রাম ও কৃষ্ণ নবী ছিলেন, দাবি যুক্তরাজ্য বিএনপি সভাপতির
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে হিন্দু অবতারকে জড়িয়ে স্লোগান দেয়া যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক এবার রাম ও কৃষ্ণকে নবী বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, অন্য নবী রাসুলের মতো তিনি রাম ও কৃষ্ণকেও মানেন। মঙ্গলবার এনটিভি ইউরোপ আয়োজিত সাপ্তাহিক রাজনৈতিক অনুষ্ঠান ‘সময়ের সাথে’তে অংশ নিয়ে এই দাবি করেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাজ্য সফরে সে দেশের বিএনপি আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে এম এম মালেকসহ বিএনপি নেতাকর্মীদের সাম্প্রদায়িক স্লোগান নিয়ে তোলপাড় চলছে সে দেশ এবং বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রীকে নিন্দা জানাতে গিয়ে বিএনপি নেতারা সেদিন স্লোগান ধরেন ‘হরে কৃষ্ণ হরে নাম, শেখ হাসিনার বাপের নাম।’ এ বিষয়ে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ভিডিও প্রকাশ হয়েছে যেখানে শত শত মানুষ এই ধরনের সাম্প্রদায়িক স্লোগান ব্যবহারের নিন্দা জানান। বাংলাদেশসহ সব গণতান্ত্রিক দেশে রাজনীতিতে ধর্মের ভিত্তিতে কাউকে আক্রমণের আইনি নিষেধাজ্ঞা আছে। কোনো ধরনের সাম্প্রদায়িকতা বাংলাদেশের সংবিধানেরও বিরোধী।
গত সোমবার লন্ডনে সংবাদ সম্মেলন করে ক্যাম্পেইন ফর দ্য প্রটেকশন অব রিলিজিয়াস মাইনরিটিজ ইন বাংলাদেশ-সিপিআরএমবি নামে একটি সংগঠন এই স্লোগানের নিন্দা জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং দলের নেতাদেরকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানায়। নইলে এই বিষয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ করার হুঁশিয়ারি দেয় সংগঠনটি। এই পরিস্থিতিতে লন্ডনেই টিভি আলোচনায় এসে প্রশ্নের মুখে পড়েন ওই বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেয়া যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক। ওই স্লোগান সাম্প্রদায়িকতা এবং সেটি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের আহত করেছে বলে আলোচনায় অংশ নেয়া যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খসরুজ্জামান অভিযোগ করেন। জবাবে বিএনপি নেতা এম এ মালেক বলেন, ”হরে রাম’, ‘হরে কৃষ্ণটা’ হচ্ছে ‘ধন্য কৃষ্ণ’, ‘ধন্য রাম’। এটা অফেসনিভ (আক্রমণাত্মক) কিছু না, বরং প্রাউড (গর্বের)। কেউ যদি বলে আল্লাহ, আল্লাহ, আল্লাহ, তাহলে তার প্রাউড হওয়া উচিত।’ তাহলে আপনি প্রাউড হয়ে বলছেন এই কথাটা?- অনুষ্ঠানের সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের অবশ্য জবাব দেননি এম এ মালেক। বিএনপি নেতা প্রশ্ন এড়িয়ে বলেন, ‘বিকজ শেষ নবী হুজুরে পাক (সা.), এর আগে এক লাখ ২৪ হাজার পয়গম্বর ছিলেন। আমরা সবাইকে মানি। আদম (আ.) থেকে শুরু করে শেষ ঈসা (আ.) পর্যন্ত এবং শেষ নবী আল্লাহ রাসুলকে মানি।’ ‘এর আগে যত জন ছিল, রাম বলেন, কৃষ্ণ বলেন, আদম (আ.) বলেন, ইসমাইল (আ.) বলেন, যত নবী ছিলেন, যত পয়গম্বর ছিলেন, আমরা তাদের মানি।’ তার মানে আপনি এটা পজিটিভ অ্যাঙ্গেলে বলেছেন?-প্রশ্ন রাখেন অনুষ্ঠানের সঞ্চালক।
জবাবে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি বলেন, ‘অবশ্যই।’ ‘আমি সব সময় ধর্মের পক্ষে। প্রত্যেকটা ধর্মের পক্ষে। মুসলমান বলেন, হিন্দু বলেন, খ্রিষ্টান বলেন, আমি প্রত্যেকটা ফেইথ গ্রুপের পক্ষে।’ ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান প্রথম কিন্তু চিটাগাং থেকে হিন্দু মিনিস্টার করেছেন অংশব্রত চৌধুরীকে। তারপর আমাদের প্রত্যেকটা কেবিনেটে দেখবেন একজন না একজন হিন্দু মিনিস্টার আছেন। বর্তমানে আমাদের স্ট্যান্ডিং কমিটিতেও বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নিতাই রায় চৌধুরী (আসলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান) এইভাবে অন্ততপক্ষে একশ’র মতো বিএনপির মেইনস্ট্রিম পলিটিকসে আছে।’ রাম, কৃষ্ণ মুসলমানদের নবী ছিলেন, এমন কথা বলার প্রতিবাদ করেন আওয়ামী লীগ নেতা খসরুজ্জামান। তিনি এই বক্তব্য সংশোধনের আহ্বান জানান। খসরুজ্জামান বলেন, ‘ওনারা যে স্লোগানটা দিয়েছেন, হিন্দু সম্প্রদায় মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে। আমি প্রটেস্ট করছি, মালেক ভাই যেটা বলেছেন, আদম (আ.) থেকে শুরু করে যত নবী রাসুল আছেন, তাদের মধ্যে হরে কৃষ্ণ ছিলেন।’ ‘আমি কখনও শুনি নাই যে আমাদের নবী রাসুলের মধ্যে হরে কৃষ্ণের নাম আছে। আমি এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি, মালেক ভাই আপনি এটা শুধরে নেন।’ এম এ মালেক তখনও বলতে থাকেন, ‘নিশ্চয় হিন্দুদের তো একজন…’ বিএনপি নেতাকে থামিয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘আমি মুসলমান ধর্মের বলেছি, এখানে হরে কৃষ্ণ, রাম বলে কোনো নবী রাসুল ছিলেন, তা কখনও শুনিনি।’