শাহজালাল ও শাহ আমানতে যেন সোনা ফলে!
ব্যাপক কড়াকড়ি। ধরপাকড়। থানা পুলিশ। মামলা। তারপরও থেমে নেই স্বর্ণ পাচার। মালিক পাওয়া না গেলেও পরিত্যক্ত অবস্থায় মিলে সোনার বার। এ চিত্র রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরের। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ঘন ঘন সোনা জব্দের ঘটনায় অনেকেই বলে থাকেন এই দুই বিমানবন্দরে যেন সোনা ফলে!শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) ড. মইনুল খান বলেন, গত চার বছরে এই দুই বিমানবন্দরে জব্দ করা হয়েছে ৪০ মণ স্বর্ণ। আর গত ছয় মাসে শাহজালাল ও শাহ আমানত বিমানবন্দরে জব্দ করা হয়েছে ৬০৯ কেজি স্বর্ণ। যার মূল্য প্রায় ২৯৬ কোটি টাকা। একই সময়ে এই দুই বিমানবন্দরে জব্দ করা হয়েছে ছয় কোটি টাকার আমদানি নিষিদ্ধ সিগারেট। সূত্র জানায়, বিমানবন্দর ও বাংলাদেশ বিমানের কিছু কর্মকর্তাসহ একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের সহায়তায় ওই দুই বিমানবন্দর দিয়ে সোনা আসছে। যার ফলে কোনো অবস্থাতেই রোধ করা যাচ্ছে না সোনা পাচার। সোনা পাচারের ঘটনায় ইতিপূর্বে বিমানের প্রকৌশলীসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
জানা গেছে, বিভিন্ন সময় সোনা জব্দের ঘটনায় মামলা হয়। এসব মামলা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে প্রায় সময়ই সোনা বহনকারীকে আসামি করে মামলা হয়; কিন্তু নেপথ্যের লোকগুলো অধরাই থেকে যায়। এদের কলকাঠির জোরে ও আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে আটককৃতরা বেরিয়ে আসে। ফলে দেখা যায় সোনা পাচার কার্যক্রম চলছেই। সর্বশেষ গত বুধবার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তিন দফায় জব্দ করা হয়েছে প্রায় সাড়ে ১৬ কেজি ওজনের স্বর্ণের বার। এ ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে দুই নারীসহ তিনজনকে। আর গতকাল বৃহস্পতিবার দুই বিমানবন্দর থেকে জব্দ করা হয়েছে ৩৮ লাখ টাকার সিগারেট। দুই নারী আটক :বুধবার সকাল দশটায় মাস্কাট থেকে রিজেন্ট এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে চট্টগ্রাম হয়ে শাহজালাল বিমানবন্দরে আসা নাসিমা ও জেসমিন নামে দুই নারীকে আটক করে শুল্ক গোয়েন্দা টিম। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় সোয়া ২ কোটি টাকার মূল্যের ৪০টি স্বর্ণের বার। এই স্বর্ণ তাদের শরীরের গোপন অংশে লুকানো ছিল। নাসিমার বাড়ি কক্সবাজারের চকরিয়া ও জেসমিনের বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, তাদেরকে ইমরুল নামের এক দালাল স্বর্ণ বহনের জন্য ভাড়া করে। স্বর্ণ বহনের জন্য নাসিমার সঙ্গে ৮ হাজার টাকা ও জেসমিনের সঙ্গে ১০ হাজার টাকায় চুক্তি হয়।
পরিত্যক্ত স্বর্ণ উদ্ধার : বুধবার সন্ধ্যায় শাহজালাল বিমানবন্দরে পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ২ কেজি আটশ গ্রাম ওজনের স্বর্ণবার। শুল্ক গোয়েন্দারা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিমানবন্দরের ১ নম্বর বোর্ডিং ব্রিজ-এর টয়লেট থেকে এগুলো উদ্ধার করে। যাত্রীর দেহে ৯ কেজি স্বর্ণ :একই দিন মধ্যরাতে শাহজালাল বিমানবন্দরের এক যাত্রীর দেহ তল্লাশি করে ৯ কেজি ২৭৮ গ্রাম স্বর্ণ জব্দ করেছে শুল্ক গোয়েন্দারা। ব্যাংকক থেকে আগত যাত্রী সিরাজুল ইসলামের দেহ তল্লাশি করে এগুলো জব্দ করা হয়। ওই যাত্রী ব্যাংকক এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে মালয়েশিয়া থেকে ব্যাংকক হয়ে শাহজালালে অবতরণ করেন। জব্দকৃত স্বর্ণের আনুমানিক মূল্য প্রায় চার কোটি ৬০ লাখ টাকা।
৩৮ লাখ টাকার সিগারেট
গতকাল বৃহস্পতিবার হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর ও চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে জব্দ করা হয়েছে ৩৮ লাখ টাকার সিগারেট।