রক্তে গ্রেনেডে নিভে যায় সকল আনন্দ!000
পীর হাবীব(ফেসবুক স্টেটাস থেকে)
সৈয়দ মুজতবা আলীর’ দেশে বিদেশে’ ও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘ছবির দেশে কবিতার দেশে ‘ ভ্রমনকাহিনী যে আনন্দ দিয়েছে তা আর কোন বই দিতে পারেনি ভ্রমনের উপর। ভ্রমন সাহিত্যে মুজতবা আলীর দেশেবিদেশেই শ্রেষ্ট। ছবিরদেশে কবিতার দেশে পাঠ করতে গিয়ে মার্গারিটের প্রেমে পরেছি।ছেলেবেলায় যেমন দস্যুবনহুর পাঠ করে নূরীর প্রেমে পরেছি!যেমন করে জেমস বন্ড হতে চেয়েছি বা মাসুদ রানায় ডুব দিয়ে সোহানার প্রেমে পরলেও বাধনে জড়াইনি! তেমনি ডাঃসৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের লেখা স্মৃতির পালে লাগলো হাওয়া পড়তে গিয়ে মুনিয়া পাখিকে অন্তর দিয়েই ডেকেছি।লেখক হারিয়ে ফেললেও খুঁজে ফেরার একটি তাগিদ অনুভব করেছি,মায়া লেগেছে।কল্পনায় ভেবেছি তার রুপ।
শনিবার ভোরের ফ্লাইটে রওনা হই বিমানে সিলেট। ফ্লাইটে বিপ্লব ও সেন্টু এবাং তাদের বউবাচ্ছার সাথে দেখা। ঝড় আর মেঘ মিলে বৈরি আবহাওয়া। ঝাকুনি খেতে খেতে সিলেট যখন নামলাম তখন ভোরের আলো। বৃষ্টি ঝরছে। সিলেট ক্লাবে গিয়ে শয্যায় শুয়ে আকাশের মেঘ,বিদ্যূৎচমক সেই সাথে মুষলধারে নামা বৃষ্টি উপভোগ করে মনটা বুনোর জন্য উতলা হয়ে উঠলো। সারারাত ঘুমহীন। লম্বা ঘুম দিয়ে উঠে বদুরাপার পাঠানো জিপে চড়ে তার বাসায়। সাথে মনোয়ার,বকুল,বিশ্বজিৎ,রিংকু ও রেজওয়ান।সুন্দর ছিমছাম গোছানো ফ্লাট,বারান্দায় দাড়ালেই পিছনে পুকুর।খুব সূখ উপচে পরা ঘর। মায়া মায়া। আপন আপন। দেখা হলো প্রফেসর আব্দুর রশীদ,প্রকাশক রাজিব, বউমা,ছোটবোন লাকী ও তার কন্যার সাথে।টিপুতো প্রান হয়ে ছিলোই।
ডাঃ জেসমিনপা্’র (বদুরা)এলাহি রান্নার আয়োজন। সেই সাথে আপ্যায়নের মমতায় অনেক খাওয়া হলো। খেতে খেতে মনোয়ারকে চিতল মাছটি কোন বিলের জানতে চাইলে টিপু তার উত্তর কেড়ে নিয়ে বললো,হা এটি গাছেই ধরেছে। রশীদ স্যার একজন সফল সূখী শিক্ষক। প্রানবন্ত দিলখোলা মানুষ। আমার পিঠেপিটি বড় বোন পুষ্পর ছোটবেলার বান্ধবি বদুরাপা। আমাদের ছেলেবেলায় ভালো ছাত্রছাত্রীর আইডল রশীদ স্যারের দুইমেয়ে পারভীন আপা ও বদুরাপা অন্যতম। একমাত্র ছেলে টিপু মিসবাহর শৈশবের বন্ধু। তাদের বাসার বিপরীত বাসাই ছিলো আমার চাচা ও বড় খালার বাসা।তাই পারিবারিক সম্পর্ক দীর্ঘদিনের।
