অবৈধ ব্যবসায়ী ও ‘অস্তিত্ব’ সিনেমার প্রযোজক আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ ওরফে সালেহ চৌধুরী বা কার্লোস বর্তমানে হত্যা চেষ্টা মামলায় জেল হাজতে আছেন। তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ, হত্যা চেষ্টা, ইয়াবা ব্যবসা করাসহ একাধিক অভিযোগ আছে। অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, সিঙ্গাপুর এবং থাইল্যান্ডে তিনি কার্লোস নামে পরিচিত। এসব দেশের মাদক মাফিয়াদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। বিদেশে সবাই তাকে চেনে ‘ঢাকার ইয়াবা ডন’ হিসেবে। মাদক ব্যবসার অভিযোগে অস্ট্রেলিয়া ও সিঙ্গাপুর সরকার যার বিরুদ্ধে হুলিয়া জরি করে ২০১৪ সালে।

বর্তমানে তার ইয়াবা নেটওয়ার্ক সক্রিয় রয়েছে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক ঘিরে। এত নেতিবাচক বিশেষণে যিনি পরিচিত তার পুরো নাম আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ ওরফে সালেহ চৌধুরী ওরফে কার্লোস। অবশ্য প্রকৃত পরিচয় গোপন করে ঢাকার পরিচিত মহলে তিনি নিজেকে সামুদ্রিক পণ্য ও কোমল পানীয়র ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দেন।

তাকে ঘিরে শোবিজের অনেক মডেল ও অভিনেত্রীদের নাম ছড়িয়ে পড়ছে। বলা হচ্ছে সেইসব উঠতি তারকাদের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক ছিলো কার্লোসের। তাদের অনেককেই তিনি রক্ষিতার মতো ব্যবহার করেছেন।

সেই তালিকায় নাম এসেছে অভিনেত্রী সাবিনা রিমার। বেশ কিছু গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে অভিনেত্রী রিমা কার্লোসের রক্ষিতা। যে রাতে কার্লোস তার পরীবাগের বাসায় গৃহকর্মীকে হত্যা ও ধর্ষণের চেষ্টা চালিয়েছিল বলে অভিযোগ করা হচ্ছে, ওই রাতে সাবিনা রিমাকেও নির্যাতন করে আহত করেন কার্লোস। আহত অবস্থায় হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান তিনি।

রিমা বলেন, ‘অনেকগুলো পত্রিকায় খবর প্রকাশ হয়েছে যে আমি নাকি কার্লোসের রক্ষিতা। আমি শুনে অবাক হয়েছি। আমি কার্লোসের একমাত্র বিবাহিত স্ত্রী। ওর অন্য কোনো স্ত্রী নেই। থাকলে আমি জানতাম। আর বলা হচ্ছে যে আমি সেদিন আহত হয়ে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে এসেছি। আমি যদি আহত হতাম তাহলে এখন শুটিং করছি কীভাবে? আসলে ঐদিন অন্য একটি মেয়ে ছিল বাসায়। আর সে মেয়েটির ছবি প্রকাশ করেছে একটি পত্রিকা। হ্যাঁ, কার্লোস ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল এটা সত্য। আর এ কারণেই আমাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। আমি ওর থেকে আলাদা থাকা শুরু করি।’ 

রিমা দাবি করেন, ‘যে রাতে কার্লোস তার পরীবাগের বাসায় গৃহকর্মীকে হত্যা ও ধর্ষণের চেষ্টা চালিয়েছিলো সেই রাতে সাবিনা রিমা পরীবাগের বাসায় ছিলেন না। ওইদিন তিনি দীপ্তটিভিতে ‘অপরাজিতা’ ধারাবাহিক নাটকের সেটে ছিলেন।’

নিজেকে কার্লোসের একমাত্র বিবাহিত স্ত্রী বলে দাবি করছেন অভিনেত্রী সাবিনা রিমা। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, ‘বিভিন্ন গণমাধ্যমে কার্লোসের যে একাধিক স্ত্রী আছে বলে খবর প্রকাশ করা হয়েছে তা মিথ্যা। আমি ছাড়া ওর আর কোনো স্ত্রী নেই। তবে অনেকের সঙ্গেই তার অবৈধ সম্পর্ক ছিলো। এইসব নিয়ে বহুবার আমাদের ঝগড়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘২০১৫ সালে পারিবারিকভাবে কার্লোসকে বিয়ে করি আমি। তখন আমি বা আমার পরিবারের কেউ তার সম্পর্কে জানতাম না। ধীরে ধীরে ওর মুখোশ বেরিয়ে আসতে থাকে আর আমি হতাশ হতে থাকি। আমি জানতে পারি ইয়াবা ব্যবসাসহ নানা রকম কুকর্মের সঙ্গে সে জড়িত। সুন্দরী মডেল ও অভিনেত্রীদের সঙ্গে বিছানা যাওয়া ওর নেশা। এইসব নিয়ে ঝামেলা হলে এই বছরের জানুয়ারি মাস থেকে আমি ওকে ছেড়ে আলাদা ছিলাম। লোক লজ্জা আর পরিবার কষ্ট পাবে এই ভেবে সবকিছু গোপন রেখেছিলাম। আমি বললে আমার কথা কেউ বিশ্বাস করতো না। তাই অপেক্ষায় ছিলাম সত্যটা একদিন প্রকাশ হবেই।’

এদিকে গতকাল রাতে রিমা তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেই স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হল এখানে-
‘আমি এতদিন চুপ ছিলাম তার একটাই কারণ। আমি দেখতে চেয়ে ছিলাম মিথ্যা কতদিন চলতে থাকে আর সত্য কবে সবার সামনে আসবে। সত্য সামনে এসেছে। আমাকে নিয়ে পত্রিকায় লেখালিখি হয়েছিল। কার্লোস সালেহ এর বাসায় যে ঘটনা ঘটেছে আমি নাকি কার্লোস সালেহ এর সাথে ওইদিন রাতে ওই ফ্ল্যাটে ছিলাম এবং আমাকে নির্যাতন করা হয়। পরে পুলিশ আমাকে হাসপাতালে আহত অবস্থায় ভর্তি করে এবং পরে মান-সম্মানের ভয়ে আমি হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাই। এসব দেখার পর আমি শাহবাগ থানায় যোগাযোগ করি এবং এসব মিথ্যা সংবাদগুলোর ব্যাপারে জানাই।

তারা আমাকে মিথ্যা সংবাদের ব্যাপারে তদন্ত করবে বলে জানিয়েছে। আমি হয়তো অনেক বড় কিছু হয়ে যাইনি মিডিয়াতে কিন্তু সমাজে আমার একটা অবস্থান তৈরি হয়েছে বা হচ্ছে। আমার নিজস্ব কিছু ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষী আছে। সবচেয়েও বড় কথা, আমার পরিবার আছে। আপনারা যারা আমাকে নিয়ে অনেক কথা বলেছেন, তারা দয়া করে সংবাদগুলো যাচাই করবেন।’

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn