ওয়েছ খছরু-সিলেট::সিলেটের এমসির ছাত্রাবাসের ঘটনাও লাগাম টেনে ধরতে পারলো না ধর্ষকদের। গত ১০ দিনে ৬টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ছাত্রাবাসে, শিশু নিবাসে, বাসায় ঢুকে ঘটছে ধর্ষণের ঘটনা। একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা ঘটেই চলেছে। এতে করে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে সিলেটে। লোমহর্ষক এসব ধর্ষণের ঘটনায় মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করছেন। কেউ কেউ লাগাতার কর্মসূচিরও ডাক দিয়েছেন। গতকালও এ নিয়ে সিলেটের রাজপথে হয়েছে বিক্ষোভ।এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, সিলেটে যেসব ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে সব ঘটনার আসামিরা গ্রেপ্তার হয়েছে। তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিচ্ছে। ২৫শে সেপ্টেম্বর সিলেটের এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে ঘটে ইতিহাসের সবচেয়ে ন্যক্কারজনক ঘটনা। ওইদিন রাতে এমসি ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করা হয় গৃহবধূকে।
এ ঘটনায় পুলিশ ইতিমধ্যে এমসি কলেজের ছাত্রলীগ কর্মী সাইফুর রহমান, অর্জুন লস্কর, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, রবিউল ইসলাম, তারেকুল ইসলাম তারেক, মাহফুজুর রহমান মাসুম, মিসবাহুল ইসলাম রাজন, আইনুদ্দিন আইনুলকে গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় সব আসামিই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তারা ধর্ষণের ঘটনা স্বীকার করেছে। সর্বশেষ গত শনিবার নগরীর শামীমাবাদে বাসায় ঢুকে গৃহবধূকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে দিলওয়ার ও হারুনকে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গ্রেপ্তারকৃত দিলওয়ার শ্রমিক লীগ নেতা। নগরীর দাড়িয়াপাড়ায় ঘটেছে আরেকটি আলোচিত ধর্ষণের ঘটনা। ছাত্রলীগের পীযূষ গ্রুপের কর্মী রকিবুল ইসলাম নিজু বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে এক কিশোরীকে ধর্ষণ করেছে। শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে গোলাপগঞ্জ থেকে মিজুকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-৯। মিজু বর্তমানে পুলিশের রিমান্ডে রয়েছে। জালালাবাদ থানা এলাকায় ঘটে আরেক ধর্ষণের ঘটনা। গত ৬ই সেপ্টেম্বর শহরতলির রায়েরগাঁও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়। পরদিন স্থানীয় মুরব্বি আশিক আলী, হারুন, ইমদাদ আলী ও জালাল ছাত্রীর বাবাকে মামলা করতে নিষেধ করেন এবং বিষয়টি তারা সালিশের মাধ্যমে সমাধানের আশ্বাস দেন। কিন্তু ঘটনার ছয়দিন পর বিচার না পেয়ে জালালাবাদ থানায় মামলা করেন। এর ১৯ দিন পর দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে জালালাবাদ থানা পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছে- রায়েরগাঁওয়ের নাসির উদ্দিনের ছেলে জসিম উদ্দিন ও একই এলাকার তজম্মুল আলীর ছেলে মো. এখলাছ মিয়া।
২৩শে সেপ্টেম্বর রাতে সিলেট নগরীর শিবগঞ্জ লামাপাড়ার শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের তৃতীয় তলার পরিত্যক্ত কক্ষে ১৬ বছরের এক কিশোরীকে ধর্ষণ করে স্থানীয় যুবক মোহাম্মদ আলী। এ ঘটনায় শনিবার মেয়েটির মা বাদী হয়ে শাহপরাণ (রহ.) থানায় মামলা করেন। পরে একই দিন লামাপাড়া থেকে পুলিশ মোহাম্মদ আলীকে গ্রেপ্তার করে। আলী লামাপাড়ার সাকু মিয়া কলোনির বাসিন্দা সোহেল মিয়ার ছেলে। তাকে অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করলে সে ধর্ষণের দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। এদিকে, হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে ঘরে ঢুকে মা ও মেয়েকে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ধর্ষণের শিকার মা-মেয়ের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। গত শনিবার হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার রাণীগাঁও ইউনিয়নের গরমছড়ি গ্রামে রাতে ঘরে প্রবেশ করে মা মেয়েকে ধর্ষণ করে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। এ ঘটনায় শনিবার রাতে ধর্ষণের শিকার মেয়ে চুনারুঘাট থানায় মামলা দায়ের করলে রোববার বিকালে পুলিশ দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছে- জেলার চুনারুঘাট উপজেলার জিগদর গ্রামের শফিক মিয়ার ছেলে মামলার প্রধান আসামি শাকিল মিয়া ও একই গ্রামের রেজ্জাক মিয়ার ছেলে হারুণ মিয়া। এদিকে, ধর্ষণের ঘটনায় সিলেটে ক্ষোভ বিরাজ করছে। গতকালও সিলেটে বিক্ষোভ হয়েছে। এর মধ্যে সিলেট কল্যাণ সংস্থা বিক্ষোভ করে ৬ আসামির কুশপুত্তলিকা দাহ করেছে। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে ৬ ধর্ষকের প্রতীকী মূর্তি নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে ধর্ষকদের ফাঁসির দাবিতে জল্লারপার, জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা হয়ে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে গিয়ে প্রতিবাদ মিছিল শেষ হয়। প্রতিবাদ মিছিল পরে ধর্ষকদের কুশপুত্তলিকা দাহ করেন সংস্থাদ্বয়ের নেতৃবৃন্দ। সিলেট কল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোহাম্মদ এহছানুল হক তাহেরের নেতৃত্বে প্রতিবাদ মিছিল ও কুশপুত্তলিকা দাহ কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন- সিবিযুকস’র বিভাগীয় কমিটির সহ-সভাপতি মো. তালেব হোসেন তালেব, সিবিযুকস’র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও বিভাগীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী, সিবিযুকস’র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও বিভাগীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ মুখতার আহমেদ তালুকদার, সিনিয়র সহ-সাধারণ সম্পাদক বিজিত চন্দ, হেলাল আহমদ, অর্থ সম্পাদক মুসলেহ উদ্দিন চৌধুরী মিলাদ,
সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি সম্পাদক মো. মহিবুর রহমান মুহিব, গোলাম কিবরিয়া হিমু, সহ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. রমজান আহমদ শাকিল, মহানগর প্রতিনিধি সম্পাদক সৈয়দ ইব্রাহীম, সিনিয়র সহ-ধর্ম সম্পাদক দিপক কুমার মোদক বিলু, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক জয়ন্ত পাল, সহ-ক্রীড়া ও যুব সম্পাদক মাইদুল ইসলাম পারভেজ, প্রতিবন্ধী সম্পাদক মো. শরীফ আহমদ, সহ-প্রতিবন্ধী সম্পাদক এস.এ.এন রাহি, সিনিয়র সহ-সমাজসেবা সম্পাদক পীযূষ মোদক, সিলেট কল্যাণ সংস্থার অন্যতম সহযোদ্ধা মো. আলিম উদ্দিন, মো. কেরামত হোসেন, যুবনেতৃবৃন্দের মধ্য থেকে সৈয়দ সায়েক আহমদ, রফিকুল ইসলাম, নাদেল হোসেন, নাহিন আহমদ, জুয়েল মিয়া ও প্রতিবন্ধী নেতা মো. গণি মিয়া।