লজ্জিত এমপি বুবলী, বরখাস্ত করেছেন এপিএসকে
নিজের পরীক্ষা অন্যজনকে দিয়ে প্রক্সি দেয়ার ঘটনা যখন তোলপাড় ঠিক সে সময় নিজের ব্যক্তিগত সহকারী ওমর ফারুককে বরখাস্ত করেছেন এমপি তামান্না নুসরাত বুবলী। এ ঘটনায় তিনি লজ্জিত, দুঃখিত। দৈনিক নয়া দিগন্তকে ফোনে এমন কথা জানিয়েছেন এমপি বুবলী। তিনি জানান,আমার স্বামী লোকমানের হত্যাকারীরা আমার পেছনে লেগে আছে অনেক দিন থেকে। তারা আমার সব সময় ক্ষতি চায়। প্রক্সি দিয়ে পরীক্ষার ঘটনায় আমি লজ্জিত। এ ঘটনার পর থেকে আমি খুবই মর্মাহত। আমি অসুস্থ। ডাক্তার দেখে গেছে, ইসিজি করতে দিয়েছে। তিনি জানান, এ ঘটনায় আমার ব্যক্তিগত সহকারী (এপিএস) ওমর ফারুকে রোববার রাতে বরখাস্ত করা হয়েছে। তার অতি উৎসাহে এমনটি ঘটেছে।
জানা যায়, শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন সম্প্রতি বিএ প্রক্সি পরীক্ষায় অভিযুক্ত নরসিংদীর সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য তামান্না নুসরাত বুবলী। গত দুদিনে পানি ছাড়া কিছুই মুখে তোলেননি। শুধু চুপ করে থাকেন আর কাঁদেন। এমনটি দাবি করেছে বুবলীর একমাত্র মেয়ে নাজা। সে জানায়, আম্মু খুব অসুস্থ কিছুই খাচ্ছে না। শুধু চুপ করে থাকেন। নাজা কে এবং পুরো নাম জানতে চাইলে সে জানায়, তার পুরো নাম মিসফা জান্নাত নাজা। সে কাকলী হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। এদিকে, এমপি বুবলীর বাবার বাসস্থান নরসিংদীর আলগী কবরস্থান এলাকার বাসিন্দারা পারিবরিক সূত্রের বরাত দিয়ে জানান, ঘটনার পর থেকে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন বুবলী। পরিবারের কারো ফোন ধরছেন না। তবে তার মেয়ে নাজা ফোন ধরে জানিয়েছেন মা (এমপি বুবলীকে) দেখতে এমপি হোস্টেলে ডাক্তার ডাকা হয়েছে। খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দেয়ায় সে প্রচণ্ড অসুস্থ ও বুকে ব্যাথা অনুভব করছেন। পরিবারের পক্ষ থেকে বুবলীকে মানসিকভাবে শক্ত থাকার জন্য মেয়ে নাজাকে শান্তনা দিতে বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনে সদস্য নির্বাচিত হওয়া তামান্না নুসরাত বুবলী ২০১১ সালে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত নরসিংদীর পৌরসভার তৎকালীন মেয়র লোকমান হোসেনের স্ত্রী। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হলফনামা অনুযায়ী সংসদ সদস্য বুবলী এইচএসসি পাস। তবে নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা বাড়িয়ে নিতে তিনি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএ কোর্সে ভর্তি হন। তবে গত শুক্রবার বাউবির বিএ কোর্স এ তার হয়ে অন্যদের পরীক্ষা দেয়ার ঘটনা একাধিক বেসরকারি টিভি চ্যানেলের অনুসন্ধানে সাংবাদিকের কাছে ধরা পড়ে। তিনি ঢাকায় থাকলেও তার হয়ে নরসিংদীতে বিএ পরীক্ষা দিতেন অন্যরা, উঠে আসে গণমাধ্যমের খবরে পরে জালিয়াতির বিষয়টি আরো তদন্তে কলেজের পক্ষ থেকে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করার কথা জানিয়ে অধ্যাপক এম এ মান্নান বলেন, ‘বুবলী নিজে পরীক্ষা না দিয়ে পরপর ৮টি পরীক্ষায় তার পক্ষে প্রক্সি পরীক্ষার্থীরা অংশ নেয়। তবে শেষ দিনের পরীক্ষা দিতে গিয়ে হলে হাতেনাতে ধরা পড়েছেন এক শিক্ষার্থী।’
ঘটনাটি ধরা পড়া এবং এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর প্রাথমিক তদন্ত শেষে পরীক্ষা থেকে তাকে বহিষ্কার করে কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। ঘটনার পর শুক্র ও শনিবার বুবলী পক্ষ থেকে কোন বক্তব্য না পাওয়া গেলেও রোববার ঢাকার এমপি হোস্টেলে একটি টিভি চ্যানেলে সাক্ষাতকার দিয়ে এমপি বুবলী দাবি করেন, ভাড়াটে শিক্ষার্থী দিয়ে পরীক্ষা দেয়ার কথা জানাই ছিল না তার। কিন্তু এমন জালিয়াতির পরও কেন চুপচাপ ছিলেন? দায় অস্বীকার করলেও, বুবলী ক্ষমা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও তার নিজ এলাকার মানুষের কাছে। তবে, এতকিছুর পর থেমে যেতে চান না, সামনের পরীক্ষায় নিজেই অংশ নিতে চান। এছাড়া বুবলী ওই সাক্ষাতকারে আরো দাবি করেন, অসুস্থতার কারণে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। কিন্তু ব্যক্তিগত কর্মকর্তা তাকে সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য, অন্যকে দিয়ে পরীক্ষা দিয়েছেন। তবে এই ঘটনায় তিনি লজ্জিত বলেও জানান। ক্ষমা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী এবং নিজ এলাকার জনগণের কাছে।