শিক্ষামন্ত্রীর কারণে বিভক্ত বিয়ানীবাজার আ.লীগ ও অঙ্গসংগঠন
অভিযোগ রয়েছে, মূলধারার কেউ তার কাছে ভিড়তে পারেন না। এ সুযোগে কতিপয় সুবিধাভোগী দালাল প্রকৃতির লোক মন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে ফায়দা লুটছে। তাদের দাপটে অনেকটা বেকায়দায় ও অসহায় ত্যাগী নেতাকর্মীরা। এ অবস্থায় অনেকটা অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছেন দুটি উপজেলার আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ নিয়ে দলের অভ্যন্তরে ক্ষোভের শেষ নেই। মন্ত্রীর ব্যবহারে ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা বহুধা ভাগে বিভক্ত হয়ে ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপে সক্রিয়। এমন কোন্দল, গ্রুপিংয়ের সর্বশেষ বলি ছাত্রলীগ কর্মী খালেদ আহমদ লিটু। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের ভরাডুবির পাশাপাশি প্রতিপক্ষের বিজয় প্রত্যক্ষ করতে হয়েছে দুই উপজেলার আওয়ামী লীগ নেতাদের।
প্রকাশ্যে এসব থেকে দূরে থাকলেও মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদই আড়ালে গ্রুপিং, কোন্দলের পেছনে ইন্ধন দিয়ে চলেছেন বলে এলাকার অনেকেরই দাবি। এসব বিষয় নিয়ে নেতাকর্মীরা অনেকটা মন্ত্রী ও তার অনুসারীদের কাছে অসহায়। আড়ালে অনেক কিছু বললেও প্রকাশ্যে মুখ খুলে অভিযোগ করার সাহস নেই তাদের। মন্ত্রীবিরোধী বলয়ে অবস্থান নেয়ায় আওয়ামী লীগ নেতা জাকির হোসেনের বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে দু’দফা হামলা ও ছাত্রলীগ নেতা পাভেলের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে মন্ত্রী বলয়ের লোকজন। এমন একটি দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীরা দিন পার করছেন। তাদের বক্তব্য, নেতাকর্মীরা অনেক ত্যাগ স্বীকার করে নুরুল ইসলাম নাহিদকে তিনবার বিজয়ী করেছেন। কিন্তু এসব নেতাকর্মীর মূল্যায়ন নেই তার কাছে। আগামী নির্বাচনে তিনি এর ফল পাবেন। কারণ দলের অনেকেই তার হয়ে আর কাজ করবেন না।
এ ব্যাপারে জানতে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের মোবাইল ফোনে বারবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি। মন্ত্রীর ওই নম্বরে কয়েকবার ক্ষুদেবার্তা পাঠানো হয়েছে, কিন্তু তিনি উত্তর দেননি।
বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আবুল কাশেম পল্লব অভিযোগ করেন, ‘উপজেলায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের রাজনীতির আজকের পরিস্থিতির জন্য একজনই দায়ী। আর তিনি হলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তার কারণেই কোনো সংগঠনেরই কমিটি হয়নি। ফলে সাংগঠনিক তৎপরতা ক্রমেই নিঃশেষ হওয়ার পথে। এ অবস্থায় তার অনুসারী কিছু লোক দলের যার যার মতো গ্রুপ তৈরি করে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে। ফলে হামলা, খুনের মতো ঘটনাও ঘটছে।
তিনি বলেন, মন্ত্রী তার এলাকায় যদি সংগঠনের ব্যাপারে আন্তরিক না হন এবং কমিটি গঠনের বাধা হয়ে দাঁড়ান, সেখানে সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে নানা অঘটন ঘটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া ওয়ান-ইলেভেনের সময় মন্ত্রী খোদ প্রধানমন্ত্রী ও দল সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছিলেন, সেসব কথার পর অনেকেই এখনও মন্ত্রীকে আপন করে নিতে পারছেন না।’
বিয়ানীবাজার উপজেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও লাউতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গৌছ উদ্দিন বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ দলে এসে এমপি, মন্ত্রী ও কেন্দ্রের প্রেসিডিয়ামের মতো দায়িত্বশীল পদ পেয়েছেন। কিন্তু এলাকায় দলের প্রতি উদাসীন তিনি। তিনি দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে চলেন না। চলেন কিছু সুযোগসন্ধানী নিয়ে। তারাই এখন এলাকায় মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সর্বেসর্বা। তিনি নেতাকর্মীদের কাছে না নিয়ে বিতর্কিত কিছু লোককে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের সুবিধা দিতে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের দূরে সরিয়ে রাখছেন। কোনো কমিটি দেয়া হচ্ছে না। যিনি অভিভাবক তিনিই যদি না চান সংগঠনের কমিটি হোক, নেতৃত্ব আসুক, নিজের সংগঠন শক্তিশালী হোক- তাহলে আর কে চাইবে?’
