শহরে ছাত্রদল নেতা নেতৃত্বে হামলাঃস্ত্রী সহ আহত ৬
সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক কামরুল হাসান রাজু তাঁর বিয়ে করা স্ত্রীকে প্রথমবার তালাক দেওয়ার পর দ্বিতীয়বার গোপনে বিয়ের চার বছর পর র্যাবের মধ্যস্থতায় কাবিননামা সম্পাদনের ঘণ্টা না পেরুতেই ক্ষুব্ধ রাজু ও তার দুই ভাইয়ের নেতৃত্বে কাবিন অনুষ্ঠানস্থল সাংবাদিক শাহাবুদ্দিনের বাসায় হামলা করেছেন। বর ও কনে উভয়পক্ষের আত্মীয় হওয়ার সুবাদে বিয়ের অনুষ্ঠানটি গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে সাংবাদিক শাহাবুদ্দিনের নতুনপাড়ার বাসায় সম্পন্ন হয়। রাত ১১টা ২০ মিনিটের দিকে হামলার এই ঘটনাটি ঘটে। হামলায় সাংবাদিক শাহাবুদ্দিন, তার বৃদ্ধা মা সালমা খাতুন (৭৫), তাঁর বোন স্কুল শিক্ষিকা কোহিনূর বেগম (৫৫), রাজুর স্ত্রী কাজী মনিকা বেগম, মনিকার বড় বোন কাজী লুৎফা বেগম, তাঁর শিশুপুত্র খায়রুল (৬) আহত হয়েছেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আহতদের সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
হামলার খবর পাওয়ার পর জেলা সদরে অবস্থানরত বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদকর্মীরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান।
পুলিশ ও পারিবারিক সূত্র জানায়, সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক কামরুল হাসান রাজু শহরের উত্তর আরপিননগর আবাসিক এলাকার কাজী আব্দুস সোবহানের মেয়ে কাজী মনিকা বেগমকে ২০০৭ সালে প্রথমবার বিয়ে করেন। বিয়ের এক বছরের মাথায় স্ত্রীকে তালাক দেন রাজু। ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পর মনিকা ঢাকার মহাখালীতে নৌবাহিনী নিয়ন্ত্রিত একটি স্কুলে অফিস স্টাফের চাকরি নেন। ২০১৩ সালে এসে বিভিন্ন কৌশলে সাবেক স্ত্রী মনিকার সঙ্গে আবার সখ্যতা গড়ে তোলেন রাজু। এর সূত্রধরে ওই বছর সিলেটে গোপনে মৌলানার মাধ্যমে দ্বিতীয় দফায় বিয়ের ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন তারা। এরপর মনিকা ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জে আসলে স্ত্রীকে নিয়ে বিভিন্ন বন্ধুর বাসায় নিয়মিত অবস্থান করতেন ছাত্রদল নেতা রাজু। এভাবে চলে ২০১৬ সাল পর্যন্ত। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে রাজুর স্ত্রী মনিকা তাকে বাসায় নিয়ে যেতে চাপ দেন। কিন্তু রাজু তাকে বাসায় নিতে অস্বীকার করেন। এ নিয়ে আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে শালিস হলেও কোন সমঝোতা না হওয়ার র্যাবের শরণাপন্ন হন রাজুর স্ত্রী কাজী মনিকা। স্ত্রীর অধিকার পেতে তিনি র্যাবের কাছে লিখিত দরখাস্ত দেন। তবে র্যাবের কাছে রাজু মনিকাকে স্ত্রী হিসেবে অস্বীকার করেন। কিন্তু র্যাবের কাছে মনিকা রাজুর সঙ্গে তার বিয়ের তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করেন। এই পর্যায়ে বিষয়টি মিটমাটের দায়িত্ব নেন পৌর কাউন্সিলর আবাবিল নূর।
