রংপুর-৩ আসনে জাপার প্রার্থী হচ্ছেন শাদ এরশাদ
বার্তা ডেস্ক :: জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া রংপুর-৩ (সদর) আসনটি শূন্য ঘোষণা করেছে সংসদ সচিবালয়। শূন্য আসনে তিন মাসের মধ্যে উপনির্বাচন দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। পার্টির চেয়ারম্যানের মৃত্যতে নেতাকর্মীদের মাঝে শোক বিরাজ করলেও এরশাদের উত্তরাধিকার হিসেবে জাপার প্রার্থী কে হবেন তা নিয়ে আলোচনা চলছে। এরই মধ্যে বাবার মৃত্যুতে শূন্য আসনে প্রার্থী হতে আগ্রহী হয়ে ওঠেছেন এরশাদের ছেলে রাহগীর আলমাদি শাদ এরশাদ। জাতীয় পার্টির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, মালয়েশিয়ায় দীর্ঘ প্রবাস জীবন কাটানো শাদ এরশাদ দেশেই থাকতে চাচ্ছেন। রাজনীতির প্রতিও তিনি আগ্রহী হয়ে ওঠেছেন, বাবা এরশাদকেও আগ্রহের কথা জানিয়েছিলেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে কুড়িগ্রাম-২ আসন থেকে তাকে প্রার্থী করার কথা উঠলেও মহাজোট সংক্রান্ত জটিলতা ও এরশাদের অসুস্থতার তা আর হয়ে ওঠেনি। বাবার মৃত্যুতে শূন্য আসন রংপুর-৩ থেকে নির্বাচিত হয়ে সংসদে জাতীয় পার্টির প্রতিনিধিত্ব করতে চান শাদ।
নিবাচন কমিশন (ইসি) জানিয়েছে, আসন শূন্য হওয়ার দিন থেকেই নব্বই দিন গণনা করা হয়। এ ক্ষেত্রে আগামী ১১ অক্টোবরের মধ্যে ওই আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। শিগগিরই রংপুর-৩ আসনে উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। রংপুর-৩ কে বরাবরই বলা হয় জাতীয় পার্টির ঘাটি । ১৯৮৬ সাল থেকেএ আসনটি জাতীয় পার্টি দখলে রেখেছে। ক্ষমতার ছাড়ার পর ১৯৯১ সাল থেকে রংপুর সদরের মানুষ এরশাদকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করে আসছেন। এ আসনে তারা এরশাদের পরিবারের কাউকে এমপি হিসেবে দেখতে চান। দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকায় স্থানীয়দের সঙ্গে শাদ এরশাদের চেনাজানা তেমন নেই। এ বিষয়টি সামনে এনে স্থানীয় জাতীয় পার্টির একাধিক প্রভাবশালী নেতা এ আসনে এরশাদের ভাই হুসেইন মুহাম্মদ মোর্শেদের মনোনয়নের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। সম্ভাব্য এই দুই মনোনয়ন প্রত্যাশী ছাড়াও এরশাদের ভাতিজা সাবেক সাংসদ হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফের নামও আলোচনায় রয়েছে। এরশাদের এই ভাতিজা রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া) আসন থেকে এর আগে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। গত বছর রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন শাহরিয়ার আসিফ। সে সময় জাতীয় পার্টি থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়।
এরশাদ পরিবারের বাইরে কাউকে মনোনয়ন দেয়া হলে সে তালিকায় থাকতে পারেন জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এস এম ফখর-উজ-জামান জাহাঙ্গীর ও মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসির। অবশ্য ফখর-উজ-জামান জাহাঙ্গীর গত নির্বাচনে রংপুর-৫ (মিঠাপুকুর) আসন থেকে লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এইচ এন আশিকুর রহমানের কাছে বড় ব্যবধানে পরাজিত হন। তবে দলের চেয়ারম্যানের মৃত্যুর শোক কাটিয়ে ওঠার আগে এ নিয়ে এখনই আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলতে নারাজ ওই আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। ১৯৯১ সাল থেকে রংপুর সদরের মানুষ এরশাদকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করে আসছেন। টানা নয় বছর দেশ পরিচালনা করে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর ক্ষমতা ছাড়ার পর গ্রেপ্তার হন সাবেক এ রাষ্ট্রপতি। ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি কারাগার থেকে নির্বাচন করে রংপুরের ৫টি আসন থেকে নির্বাচিত হন। রংপুর-২, রংপুর-৩, রংপুর-৫, রংপুর-৬ ও কুড়িগ্রাম-৩ আসনের সবগুলোতে জয়ী হওয়ার পর এরশাদ রংপুর-৩ আসন রেখে বাকিগুলো ছেড়ে দেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসা পর্যন্ত কারারুদ্ধ থাকেন এরশাদ। ১৯৯৬ সালের সাধারণ নির্বাচনেও এরশাদ ৫টি আসনে বিজয়ী হন। ওই সময় জাতীয় পার্টির সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। ১৯৯৭ সালের ৯ জানুয়ারি তিনি জামিনে মুক্ত হন। তবে আদালতের রায়ে দণ্ডিত হওয়ার কারণে সংসদে তার আসন বাতিল হয়ে যায়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩৪টি আসন পেয়ে এরশাদের জাতীয় পার্টি হয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল। এরশাদ হন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত।
সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২২টি আসন পায় এরশাদের জাতীয় পার্টি। পরে সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা হন সাবেক এ রাষ্ট্রপতি। এসব কারণে দলের চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে এখানে আওয়ামী লীগ কিংবা অন্য কোনো দল সুবিধা করতে পারবে না বলে মত স্থানীয় জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের। সৌজন্যে : পূর্বপশ্চিম