খাবার টেবিল টিপুই একা জমিয়ে রাখলো। বদুরাপার বর সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনকে মনে হলো বাড়ির পেইনগেষ্ট বা লজিং পারসন।সূখী মেহমানের মতোন।জিজ্ঞেস করলে তিনিও সম্মতি দেন।তারা দুজন সফল সূখী জুটি ও মেধাবি দু সন্তানের জনক।স্যারকে প্রশ্ন করলাম,দুই জামাইর কাকে বেশি আদর করেন,হেসে বললেন,ভেজাল লাগাইওনা। তবে জানি,স্যার বেশি ভালোবাসেন বদুরাপাকে।আর স্যারকে বেশি বাসেন পারভীন আপা।টিপুকে তারাতো বটেই,শহরেরও সবাই। স্যারকে দেখেছি,সন্তানযে বন্ধু হয়,আর পরিবারের বন্ধন যে শক্ত ও আড্ডায় সূখী হয় সেই শিক্ষাই দিয়েছেন।
টিপুর বউয়ের প্রশংসা সবার মুখে। তবু টিপু কেন বউকে এত ভয় পায়!আরে ভদ্রলোকের পোলা বউরে ডরাইবোনা? সাখাওয়াত ভাইয়ের স্মৃতির পালে লাগলো হাওয়া সূখপাঠ্য আত্বজৈবনিক একখানি বই। সন্ধায় মুসলিম সাহিত্য সংসদে বই নিয়ে আড্ডা হলো প্রানবন্ত।
বইটিকে ভ্রমনকাহিনী বলা হলেও, এটি আসলেও স্মৃতিকাতর এক লেখকের সহজ প্রানবন্ত গদ্য যেখানে তার ছেলেবেলা, শিক্ষাজীবন, পরিবার, ভ্রমন, সমাজের অনেক অসংগতি, দেশপ্রেম, সব মিলিয়ে ফেলে আসা জীবনের চিত্র!একে কখনো মনে হয় স্মৃতি গদ্য,কখনো ভ্রমন কাহিনী।সহজ কথা সহজ সাবলীল ভাষায় বলেছেন।পর্যবেক্ষন শক্তি প্রখর।তাড়াহুড়ো না করলে লেখক, আরো নিখুত হতো তার রচনা। আমরা লিখে খাই,তিনি খেয়েদেয়ে এসে লিখেন।বলেছেন,এ পেশা নয়,নেশা।নেশা থেকে লেখালেখি অব্যাহত রাখলে,নিজের জায়গা করে নিতে পারবেন।তার বই,যিনি পড়বেন,তিনিই নষ্টালজিক হবেন।তার হাত মিষ্টি।চমৎকার গদ্যশৈলী।সাখাওয়াত ভাইকে বদুরাপা অনেক সম্মান করেন,ভালোবাসেন।
ডাক্তার হয়ে সরকারি চাকরি না হওয়ায় লেখকের আফসোস। বললাম,বেঁচে গেছেন,স্বাস্হ্যবিভাগের উচ্ছপদস্হ কর্মকর্তা বদুরাপা রাগ উঠলেই বদলি করে দিতেন। সকালের বৃষ্টি, দিননভর আড্ডা,সন্ধায় উপভোগ্য বইনিয়ে আলোচনা জমে উঠলেও গনহত্যার রাত নামতেই জঙ্গিদের গ্রেনেড হামলা কেড়ে নেয় ৬ পুলিশ কর্মকর্তাসহ ছাত্রলীগ কর্মির প্রান।
সুফি সাধকের নগরী হয়ে ওঠে আতংকের জনপদ।
মন বিষাদগ্রস্হ হয় সবার।রক্তে গ্রেনেডে নিভে যায় সব আনন্দ,বেদনা ও দ্রোহ গ্রাস করে। তবু বলবো,সাখাওয়াত ভাই,চিয়ার্স, থামবেননা। লিখতে থাকুন।আপনিও হৃদয় দিয়ে লেখেন।হৃদয় ক্ষয়েই লেখক হতে হয়,যেমন হয়েছিলেন প্রেমিক। আমাকে সবাই যে আস্হা ও ভালোবাসা দিয়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।আস্হা ্ও বিশ্বাস রাখবেন।