বাংলাদেশ থেকে ২০০৫ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সময়ে পাচার হয়েছে প্রায় সাড়ে সাত হাজার কোটি ডলার, যা টাকায় প্রায় ছয় লাখ কোটি টাকার বেশি। ওয়াশিংটন ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইনান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি বা জিএফআই- এর এক প্রতিবেদনে এমনটাই দাবি করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু ২০১৪ সালেই পাচার হয়েছে প্রায় ৯১১ কোটি ডলার। জিএফআইয়ের তথ্য অনুযায়ী ২০১৪ সালে যে পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে সেটি চলতি বছরের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বিদ্যুতের মতো বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ খাতের মোট উন্নয়ন বাজেটের সমান। সংস্থাটির বলছে মূলত পণ্য আমদানি রপ্তানির সময়ে প্রকৃত মূল্য গোপন করেই এ অর্থ পাচার করা হয়েছে। কিন্তু এক বছরে ৯১১ কোটি ডলার পাচার কিংবা দশ বছরে প্রায় ৭৫৮৫ কোটি ডলার পাচারের তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা কতটুকু। এমন প্রশ্নের জবাবে গবেষণা প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বা টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড: ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্রতিবেদনটির তথ্যসূত্র গ্রহণযোগ্য বলেই ধরে নেয়া হয় এবং তারা প্রতিবেদনেও বলেছে যে কি পদ্ধতিতে তারা সেটি করেছে।

বাংলাদেশ থেকে ২০০৫ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সময়ে পাচার হয়েছে প্রায় সাড়ে সাত হাজার কোটি ডলার, যা টাকায় প্রায় ছয় লাখ কোটি টাকার বেশি।তিনি বলেন, “অর্থগুলো যে পাচারের কথা বলা হচ্ছে তা কিন্তু ব্যাগ ভর্তি বা ব্যাংকের মাধ্যমে যাচ্ছে, তা কিন্তু নয়। যে অর্থের কথা বলা হচ্ছে তার ৯০শতাংশই বিজনেস যারা আমদানি রপ্তানি সাথে যারা জড়িত তারা এটা করছেন। বিদেশে পেমেন্ট করছেন”। কিন্তু এতো বিশাল পরিমাণ অর্থ পাচারে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কি প্রভাব ফেলছে? এটা ঠিক কতটা উদ্বেগের বিষয় বাংলাদেশের জন্য? এমন প্রশ্নের জবাবে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড: মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, “এটা নিশ্চয়ই বাংলাদেশের জন্য ভালো নয়, যে অঙ্ক আসছে তা গড় বৈদেশিক বিনিয়োগ বা সাহায্যের চেয়েও বেশি। আমরা দেখি যে পাচার বিরোধী আইন করা হচ্ছে, আনুষ্ঠানিক ভাবে টাকা আনা নেয়ায় উৎসাহিত করা হচ্ছে। তারপরেও বাণিজ্যের মাধ্যমে, আবার এর বাইরেও হচ্ছে”। বাণিজ্য কিংবা অন্য পথে, যেভাবেই টাকা পাচারের ঘটনা ঘটুক, এতো বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারের খবর প্রকাশের পর সেটি কতটুকু আমলে নিচ্ছে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন। দুদকের সচিব আবু মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল বলছেন প্রতিবেদন সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করবেন তারা।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড: ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ব্যাগ ভর্তি বা ব্যাংকের মাধ্যমে যাচ্ছে, তা কিন্তু নয়। যে অর্থের কথা বলা হচ্ছে তার ৯০শতাংশই বিজনেস যারা আমদানি রপ্তানি সাথে যারা জড়িত তারা এটা করছেন।
সংশোধনীর মাধ্যমে মানি লন্ডারিং আইনে পরিবর্তন আনা হয়েছ। সে পরিবর্তন এখন শুধু মাত্র ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ পাচার হলে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার এখতিয়ার কমিশনের রয়েছে। এ রিপোর্ট আমরা দেখেছি, এটি সংগ্রহ করে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে যা ব্যবস্থা নেয়ার নেবো”। এর আগে দুপুরে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের কাছে সাংবাদিকরা জানতে চেয়েছিলেন অর্থ পাচারের বিষয়ে কোন ব্যবস্থা সরকার নেবে কি-না। জবাবে মিস্টার হক। তিনি বলেন দেশে এন্টি মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট রয়েছে। এ রিপোর্টের সত্যতা পাওয়ার পর এই আইনে অপরাধ পাওয়া গেলে এই আইন অনুযায়ীই ব্যবস্থা নেয়া হবে”। কিন্তু সরকার বা দুর্নীতি দমন কমিশন যে ব্যবস্থাই নিক না কেন, যে অর্থ পাচার হয়েছে সেটি কি ফিরিয়ে আনা সম্ভব? এমন প্রশ্নের জবাবে টিআইবির ইফতেখারুজ্জামান বিবিসিকে বলেছেন বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও দুর্নীতি দমন কমিশন এবং অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস একযোগে কাজ করলে এটি সম্ভব,তবে তাও দীর্ঘসময় লেগে যেতে পারে।বিবিসি
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn