বার্তা ডেক্সঃঃঅবশেষে রাজনীতিতে পা রাখলেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের একমাত্র ছেলে ইনতিমাম ওসমান অয়ন। নারায়ণগঞ্জের প্রবাদ প্রতিম রাজনৈতিক পরিবারের চতুর্থ প্রজন্মের সন্তান হিসেবে প্রথমবারের মতো ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য পদ পেয়েছেন তিনি। কমিটিতে শামীম ওসমান ও তার স্ত্রী সালমা ওসমান লিপিও কার্যনির্বাহী সদস্য পদ পেয়েছেন। এর আগে রোববার (১০ জানুয়ারি) নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ বাদল ৭১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন করেন। ২০১৯ সালের ৭ ডিসেম্বর খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম সংলগ্ন নম পার্কে ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে এম সাইফউল্লাহ বাদল সভাপতি ও শওকত আলী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সম্মেলনের ১৩ মাস পর পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। কমিটিতে সবচেয়ে বড় চমক হচ্ছেন শামীমপুত্র অয়ন ওসমান। রোববার ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের কমিটি অনুমোদনের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিনন্দন আর শুভেচ্ছার বন্যা বয়ে যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অভিনন্দিত হয়েছেন অয়ন ওসমান। এ বিষয়ে তিনি তার ফেসবুক পেইজে একটি অনলাইনের সংবাদ পোস্ট দিলে তা ৭ সহস্রাধিক শেয়ার হয়।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এত দিন আওয়ামী লীগে কোনো পদে না থেকেও বিভিন্ন সংকটে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে আলোচিত হয়েছেন শামীম ওসমানের স্ত্রী সালাম ওসমান লিপি এবং ছেলে অয়ন ওসমান। ওসমান লিপি জেলা মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। একইভাবে রাজনৈতিক দলের কোনো পদে না থাকলেও নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে কাজ করেন অয়ন ওসমান। নারায়ণগঞ্জ ছাত্রলীগের পরিচ্ছন্ন ইমেজ প্রতিষ্ঠায় অয়ন ওসমানের অবদান রয়েছে বলে জানান জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের নেতারা। মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইসরাত জাহান খান স্মৃতি বলেন, শামীম ওসমানের স্ত্রী এবং জেলা মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান সালমা ওসমান লিপি রাজনৈতিক পদে না থেকেও মানুষের কল্যাণে দীর্ঘদিন কাজ করে আসছেন। আওয়ামী লীগের সদস্য পদ এই ভূমিকাকে আরো অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।
এ ব্যাপারে মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ বলেন, নারায়ণগঞ্জ ছাত্রলীগে কোনো চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ নেই। পরিচ্ছন্ন ইমেজের কারণে নারায়ণগঞ্জে ছাত্রলীগ মডেল সংগঠনে পরিণত হয়েছে। যার অবদান পুরোটাই অয়ন ওসমানের। এত দিন তিনি দলীয় কোনো পদে না থাকলেও ছাত্রলীগের পৃষ্টপোষকতা করে এসেছেন। এখন মূলদল আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য পদ পাওয়ায় গোটা নারায়ণগঞ্জবাসী আনন্দিত। জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাফেল প্রধাণ বলেন, নারায়ণগঞ্জের ছাত্র ও যুব সমাজের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ হলো ডাইনামিক নেতৃত্বের অধিকারী অয়ন ওসমান আওয়ামী লীগের সদস্য পদ পাওয়ায়। আমরা তাকে অভিনন্দন জানাই।
প্রসঙ্গত, নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে ওসমান পরিবারের বর্ণাঢ্য ইতিহাস রয়েছে। ৫২ এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ঊনসত্তরের গণভ্যূত্থান এবং ৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধে এই পরিবারটির অবদান ছিল অবিস্মরণীয়। ওসমান পরিবারের প্রাণপুরুষ খান সাহেব ওসমান আলী ১৯৪৬ সালে সাধারণ নির্বাচনে (নারায়ণগঞ্জ দক্ষিণ নির্বাচনী এলাকা) ঢাকার নবাব খাজা হাবিবুল্লাহকে পরাজিত করে বঙ্গীয় প্রাদেশিক আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ছিলেন এম ওসমান আলী। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তার বিশেষ ভূমিকা ছিল। এ জন্য তিনি কারারুদ্ধ হন। ১৯৬২ সালের শাসনতান্ত্রিক আন্দোলন, ছয়দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যূত্থানে ওসমান আলী সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন।
খান সাহেব ওসমান আলীর ছেলে একেএম শামসুজ্জোহা ছিলেন ভাষা আন্দোলনের অগ্রণী সৈনিক। তিনি ১৯৭০ এর নির্বাচনে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজিবনগর সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য ভ্রমণ করে জনমত গঠন ও তহবিল সংগ্রহে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর মুজিবনগর সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে প্রথম বেতার ভাষণ প্রদান করেন এবং দেশের সর্বোচ্চ আদালতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন একেএম শামসুজ্জোহা। স্বধীনতা যুদ্ধের পর ১৯৭৩ সালে নারায়ণগঞ্জ থেকে তিনি জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর মন্ত্রিত্ব গ্রহণের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে তাকে ১৮ মাস কারাবন্দী রাখা হয়। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অনন্য সাধারণ ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তাকে ২০১২ সালে মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক দেওয়া হয়। তার স্ত্রী নাগিনা জোহাও ছিলেন ভাষা আন্দোলনের অগ্রনী সৈনিক। এই পরিবারেরই বড় সন্তান একেএম নাসিম ওসমান জাতীয় পার্টির হয়ে চারবার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরিবারের মেঝ সন্তান সেলিম ওসমান একাধারে ব্যবসায়ী নেতা এবং সংসদ সদস্য হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ সন্তান একেএম শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রভাবশালী নেতা হিসেবে পরিচিত। ১৯৯৬, ২০১৪ এবং সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসন থেকে তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন প্রভাবশালী এই নেতা।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
১০১ বার