র্যাম্প মডেল থেকে ভয়ঙ্কর জঙ্গি নেতা
মডেলিংয়ের দারুণ শখ ছিল মেহেদী হাসানের। র্যাম্প মডেল ছিলেন। পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তিতে বেশ দক্ষতা আছে ২৯ বছর বয়সী এই যুবকের। গৃহসজ্জার জিনিসপত্র বিক্রিসহ নানা ব্যবসা ছিল তার। কিন্তু সব ছেড়ে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন তিনি। এই অভিযোগে বুধবার রাতে রাজধানীর খিলগাঁও থানার দক্ষিণ বনশ্রী এলাকার একটি বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। এ সময় তার কাছ থেকে দুটি ল্যাপটপ, একটি মোবাইল ফোন, একটি পাসপোর্ট, উগ্রবাদী বইসহ বিভিন্ন আলামত জব্দ করা হয়েছে। তবে মেহেদীর পরিবারের দাবি, গত ৪ মে থেকে নিখোঁজ রয়েছে মেহেদী। তার সন্ধান পাওয়ার জন্য খিলগাঁও থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। মেহেদীর বাবা খোরশেদ আলম পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) ছিলেন। ১৯৯৯ সালে তিনি অবসরে যান। র্যাব জানায়, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের ‘ব্রিগেড আদ্-দার-ই-কুতনি’র কমান্ডার এই মেহেদী। তার সাংগঠনিক নাম ইমাম মেহেদী হাসান ওরফে আবু জিব্রিল। গতকাল দুপুরে কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ জানান, মেহেদী ঢাকার দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ সম্পন্ন করেন। মডেলিংয়ে তিনি মেহেদী নামে পরিচিত। তিনি বনানী ও উত্তরা পশ্চিম থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে করা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। এদিকে গতকাল বনানী থানায় দায়ের করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনে তার ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হলে আদালত চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। ঢাকা মহানগর হাকিম সাব্বির ইয়াসির আহসান চৌধুরী এ আদেশ দেন। মেহেদীর বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল থানার রাজাপুর গ্রামে। র্যাব কর্মকর্তা মাসুদ বলেন, ২০১৬ সালের ৮ অক্টোবর র্যাবের অভিযানে পালাতে গিয়ে নিহত হন জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের তৎকালীন আমির সারোয়ার জাহান ওরফে মানিক ওরফে আবু ইব্রাহিম আল হানিফ। এই বাসা থেকে জেএমবির দুটি অপারেশনাল ব্রিগেড ‘বদর স্কোয়াড’ ও ‘ব্রিগেড আদ-দার-ই-কুতনি’ সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়। এর মধ্যে ‘বদর ব্রিগেড’ হলি আর্টিজানসহ বিভিন্ন হামলায় ভূমিকা রাখে। তবে দেশব্যাপী জঙ্গিবিরোধী অভিযানে ‘বদর ব্রিগেডের’ বেশির ভাগ সদস্য নিহত ও আটক হয়।
এতে ব্রিগেডটি দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই ব্যাকআপ ব্রিগেড হিসেবে ‘আদ্-দার-ই-কুতনি’ সদস্য সংগ্রহ করে শক্তিশালী হওয়ার চেষ্টা করে। ২০১৫ সালে জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের সঙ্গে মেহেদী সম্পৃক্ত হয়। তার সঙ্গে নিবরাসসহ হলি আর্টিজান ও কল্যাণপুরের আস্তানার জঙ্গিদের সংশ্লিষ্টতা ছিল বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে স্বীকার করেছে। জঙ্গি কর্মকাণ্ডের জন্য কর্মী, অর্থ সংগ্রহ, জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করা, হিজরত-পূর্ব প্রস্তুতিমূলক পর্ব সম্পন্ন করার কাজ করতেন মেহেদী। র্যাব-৩ এর প্রধান মাসুদ আরও বলেন, মেহেদী সাংগঠনিক বিয়ের ব্যবস্থা দেখভাল করতেন। তার মাধ্যমে হিজরত করা দুই বড় জঙ্গি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে নিহত হয়। দেশে ও দেশের বাইরে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ, অর্থ ও অর্থের মাধ্যমে অস্ত্র সংগ্রহের কাজও তিনি করতেন। নারী সদস্যরাও তার মাধ্যমে জঙ্গি কর্মকাণ্ড চালিয়েছে। মেহেদীর কাছ থেকে উদ্ধার করা আলামত থেকে জানা যায়, ‘আদ্-দার-ই-কুতনি’ অপারেশনাল সক্ষমতা অর্জন ও যে কোনো স্থানে নাশকতার জন্য সক্ষম। মেহেদী ইংরেজিতে কথা বলা ও লেখায় বেশ দক্ষ।
দেশের শীর্ষ মডেলদের সঙ্গে এক সময় তিনি মডেলিং করতেন। মডেলিং ও ব্যবসা করার সময় তিনি জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। জানা গেছে, মেহেদীর বাড়ি পটুয়াখালী হলেও তিনি ঢাকায় বিয়ে করেন। তার স্ত্রী বর্তমানে অন্তঃসত্ত্বা। চার বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে মেহেদী ছোট। উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার সময় মডেলিংয়ের চেষ্টা করেন তিনি। তবে পরিবার থেকে এ বিষয়ে নিরুৎসাহিত করা হয়। এক সময় পুরান ঢাকার চকবাজার থেকে খেলনাসামগ্রী কিনে এবং বিদেশ থেকে চকলেট এনে বিভিন্ন দোকানে বিক্রি করতেন। মূলত ব্যবসা করতেন তিনি। আগে মডেলিংয়ে যুক্ত থাকলেও কয়েক বছর ধরে তিনি সেসব ছবি নষ্ট করে ফেলেন।