েতে অংশ নিতে পারবে না। এর বিরুদ্ধেই প্রতিবাদ জানিয়েছেন রুহি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ইসলাম সবার জন্য, বিশেষভাবে কারও জন্য কেবল ইসলাম নয়।’ তার এই পোস্ট ইতোমধ্যে মুসলিম কমিউনিটির অনেক নারী ও পুরুষের দৃঢ় সমর্থন পেয়েছে। তিনি আশা করেন, এটি দেশটির অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়বে।সাক্ষাৎকারে রুহি জানান, মসজিদ কমিটির সদস্যরা প্রথম প্রজন্মের বাংলাদেশি, যারা ৩০ বা ৪০ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন। তার অভিযোগ, এই ব্যক্তিরা নিজেদের মতো করে ইসলামের ব্যাখ্যা দেন। মসজিদ কমিটি প্রসঙ্গে রুহির ভাষ্য, ‘যুক্তরাষ্ট্রে ইসলামের আলোকে মসজিদ পরিচালনা করেন না তারা। কমিটিতে যে নারী ও তরুণদেরও যুক্ত করা প্রয়োজন, সেই তাগিদ দেখিনি তাদের মধ্যে। অথচ হাডসনে মুসলিম কমিউনিটিতে অনেক উচ্চ শিক্ষিত ও সফল তরুণ-তরুণী আছেন। তাদের বিশ্বাস, আর্থিকভাবে ও অন্য কমিউনিটির সঙ্গে সংযোগ তৈরির মধ্য দিয়ে ইসলামিক সেন্টারের কল্যাণে ভূমিকা রাখতে পারেন তারা।’
.ওয়ারেন স্ট্রিট অ্যাকাডেমিতে ফ্যামিলি ইন্টারভেনশন স্পেশালিস্ট হিসেবে কাজ করছেন রুহি। এটি বিকল্পধারার এক স্কুল প্রোগ্রাম, যা ঝরে পড়ার ঝুঁকিতে থাকা শিক্ষার্থীদের সহায়তা দিয়ে থাকে। হাডসন মুসলিম ইয়ুথের সহ-প্রতিষ্ঠাতা আর সহ-সভাপতির দায়িত্বও সামলাচ্ছেন ২৪ বছর বয়সী এই তরুণী। রুহির দাবি, ইসলামিক সেন্টারের সভাপতি আব্দুল হান্নানকে কয়েকটি মেসেজ পাঠিয়েছেন তিনি। কিন্তু জবাব মেলেনি। তার কথায়, ‘এটা খুব কষ্টদায়ক বিষয় যে— ওই অনুষ্ঠানে অমুসলিম নারীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, কিন্তু মুসলিম বোনদের জন্য কোনও জায়গা ছিল না।’ এ ঘটনা নিয়ে সোচ্চার হওয়া প্রসঙ্গে রুহি বললেন, ‘আমি নীরব না থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কারণ ছোটবেলা থেকেই এমন বৈষম্য দেখে আসছি। যদি এখনই এসব বিষয় না পাল্টায়, তাহলে তা চিরকাল ধরে চলতে থাকবে।’ এদিকে স্থানীয় একটি সংবাদপত্রকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইসলামিক সেন্টারের সভাপতি আব্দুল হান্নান জানান, সীমিতসংখ্যক আসন থাকায় ওই অনুষ্ঠানে শিশু ও নারীদের অংশগ্রহণ না করতে বলা হয়। তিনি বলেন, ‘আমাদের মসজিদ ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোতে কোনও বৈষম্যের জায়গা নেই। সেখানে নারী-পুরুষ সবাই একসঙ্গে প্রার্থনা করতে পারে।’ তবে ইসলামিক সেন্টারের এক স্বেচ্ছাসেবী বলেছেন ভিন্ন কথা, ‘অনুষ্ঠানে কোনও মুসলিম নারীকে আসতে দেওয়া হয়নি। এর কারণ ইসলামের রীতি অনুযায়ী নারীদেরকে আলাদা জায়গায় প্রার্থনা করতে হয়, কিন্তু ইসলামিক সেন্টার সেই ব্যবস্থা রাখতে পারেনি।’