জানা গেছে, বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ বহুধা বিভক্ত। মন্ত্রী কোনো গ্রুপিংয়ে নেই বলে দাবি করলেও তিনিই নেপথ্যে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে চলেছেন বিভিন্ন গ্রুপকে। ফলে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ার সাহস পান মন্ত্রীর অনুসারী গ্রুপগুলোর নেতাকর্মীরা।
বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি মেয়াদ পার করে এখন প্রায় ১৩ বছরে। দৃশ্যমান না হলেও এখানে আওয়ামী লীগ দ্বিধাবিভক্ত। এর মধ্যে মন্ত্রীর অনুসারী বলয়ের নেতৃত্ব দেন পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও নবনির্বাচিত পৌর মেয়র আবদুস শুকুর। বিরোধী বলয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ময়নুল ইসলাম ও সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন। এ ব্যাপারে জানতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা অনেক কথাই বলেন। তবে সব কথাই অফ দ্য রেকর্ডে। আড়ালে অনেক মনোকষ্টের কথা বললেও প্রকাশ্যে বলতে পারেন না। একই অবস্থা তাদের অনুসারী যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের অনুসারী নেতাদের। তাদের অভিযোগ, মন্ত্রী ও তার বলয়ের প্রভাবের কাছে ত্যাগী নেতাকর্মীরা অনেকটা অসহায়। কাছে ভিড়তে চাইলেও মন্ত্রীর অনুসারীরা বাধা হয়ে দাঁড়ান। প্রশাসনও চলে মন্ত্রীর অনুসারীদের কথায়।
বলা চলে বিয়ানীবাজারে যুবলীগ এখন প্যাডসর্বস্ব। ১৫ বছর ধরে সংগঠন চালাচ্ছেন তিন নেতা। এর মধ্যে আহ্বায়ক আবদুল কুদ্দুস টিটু প্রায় ১০ বছর ধরে বিদেশে। তিনি দীর্ঘদিন মন্ত্রী নাহিদের অনুসারী হিসেবে কাজ করে গেলেও এখন মন্ত্রীর বিরাগভাজন। টিটুর অনুসারীরা বলছেন, পৌরসভা মেয়রের পদে নির্বাচন করতে না পেরে তিনি ফের বিদেশে চলে গেছেন। আলমগীর হোসেন রুনুর নেতৃত্বে আরেকটি বলয় মন্ত্রীর সঙ্গে রয়েছে।
আর এই উপজেলায় ছাত্রলীগ ছয় গ্রুপে বিভক্ত। এর মধ্যে চারটি গ্রুপই চলে শিক্ষামন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে। অপর দুটি গ্রুপের নেপথ্যে রয়েছেন কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সরওয়ার হোসেন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন। সোমবার বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজে এই গ্রুপিংয়েরই বলি হন খালেদ আহমদ লিটু। অতীতেও উপজেলা ছাত্রলীগ দুটি বলয়ে বিভক্ত ছিল। বলয় দুটি হচ্ছে রিভারবেল্ট ও প্রপার গ্রুপ। ২০০৩ সালে ছাত্রলীগ প্রপার গ্রুপ ভেঙে ছাত্রলীগ পল্লব গ্রুপের আবির্ভাব ঘটে। গত ছয় বছরে প্রপার গ্রুপের অবশিষ্টাংশ থেকে ছাত্রলীগ জামাল গ্রুপ, পাভেল গ্রুপ এবং স্বাধীন গ্রুপ আত্মপ্রকাশ করে। তবে উপজেলা ছাত্রলীগের অপর অংশ রিভারবেল্ট এখনও অক্ষত রয়েছে।
গত পাঁচ বছর থেকে ছাত্রলীগ প্রপার গ্রুপ নাম পাল্টিয়ে মূলধারা গ্রুপ হিসেবে কার্যক্রম চালাচ্ছে। এ গ্রুপের নেপথ্যে রয়েছেন পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবাদ আহমদ ও উপজেলা যুবলীগ নেতা আতিক উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা। ছাত্রলীগ রিভারবেল্ট গ্রুপের নেপথ্যে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা চেয়ারম্যান সিহাব উদ্দিন ও শিক্ষামন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য