শর্ত না মানায় জেলায় জেলায় ফের বন্ধ হলো শপিংমল
রংপুরে করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতা ঠেকাতে শপিংমল, মার্কেট ও দোকানপাট বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে করোনা প্রতিরোধ নাগরিক কমিটি। বৃহস্পতিবার (১৪ মে) রংপুরের জেলা প্রশাসক আসিব আহসানকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়ে এ দাবি জানান জেলা করোনা প্রতিরোধ নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক ফখরুল আনাম বেঞ্জু। করোনা প্রতিরোধ নাগরিক কমিটির চিঠিতে শপিংমল, মার্কেট ও দোকানপাট খুলে দেয়ায় করোনা ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয় ১০ মে সরকারি নির্দেশনায় সীমিত আকারে মার্কেট, দোকান খুলে দেয়ার ঘোষণা দেয়ায় পরিস্থিতি পাল্টাচ্ছে। জেলা প্রশাসন থেকে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হলেও তা না মেনেই মার্কেটে যাচ্ছে সবাই। ফলে করোনার প্রাদুর্ভাব বাড়তে পারে। তাই দোকানপাট, শপিংমল ও মার্কেট বন্ধ করা জরুরি। তা নাহলে বড় বিপদের সম্মুখীন হবে রংপুরবাসী। এদিকে প্রাণঘাতি করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে রাজশাহীর মার্কেটগুলো খোলার বিপক্ষে সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা। কিন্তু মার্কেট খোলা নিয়ে দোটানায় রাজশাহীর ব্যবসায়ীরা। বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে বৃহস্পতিবার সিটি মেয়র সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করেন। বিকেল ৩টায় নগর ভবনের সিটি হল সভাকক্ষে ওই বৈঠক শুরু হয়। কিন্তু কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়েছে বিকেল ৫টায়। রাসিক জানিয়েছে, সভায় রাজশাহী মহানগরীর করোনা মোকাবেলা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকদের দোকান খোলা রাখার দাবিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। তবে কোন সিদ্ধান্ত আসেনি। সন্ধ্যায় আরেকটি বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
সাতক্ষীরা জেলার সব বাজারের কাপড়ের দোকান সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করেছেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল। বৃহস্পতিবার বিকেলে জনস্বার্থে তিনি এই আদেশ জারি করেন। এছাড়া তথ্য গোপন করে করোনা রোগী জেলায় অবস্থান করলে বা প্রবেশ করলে তথ্য গোপনকারী এবং আশ্রয় প্রদানকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোষণা দেন। বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। ক্রেতারা শারীরিক দূরত্ব না মানায় চুয়াডাঙ্গা জেলাব্যাপী মার্কেট ও শপিংমল আবার বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৪ মে) চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার এ নির্দেশ জারি করেছেন। এতে বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) বিস্তার প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি ও শারীরিক দূরত্ব অনুসরণ করে সীমিত আকারে জেলার অভ্যন্তরীণ মার্কেট ও শপিংমল শর্তসাপেক্ষে চালুর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। তবে বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে জানা যায়, সে শর্ত দু’টি না মেনে মার্কেটগুলোতে মানুষের উপচেপড়া ভিড়, অসচেতনতা ও অবহেলার কারণে যথাযথভাবে প্রতিপালিত হচ্ছে না। ফলে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ভয়াবহভাবে বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এমতাবস্থায় পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গার সবপর্যায়ে মার্কেট ও শপিংমলসমূহ বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়া হলো। জয়পুরহাটে সরকারের দেয়া কোনো শর্ত মানছেন না ব্যবসায়ীরা। বিধিনিষেধ শিথিল করার চারদিন না যেতেই করোনা পরিস্থিতির অবস্থার প্রেক্ষিতে আবারও জয়পুরহাটের দোকান ও মার্কেট বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এক জরুরি সভার সিদ্ধান্ত মতে আগামীকাল থেকে জেলার সকল বিপণী বিতান ও শপিংমল বন্ধ রাখত হবে। এছাড়া করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত মার্কেটের ভাড়া মওকুফ ও অযথা ঘোরোফেরা করলেই হোম কোয়ারেন্টাইন ও আইসোলেশনে রাখতে বাধ্য করার সিন্ধান্তও নেয়া হয়েছে ওই সভায়। বৃহস্পতিবার (১৪ মে) জরুরি এক সভায় ১৫ মে থেকে ৩০ মে পর্যন্ত সকল দোকান ও মার্কেট বন্ধ থাকার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জেও স্বাস্থ্যবিধি না মানায় করোনা ঝুঁকিতে দেশের বৃহৎ পাইকারি কাপড়ের বাজার গাউছিয়াসহ উপজেলার সকল মার্কেট বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। বুধবার (১৩ মে) রাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনা দেয়া হয়। গণ-বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) সংক্রমণ দিনদিন বেড়েই চলছে। এ অবস্থায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে গাউছিয়া মার্কেটসহ সকল মার্কেট ও হাটবাজার বন্ধ থাকবে। শুধুমাত্র কাঁচাবাজার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ওষুধের দোকান খোলা থাকবে ২৪ ঘণ্টা। নড়াইলেও গামীকাল শুক্রবার থেকে আবারও সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ায় সকালে নড়াইল জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বর্তমান পরিস্থিতিতে করণীয় ঠিক করতে আলোচনা করেন জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সভা শেষে নড়াইলে করোনা প্রতিরোধে আগামীকাল শুক্রবার থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান ছাড়া সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্তের কথা জানান জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা।
অপরদিকে করোনা প্রতিরোধে ব্যাতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে নেত্রকোনা চেম্বার অব কমার্স। হাটবাজারে নারীদের না আসার অনুরোধ জানিয়ে নেত্রকোনা চেম্বার অব কমার্সের জেলা শাখার পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার চেম্বার অব কমার্সের নেত্রকোনা জেলা শাখার পক্ষ থেকে মাইকিং করে এ আহ্বান জানানো হয়। মাইকিংয়ে বলা হয়, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অঙ্গীকার করে দোকানপাট খুলে দেয়া হয়েছে। কিন্তু বাজার মনিটরিংয়ে দেখা যাচ্ছে, স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে না। তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারলে স্থানীয় প্রশাসন ও চেম্বার অব কমার্সের পক্ষ থেকে পুনরায় দোকানপাট বন্ধের ঘোষণা দিতে হবে। এমতাবস্থায় মা-বোনদের বাজারে না আসতে অনুরোধ করা যাচ্ছে।