শান্তিগঞ্জের ডুংরিয়া গণহত্যা দিবস আজ

শান্তিগঞ্জ উপজেলার একটি প্রসিদ্ধ গ্রাম ডুংরিয়া। ২৮ আগস্ট ডুংরিয়া গ্রামবাসীর কাছে এক আতঙ্কের দিন। ১৯৭১ সালের ওই দিন পাকিহানাদার বাহিনী এবং তাদের দোসররা অর্ধশতাধিক নৌকাযোগে ডুংরিয়া গ্রামের বিভিন্ন পাড়ায় আক্রমণ করে। অগ্নিসংযোগ করে ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। মহিলাদের ওপর পাশবিক নির্যাতন করে, লুটপাট চালায়, হত্যা করে ৮ জন লোককে।গ্রামবাসী আতঙ্কিত হয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে আশ্রয় নেন। হায়েনাদের হাত থেকে আহত হয়ে বেঁচে যাওয়া আলকাছ আলী এবং গ্রামের বয়স্ক ব্যক্তিরা ওই গ্রামে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন।

১৬ আগস্ট জয়কলস যুদ্ধে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয় হানাদার বাহিনী। কমান্ডার নিজাম উদ্দিন লস্কর (ময়না ভাই) তাঁর দল নিয়ে ১৬ আগস্টের অভিযান পরিচালনা করেন। বসিখাউরির আওয়ামীলীগ নেতা দানিছ মিয়ার বাড়িতে অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করেন। ১৬ আগস্ট রাতে বসিয়াখাউরি থেকে নৌকাযোগে রওয়ানা হয়ে প্রথমে আহসানমারা ফেরি ধ্বংস করে জয়কলসে পাকিস্তানি সেনাদের বাংকারে সদলবলে আক্রমণ করেন। জয়কলস বাংকারে রাজাকারদের সঙ্গে সেদিন পাকিবাহিনীর সদস্যরাও ছিলো। ১৬ আগস্ট তাদের অধিকাংশ লোকই নিহত হয়। এ সংবাদ তাদের সিলেটস্থ বিগ্রেড সদর দপ্তরে পৌঁছলে তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। কারণ এ অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধাদের শায়েস্তা করতে না-পারলে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে তাদের চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাই ১৬ আগস্টের প্রতিশোধ নিতে,মুক্তিযোদ্ধাদের শায়েস্তা করতে হানাদার বাহিনী আক্রমণের পরিকল্পনা গ্রহন করে। মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান জানতে তারা যোগাযোগ করে তাদের স্থানীয় এজেন্টদের সাথে।

দালালরা সিলেট সদর দপ্তরে হাজির হয়ে জানায়, মুক্তিযোদ্ধারা শক্তিশালী অস্ত্র নিয়ে ডুংরিয়া গ্রামে অবস্থান করছে এবং সেখানে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভারতীয় সেনারা প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করছে। এ সংবাদ পেয়ে পাকিবাহিনীর আঞ্চলিক সদর দপ্তর থেকে একটি বড়ো দল ২৮ আগস্ট ভোরে সদরপুরে পৌঁছে। উজানিগাঁওয়ের কুখ্যাত সাত্তার দালাল নৌকার ব্যবস্থা করে তাদের বহনের জন্য। ৫০-৬০টি নৌকাযোগে ভোরে ডুংরিয়া গ্রামে ঢুকে বিভিন্ন মহল্লায় আক্রমণ চালায় পাকিস্তানি বাহিনী। তারা মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় সেনাদের খুঁজতে থাকে।

মুক্তিযোদ্ধাদের না-পেয়ে গ্রামের নিরীহ মানুষের ওপরে অমানুষিক নির্যাতন-অত্যাচার চালায় তারা। শিবপুর ছাকলপাড়া মহল্লার কাছা মিয়ার বাড়িতে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রামের ৩০ জন লোককে জড়ো করে।প্রথমে তাদের ওপরে অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে দেহ রক্তাক্ত করে।পরে ত্রিশজনের মধ্য থেকে বেছে বেছে লাইনে দাঁড় করিয়ে রাইফেল থেকে গুলি চালায়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজন নিরীহ গ্রামবাসী নিহত হন। অন্যদিকে শিবপুর মহল্লার মুক্তিযোদ্ধা রবীন্দ্র তালুকদারের পিতা নরেন্দ্র তালুকদারকে তাঁর নিজ বাড়ির আঙিনায় গুলি করে হত্যা করে।তাঁর ছেলে নরোত্তম ঘরের ভেতর থেকে জানালার ছিদ্রপথে এ হত্যাকাণ্ড প্রত্যক্ষ করেছিলেন। তিনি পলায়ন করে আত্মরক্ষা করতে সক্ষম হন।

তাদের বসতঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় হায়েনারা। একই দিনে বিচ্ছিন্নভাবে ৪ জন গ্রামবাসীকে তাদের নিজ বাড়িতে হত্যা করে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত হানাদার বাহিনী চালায় নরকীয় হত্যাকাণ্ড, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ধর্ষণের তাণ্ডবলীলা। এভাবেই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্থানি সেনাবাহিনী লক্ষ লক্ষ বাঙালি হত্যা করেছে। এ দৃশ্য শুধু ডুরিয়া গ্রামের নয়, এ দৃশ্য সমগ্র বাংলাদেশের। দেশের স্বাধীনতার জন্য বাঙালিদের অনেক রক্ত দিতে হয়েছে।

নিম্নে ডুংরিয়া গ্রামের শহিদদের তালিখা দেওয়া হলো:
১.শহিদ এরাব উল্লাহ পিতা:মৃত জোয়াদ উল্লাহ, ২.শহিদ রংফর মিয়া পিতা:জাবিদ উল্লাহ, ৩.শহিদ নজর আলী, পিতা:মৃত হাজি জাহির আলী, ৪.শহিদ ইসকন আলী, পিতা:মৃত রিয়াজ উল্লাহ, ৫.নরেন্দ্রকুমার তালুকদার, পিতা:মৃত হারাধন তালুকদার, ৬. শহিদ নিয়ামত আলী, পিতা:মৃত আইনউল্লাহ, ৭. শহিদ আঞ্জব আলী, পিতা:মৃত আজিম উল্লাহ ও ৮. শহিদ দৌলত মিয়া, পিতা:মৃত আজইউল্লাহ। ১৯৭১ সালের এই দিনে নির্মম ও ভয়াল গণহত্যায় নিহত সকল শহীদদের মাগফিরাত কামনায় ডুংরিয়া গ্রামের বিভিন্ন মসজিদে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn

এ বিভাগের আরো খবর

একজন খোকন মাষ্টার- সুপ্ত বাসনা যার হৃদয়ে

একজন খোকন মাষ্টার- সুপ্ত বাসনা যার হৃদয়ে

শিক্ষা গুরু বাবু সুবোধ রঞ্জন দাস

শিক্ষা গুরু বাবু সুবোধ রঞ্জন দাস

মোদিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ প্রধানমন্ত্রীর

মোদিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ প্রধানমন্ত্রীর