আবাবিল নূরের মধ্যস্থতায় গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ৯টায় সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের সিনিয়র সদস্য শাহাবুদ্দিনের নতুনপাড়ার বাসায় নতুন করে রাজু ও মনিকার কাবিন অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। কাবিন সম্পন্ন হওয়ার পর রাজুর স্ত্রী কাজী মনিকা তাকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ দিলে রাজু আরও কিছুদিন সময় দেওয়ার অনুরোধ করেন। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর বাদানুবাদের এক পর্যায়ের রাত ১১টা ২০মিনিটের দিকে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সাংবাদিক শাহাবুদ্দিনের বাসায় আকস্মিক হামলা করে রাজুর দুই সহোদর সাজু ও নেজু। এ পর্যায়ে নবপরিণিতা স্ত্রীকে লাথি মেরে ভাইদের সঙ্গে হামলায় যোগ দেন রাজু নিজেও। তিন ভাই মিলে বাসায় অবস্থানরত নারী-শিশুকে নির্বিচারে বেধড়ক পেটাতে থাকেন। তাদের হামলার হাত থেকে রেহাই পাননি সাংবাদিক শাহাবুদ্দিনের বয়োবৃদ্ধ মা, স্কুল শিক্ষক বোন ও তিনি নিজেও। তাদের হামলায় আহত হন রাজুর নবপরিণীতা স্ত্রী কাজী মনিকা, তার বোন কাজী লুৎফা ও লুৎফার ছয় বছরের শিশুপুত্র খায়রুল।
রাজুর স্ত্রী কাজী মনিকা বলেন, অতীতে আমাকে দুই দফা বিয়ে করার এক পর্যায়ে স্ত্রী হিসেবে অস্বীকার করেন রাজু। এবার র্যাব ও পৌর কাউন্সিলরের মধ্যস্থতায় কাবিননামা সম্পন্ন হওয়ার পরপর আমাকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্য বলি। এ পর্যায়ে এসেও সে অস্বীকার করে। কিন্তু আমি পীড়াপীড়ি করলে তারা তিনভাই মিলে অমানবিক এই হামলা ঘটনাটি ঘটায়। তিনি আরো বলেন, হামলার সময় আমার কাছে থাকা ২০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায় রাজু।
এ ব্যাপারে জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক কামরুল হাসান রাজুর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি র্যাবের কাছ থেকে কাবিন সম্পাদনের দায়িত্ব নিয়ে আসা পৌর কাউন্সিলর আবাবিল নূর বলেন, আমি নিজে উপস্থিত থেকে আনন্দঘন পরিবেশে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেছি। কিন্তু বাসায় ফিরে যেতে না যেতেই যে ঘটনাটি ঘটেছে তাতে আমি বিস্মিত হয়েছি।
এদিকে, খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক সুনামগঞ্জ সদর থানার উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ আলমগীরের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার তাপস রঞ্জন ঘোষ বলেন, ‘হামলার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেছে। জড়িতদের ধরতে অভিযান চলছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই ঘটনায় লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এদিকে, সাংবাদিক শাহাবুদ্দিনের বাসায় এ হামলার ঘটনায় ক্ষোভ ও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সুনামগঞ্জে কর্মরত সাংবাদিকরা। হামলার শিকার সাংবাদিক শাহাবুদ্দিন ও তার পরিবারকে দেখতে তাৎক্ষণিক তাঁর বাসায় ছুটে যান সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও দৈনিক সুনামকণ্ঠের সম্পাদক বিজন সেন রায়, সহ-সভাপতি রওনক আহমদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান পীর, কার্যকরী কমিটির সদস্য মাসুম হেলাল, শামসুল কাদির মিছবাহ, দৈনিক সুনামগঞ্জের খবরের স্টাফ রিপোর্টার শহীদনূর আহমদ প্রমুখ। টেলিফোনে আহত সাংবাদিক ও তার পরিবারের খোঁজখবর নেন সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শেরগুল আহমেদসহ প্রেসক্লাবের অন্যান্য সাংবাদিকরা।