যেভাবে চাষী থেকে জঙ্গি হয়ে ওঠেন কামাল
দেড়বছর আগে নিজ এলাকা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারী এলাকার উত্তর বাইশারী থেকে জুবাইরাকে বিয়ে করেন কামাল হোসেন। তার বাবা মোজাফফর আহমেদ। কৃষক পরিবার।পানের বরজ ও হালচাষ করে আয় রোজগার ভালোই ছিল কামাল হোসেনের । সেই নিরীহ কৃষক থেকে কামাল যে জঙ্গি হয়ে উঠবে তা কে ভাবতে পেরেছিল! কামালের বাবা মোজাফফর আহমেদই জানালেন কিভাবে স্বচ্ছল চাষী থেকে জঙ্গি হয়ে ওঠেন কামাল। তিনি বলেন, বিয়ের পর স্ত্রী জুবাইরা যখন গর্ভবতী হন, তখন তাকে চিকিৎসার জন্য রামুতে তার বড় বোন কোহিনুর আক্তারের বাসায় যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয় কামাল। তারপর থেকে আর খোঁজ ছিলো না ছেলে আর ছেলের বউয়ের। তারপর শুনি, তারা শহরে জুবাইরার ভাই জহিরের বাড়িতে এসে উঠেছে। চাকরি করে ভালো টাকা রোজগার করছে। কিন্তু ছেলে ও ছেলের বউ যে জঙ্গি হয়ে গেছে তা আমরা জানতাম না। আজ সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে সীতাকুন্ডের প্রেমতল বাজার চৌধুরীপাড়ায় ছায়ানীড়ের নিহত জঙ্গী কামাল হোসেনের বাবা মোজাফফর আহমদ এসব কথা বলছিলেন।
তিনি বলেন, তার ৬ ছেলে ও ২ মেয়ে। ছোট ছেলেটা মারা গেছে। কামাল পানের বরজ ও হালচাষ করতো। দেড় বছর আগে বিয়ে দেওয়ার পর থেকেই কেমন জানি হয়ে যায়। জুবাইরার ভাই জহিরের সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। মাঝে মাঝেই বাড়িতে বলতো, চট্টগ্রাম শহরে টাকার পাহাড়। এসব কৃষিকাজ করে লাভ কি? শহরে গিয়ে চাকরি করে সে অনেক টাকার মালিক হবে।মোজাফফর বলেন, এরপর কামাল তার স্ত্রী জুবাইরাকে নিয়ে বের যে হলো আর বাড়িতে যায়নি। বাড়ি থেকে আসার সময় লাখ দেড়েক টাকা সাথে করে এনেছিলো। এরপর তিনি ছেলের খোঁজ না পেয়ে জুবাইরার ভাই জহিরকে ফোন করলে সে জানায়, কামাল ও জুবাইরা তার কাছে থাকে। বাড়ি ভাড়া করে রেখেছে তাদের। চাকরি করে ভালো টাকা-পয়সা রোজগার করে।
বেলা দেড়টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতারে মর্গে উপস্থিত তার সাথে থাকা জুবাইরার বাবা নূরুল আলম জানান, জুবাইরারা ৪ বোন, ৮ ভাই। জুবাইরা ৩ নম্বর। তার ছেলে জহিরের অনেকদিন ধরে তাদের সাথে যোগাযোগ ছিলো না। বিয়ের পরপরই ছেলে তাদের থেকে আলাদা হয়ে যায় বলে জানান তিনি। পরে সীতাকুন্ডে পুলিশের হাতে তার ছেলে জহির ও তার স্ত্রী আরজিনা ধরা পড়লের সে খবর স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ি থেকে তাদের দেয়া হয়। তারপর তারা জঙ্গিবাদে জড়ানোর বিষয়টি জানেন। জুবাইরার ভাই জিয়াউল ইসলাম জানান, তারা জানতো জুবাইরা, কামাল, জহির, আরজিনা শহরে চাকরি করছে। ভালো আছে। কিন্তু তারা যে জঙ্গির মতো ঘৃণ্যতম কাজে জড়াবে , এটা তাদের কল্পনারও অতীত ছিলো। তারা তাদের লাশ নিতে চান না।
চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে প্রেমতল চৌধুরীপাড়ায় ছায়ানীড়ে আত্মঘাতি বিস্ফোরণ ও গুলিতে নিহত ৫ জনের মধ্যে দুইজনের পরিচয় নিশ্চিত করতে পেরেছে পরিবার ও পুলিশ। পরিচয় নিশ্চিত হওয়া দুজন হলেন, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারী এলাকার বাসিন্দা কামাল হোসেন ও তার স্ত্রী জুবাইরা ইয়াসমিন। অভিযান শেষে বাড়ির ছাদ থেকে তাদের শিশুসন্তানের লাশও উদ্ধার করে পুলিশ। কামাল হোসেনের বাবা মোজাফফ আহমদ ও জুবাইরার বাবা নূরুল আলম ও জুবাইরার ভাই জিয়াউল ইসলাম শনিবার রাত এগারটায় চট্টগ্রাম সীতাকুন্ড থানায় আসেন। অন্যদিকে সাধন কুটিরে গত বুধবার বিকেলে অভিযান চালিয়ে অক্ষত অবস্থায় করা হয় আরেক জঙ্গি দম্পতি জসিম ও আরজিনাকে। পুলিশ নিশ্চিত হয়েছিলো, জসিমের বোনই জুবাইরা ইয়াসমিন। আর জসিম ও আরজিনা দুটোই ছদ্মনাম। জসিমের প্রকৃত নাম জহিরুল ইসলাম। তার স্ত্রীর প্রকৃত নাম রাজিয়া সুলতানা। তাদের বাড়ি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের জঙ্গলঘেরা যৌথখামারপাড়া এলাকায়। বিস্ফোরণে অন্য নিহত দুই জঙ্গির পরিচয় বের করা যায়নি।