রাষ্ট্রীয় মর্যাদা পেলেও স্বীকৃতি পাননি জগন্নাথপুরের হিরন মিয়া
সানোয়ার হাসান সুনু-
জগন্নাথপুর পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক জনপ্রিয় নেতা হারুনুর রশীদ হিরন মিয়া মুক্তিযোদ্ধের সংগঠক হিসেবে এখনও স্বীকৃতি পাননি। বর্তমান সরকার রনাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধের সংগঠকদের একটি নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। নীতিমালা অনুযায়ী রনাঙ্গনের প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধের প্রকৃত সংগঠকদের তালিকাভূক্ত করে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি স্বরূপ প্রতি মাসে সম্মানী ভাতাসহ আনুষাঙ্গিক সুযোগ সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু দুঃখ জনক হলেও মুক্তিযোদ্ধের অন্যতম সংগঠক জগন্নাথপুরের জনপ্রিয় পৌর চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদ হিরন মিয়াকে এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হয় নি।
হারুনুর রশীদ হিরন মিয়ার মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হলেও এখন পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকের স্বীকৃতি পাননি তিনি। সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর পৌর শহরের ইকড়ছই গ্রামের বাসিন্দা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ৫ বারের নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান, জগন্নাথপুর পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান ও জগন্নাথপুর উপজেলা আ. লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত হারুনুর রশীদ হিরন মিয়া ছিলেন এ এলাকার সর্বস্তরের মানুষের প্রিয় নেতা। তাই এলাকাবাসীর দাবী অবিলম্বে মরহুম হারুনুর রশীদ হিরন মিয়াকে মুক্তিযোদ্ধের সংগঠক হিসাবে স্বীকৃতি প্রদানে বর্তমান সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
জানাগেছে, ২০০০ সালে হারুনুর রশীদ হিরন মিয়ার মৃত্যু হলে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক স্বীকৃতি দিয়ে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রয়াত জাতীয় নেতা আবদুস সামাদ আজাদ ও আ. লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত এমপির উপস্থিতিতে গার্ড অব অনারের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকের স্বীকৃতি পাননি প্রয়াত হারুনুর রশীদ হিরন মিয়া। এর আগে হারুনুর রশীদ হিরন মিয়া জীবিত থাকা কালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাড়িতে এসে ছিলেন। এ সময় হারুন রশীদ হিরন মিয়ার পরিবারের সাথে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা মতবিনিময় করেন। যদিও গত কিছু দিন আগে জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরী নিয়ে যাচাই-বাছাই করা হয়। যাচাই-বাছাই কালে মুক্তিযোদ্ধা সহ অন্যান্যদের নাম তালিকা ভূক্ত হলেও হারুনুর রশীদ হিরন মিয়ার নাম অর্ন্তভূক্ত না হওয়ায় হিরন মিয়ার পরিবারে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।
এ ব্যাপারে প্রয়াত হারুনুর রশীদ হিরন মিয়ার ছেলে হাছিনুর রশীদ ভূইয়া বলেন- যাচাই-বাছাই কালে আমার পিতা হারুনুর রশীদ হিরন মিয়ার স্বপক্ষে বিভিন্ন কাগজ পত্র দেখানো হয় এবং অনেক মুক্তিযোদ্ধারা স্বাক্ষ্য দিলেও জগন্নাথপুর উপজেলা ডেপুটি মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবদুল হকের অসহযোগিতার কারণে তালিকা থেকে আমার পিতার নাম বাদ পড়েছে। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরি নিয়ে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবদুল কাইয়ুম ও ডেপুটি কমান্ডার আবদুল হকের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি সহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে জগন্নাথপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবদুল কাইয়ূম এর সাথে আলাপ হলে তিনি বলেন, ডেপুটি কমান্ডার আবদুল হক মনগড়া একটি তালিকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে দিয়েছেন। আমাদের কোন মতামত তিনি নেননি। আমরা চাই মুক্তিযোদ্ধের সংগঠক হারুনুর রশীদ হিরন মিয়ার নাম লিপিবদ্ধ হউক।
এ ব্যাপারে জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ এর সাথে আলাপ হলে তিনি বলেন, প্রাথমিক যাচাই-বাছাই কালে মুক্তিযোদ্ধের সংগঠক হারুন রশীদ হিরন মিয়ার নাম কেন বাদ দেওয়া হলো এ জন্য আমি মুক্তিযোদ্ধের ডেপুটি কমান্ডারকে আমার অফিসে তলব করেছি। তবে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধের সংগঠক হিসাবে হারুন রশীদ হিরন মিয়ার নাম পর্যায়ক্রমে তালিকাভূক্ত করা হবে। এ ব্যাপারে ১৯৭১ সালে দেশে যুদ্ধ চলাকালীন সময়ের কোম্পানী কমান্ডার, সুনামগঞ্জ জেলা ও জগন্নাথপুর উপজেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, আমার জানামতে তৎকালীন সময়ে জগন্নাথপুরে অন্যতম মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন প্রয়াত হারুনুর রশীদ হিরন মিয়া, ব্যারিস্টার আব্দুল মতিন, সাবেক এমপি রইছ মিয়া, ডা. সুধীর চন্দ্র গোপ প্রমুখ