যে কারনে হঠাৎ গণভবনে আল্লামা শফী!
বেফাকের সভাপতি শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী গণভবনে উপস্থিত হয়েছেন। কওমি মাদ্রাসা সনদের সরকারি স্বীকৃতির আনুষ্ঠানিক ঘোষণার জন্যই আল্লামা শফীর নেতৃত্বে গণভবনে আসেন ৩০০ জন আলেম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে সন্ধ্যায় বৈঠক বসেন তারা। বাংলাদেশে চল্লিশ হাজার কওমি মাদরাসার শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি ঘোষণার লক্ষ্যে গণভবনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দেশের শীর্ষ আলেমদের বৈঠক। বৈঠকে বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কওমি শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি ঘোষণা করবেন।
আল্লামা শফীর সঙ্গে রয়েছেন বেফাকের সহ-সভাপতি আল্লামা আশরাফ আলী, আল্লামা আনোয়ার শাহ, আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী, মাওলানা মোস্তফা আজাদ, মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস, বেফাক মহাসচিব মাওলানা আবদুল কুদ্দুস, বেফাকের মহাপরিচালক মাওলানা জোবায়ের আহমদ চৌধুরী, মাওলানা সাজিদুর রহমান, মাওলানা মুসলেহ উদ্দীন রাজু, মাওলানা আবদুল হামিদ পীর সাহেব মধুপুর। এদিকে ঢাকার মুহাম্মদপুর থেকে যোগ দিয়েছেন বেফাকের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক। তিনি জানান, সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কওমি মাদরাসার স্বীকৃতি বিষয়ে চূড়ান্ত বৈঠকের কথা রয়েছে। আশা করছি, নির্ধারিত সময়ে সম্মেলন শুরু হবে।
সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যেই গণভবনে পৌঁছে গেছেন গহরডাঙ্গা মাদরাসার মহাপরিচালক মুফতি রুহুল আমীন, বসুন্ধরা ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের মহাপরিচালক মুফতি আরশাদ রাহমানি, পটিয়া মাদরাসার প্রিন্সিপ্যাল আল্লামা আবদুল হালীম বোখারী, সিলেটের মুফতি আবদুল হক, মুফতি আবদুল বাসেত বরকতপুরী প্রমুখ নেতৃত্ববৃন্দ। জামিয়া ইক্বরা থেকেও একটি প্রতিনিধি দল গণভবনে পৌঁছেছেন।
আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ ও রয়েছেন এই বহরে। আশা করা হচ্ছে, কওমি মাদরাসার শিক্ষা সনদের স্বীকৃতির ব্যাপারে কওমি ছাত্র শিক্ষকের দীর্ঘ কয়েক যুগের প্রতীক্ষার অবসান হবে। অর্জিত হবে কাঙ্ক্ষিত স্বীকৃতি। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ সম্মেলন শুরু হয়ে চলবে কয়েক ঘণ্টা। আলেম উলামাদের রাতে আপ্যায়নের কথা রয়েছে গণভবনে। গণভবনের বৈঠকে বেফাকের পক্ষ থেকে ১৫০ জন এবং অন্যান্য ৫ বোর্ড থেকে ১৫০ জন আলেম অংশ নেবেন। সবার উপস্থিতিতে কওমি স্বীকৃতির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কওমি স্বীকৃতি নিয়ে অনেক চড়াই উৎরাই গেলেও শেষ মুহূর্তে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন সবাই। প্রধানমন্ত্রী গত বছর এক অনুষ্ঠানে আলেমদের উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন আপনারা এক হয়ে আসুন, স্বীকৃতি হবে। সেখান থেকেই তৃণমূলের চাহিদার প্রেক্ষিতে সবমতের আলেমদের মধ্যে সম্মিলন ঘটে।
গত ১০ ডিসেম্বর হাটহাজারীতে আলেমদের সম্মিলিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আল্লামা শাহ আহমদ শফীর সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ উপস্থিত হন। এর কিছুদিন আগে গহরডাঙ্গার মুহতামিম মুফতি রুহুল আমিন একান্তে সাক্ষাৎ করেন আল্লামা আহমদ শফীর সঙ্গে। সর্ব শেষ যাত্রাবাড়ী মাদরাসার মুহাতামিম দাওয়াতুল হকের আমির আল্লামা মাহমুদুল হাসানও এই স্রোতে মিলিত হন। বেফাকে অন্তর্ভূক্ত হয় তার পরিচালতি জামিয়া মাদানিয়া ইসলামিয়া।
গত ২৮ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশের ৬টি কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে কওমি সনদের স্বীকৃতির বিষয়ে সবাই ঐকমত্যে পৌছেন। কওমি স্বীকৃতির পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা এখনো জানা যায়নি। তবে বেশ কয়েকটি শর্ত সামনে রেখেই এই স্বীকৃতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন একাধিক সূত্র। সারাদেশের কওমি অঙ্গনের বেকাফ সহ ৬টি বোর্ডের সমন্বয়ে গঠিত ‘কওমী সনদ বাস্তবায়ন সমন্বয় পরিষদ’ এর চেয়ারম্যান দেশের কওমি আলেম ওলামার অভিবাবক শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফির নেতৃত্বে এবং হযরতের দেয়া শর্ত সমূহ শতভাগ মেনে সরকার সনদের মান দিতে সম্মত হয়েছে বলে জানা গেছে।
• শর্তগুলো হচ্ছে
১. কওমি মাদরাসার নেসাবে তালিম সমুন্নত রাখতে হবে।
২. কওমি মাদরাসার মূলভিত্তি দেওবন্দের উসুলে হাস্তাগানার (আট মূলনীতি) আলোকে মান দিতে হবে, স্বীকৃতি নয়।
৩. সরকারি কোন ধরণের হস্তক্ষেপ চলবে না।
৪. কওমি মাদরাসার পরিক্ষা সমূহ ও নিয়ম নীতিমালা কওমি আলেমগণ ঠিক করবেন। সরকারের কোন কর্তাব্যক্তির বা প্রতিষ্ঠানের অধীনে পরিক্ষা নিয়ন্ত্রণ চলবে না।
৫. কওমি সনদ সমন্বয় পরিষদ বা কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বা কো-চেয়ারম্যানের পদে সবসময় কওমি আলেম মনোনীত ব্যক্তিই থাকবেন। সরকারি কর্মচারী বা কর্মকর্তা চেয়ারম্যান বা কো-চেয়ারম্যান পদে থাকতে পারবে না।
৬. সরকারের কোন রকম সাহায্য সহযোগিতা কওমী মাদ্রাসা গ্রহণ করবে না। সাহায্যের নামে কওমী মাদ্রাসার উপর হস্তক্ষেপ ও নজরধারী করা যাবে না।
৭. কওমি মাদরাসা নেসাবে তালিম ও পরিচালনার ক্ষেত্রে সার্বিক স্বাধীনতা কওমি আলেমদের হাতে থাকবে, শুধুমাত্র দাওরা হাদিসের সনদকে সমন্বয় কমিটির সত্যায়নে সরকার সনদের মান দিবে।