জঙ্গিবাদ, মাদক, খাদ্যে ভেজালসহ করোনাভাইরাস মহামারিতে র্যাবের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিনা দোষেই যুক্তরাষ্ট্র র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। সোমবার (২৮ মার্চ) সকালে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-এর ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে সংযুক্ত হন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, র্যাব বা পুলিশ যে কেউ তারা নিজেরা যদি কোনো অপরাধে জড়িয়ে পড়ে, আমরা কিন্তু তার শাস্তির ব্যবস্থা করি। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, যারা আমাদের বিনা কারণে, বিনা দোষে, র্যাবের কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে যারা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, তাদের দেশে কিন্তু এ ধরণের অপরাধ করলে, তারা কিন্তু তাদের কোনো বাহিনীর বিরুদ্ধে কোনোরকম শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে না।’
২০২০ সালের মে মাসে মিনেয়াপোলিস শহরে আফ্রো-আমেরিকান নাগরিক জর্জ ফ্লয়েডকে হত্যার ঘটনা স্মরণ করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি স্পষ্ট বলি, আমেরিকায় কিন্তু আপনারা দেখেছেন ছোট বাচ্চা ছেলে জাস্ট পকেটে হাত দিয়েছে, তাকে গুলি করে মারল অথবা রাস্তায় ফেলে পা দিয়ে গলাচিপে মেরে ফেলে দিল। সেখানে যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষার নামে যদি কেউ কোনো অপরাধ করে,অপরাধ করলেও কিন্তু তাদের কিন্তু সেখানে কোনো শাস্তি দেওয়া হয় না। কিন্তু বাংলাদেশ একমাত্র দেশ পৃথিবীতে, যেখানে কেউ অপরাধ করলে আমরা তার শাস্তির বিধান করি।’
বাংলাদেশে নানা ক্ষেত্রে র্যাবের অবদানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারপরও দুর্ভাগ্যের বিষয়, যারা এ ধরনের অভিযান করে সাফল্য অর্জন করেছে, যারা হলি আর্টিজানের মতো ঘটনা মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আমরা সেটা উদ্ধার করি, জলদস্যু, বনদস্যু বা মাদক … বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে সাফল্য … আমাদের এ সাফল্যে এরা কোনো দুঃখ পেয়েছে কি না বলতে পারি না। কিন্তু বাংলাদেশ যে এক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করেছে এটা হল সত্য। আর সেক্ষেত্রে এ ধরণের নিষেধাজ্ঞা জারি করা অত্যন্ত গর্হিত কাজ বলে আমি মনে করি।’
বিভিন্ন দেশে বসবাসরত ক’জন বাংলাদেশি বাংলাদেশ বিরোধী অপপ্রচারে জড়িত রয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সব থেকে দুঃখজনক হল আমাদের দেশের কিছু মানুষ তারাই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানা ধরণের অপপ্রচার চালায়। যারা অপপ্রচার চালায় তারা কিন্তু অপরাধী। তারা কোনো না কোনো দোষে হয়ত চাকরি হারিয়েছে নয়ত দেশ ছেড়েছে। সেখানে যেমন যুদ্ধাপরাধীরাও স্থান পেয়েছে, তেমনিভাবে জাতির পিতার খুনি, আত্মস্বীকৃত ও সাজাপ্রাপ্ত আসামি সে ও কিন্তু আমেরিকায় বসবাস করছে। তাকে তারা ওখানে সিটিজেন করে নিয়েছে।’
জাতির পিতার খুনিকে বাংলাদেশে ফেরত না দেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের নীতির সমালোচনা করে বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা বারবার অনুরোধ করছি, প্রেসিডেন্টের কাছে চিঠি দিয়েছি, একের পর এক প্রেসিডেন্ট আসছে, আমরা তার কাছে ধর্না দিচ্ছি। জাস্টিস ডিপার্টমেন্টে আমরা আহ্বান করেছি যে এরা অপরাধী। এরা শিশু হত্যাকারী, নারী হত্যাকারী, খুনি।পনের আগস্ট তারা খুন করেছে। তাদের আমাদের দেশে ফেরত দিতে হবে। তারা অপরাধীদের রক্ষা করে তাদের দেশে স্থান দেয়। আর বিনা অপরাধে আমাদের দেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এটা যাদের চরিত্র তাদের বিষয়ে আর কী বলব।’
গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাব ও সংস্থাটির সাবেক-বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর গত বছরের ১০ ডিসেম্বর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে পৃথকভাবে এই নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট (রাজস্ব বিভাগ) ও পররাষ্ট্র দপ্তর।
নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা কর্মকর্তাদের মধ্যে র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ রয়েছেন। তিনি এখন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি)। বেনজীর আহমেদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের নিষেধাজ্ঞার আওতায়ও পড়েছেন তিনি।
এ ছাড়া র্যাবের বর্তমান মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) মো. আনোয়ার লতিফ খানের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথক এক ঘোষণায় বেনজীর আহমেদ এবং র্যাব-৭-এর সাবেক অধিনায়ক মিফতাহ উদ্দীন আহমেদের ওপর সে দেশে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ২০১৮ সালের মে মাসে কক্সবাজারের টেকনাফে পৌর কাউন্সিলর একরামুল হককে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে সম্পৃক্ততার জন্য এ দুজনের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপে বাংলাদেশ অসন্তোষ জানিয়েছে। এ নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পরস্পরকে দোষারোপ করে ‘লবিস্ট নিয়োগ’ ইস্যুতে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবদানের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘প্রতিটি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি। সারা বাংলাদেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক জোন স্থাপন করে আমরা বিনিয়োগের আহ্বান করেছি। যেকোনো বিনিয়োগের পূর্বশর্তই হল, সুশৃঙ্খল সামাজিক ব্যবস্থা। আমরা সেটা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছি। সেক্ষেত্রে র্যাবের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। সে অবস্থা অবস্থা অব্যাহত রাখতে হবে।’ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
১০৮ বার