অ্যাডভোকেট আব্বাছ উদ্দিন। ছাত্রলীগ জামাল গ্রুপের নেপথ্যে রয়েছেন শিক্ষামন্ত্রীর এপিএস ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক মাকসুদুল ইসলাম আউয়াল। পাভেল গ্রুপের নেপথ্যে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন ও তার ভাই সাবেক পৌর প্রশাসক তফজ্জুল হোসেন। ছাত্রলীগ পল্লব গ্রুপের নেপথ্যে রয়েছেন কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সরওয়ার হোসেন। আর স্বাধীন গ্রুপের নেপথ্যে রয়েছেন উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আবদুল কুদ্দুছ টিটু।
বিয়ানীবাজার স্বেচ্ছাসেবক লীগেও ফাটল। আবুল কাশেম পল্লব কেন্দ্র অনুমোদিত কমিটির সভাপতি হলেও তাকে চ্যালেঞ্জ করে মাঠে তৎপর মন্ত্রী অনুসারী বিলাল আহমদ। ফলে দায়িত্বশীল হওয়া সত্ত্বেও পদে পদে বিড়ম্বনার শিকার পল্লব। তৃণমূল নেতাদের অভিযোগ, পৌরসভার বর্তমান মেয়র আবদুস শুকুর, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবাদ আহমদ, এপিএস পরিচয়ে দেওয়ান মাকসুদুল ইসলাম আউয়াল ও আব্বাস উদ্দিন মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজন পরিচয়ে বিভিন্ন সরকারি বরাদ্দও তাদের খেয়ালখুশিমতো বণ্টন করেন।
চারটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি: কোন্দলের দাবানলে পুড়ছে গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ। উপজেলা সদর থেকে ইউনিয়ন ওয়ার্ড পর্যন্ত নেতাকর্মীরা কয়েক ভাগে বিভক্ত। একসময়ের আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত স্থানীয় আওয়ামী লীগ এখন অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জর্জরিত। আর এ কোন্দলের প্রভাব পড়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে। এখন গোলাপগঞ্জ জেলা পরিষদের সদস্য বিএনপির। উপজেলা চেয়ারম্যান জামায়াতের। পৌর মেয়র হয়েছেন দলের বিদ্রোহী প্রার্থী। ১১টি ইউনিয়নের নির্বাচনে ৯টিতেই ভরাডুবি হয়েছে নৌকার। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের এমন ফলাফল শিক্ষামন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকা গোলাপগঞ্জে আওয়ামী লীগের জনবিচ্ছিন্নতার প্রতিচ্ছবি হিসেবে দেখছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। এ জন্য তারা দায়ী করছেন শিক্ষামন্ত্রীকে।
গোলাপগঞ্জ আওয়ামী লীগের একটি গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। আরেকটি গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইকবাল আহমদ চৌধুরী। গত উপজেলা নির্বাচনে প্রতিপক্ষের বিরোধিতার কারণে তিনি অল্প ভোটে পরাজিত হন। অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষামন্ত্রীর অনুসারীদের সমর্থন নিয়ে ওই নির্বাচনে বিজয়ী হন জামায়াতের প্রার্থী। দলীয় প্রার্থীর পরাজয়ের পর ইকবাল অনুসারী দলের দীর্ঘদিনের ত্যাগী নেতাকর্মীদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হলেও শিক্ষামন্ত্রীর গ্রুপ শক্তিশালী হওয়ায় ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চান না। দ্বন্দ্বের কারণে এ উপজেলায় আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটিও নেই এক যুগ ধরে। একাদশ সংসদ নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন দলের মূলধারার নেতারা।
জানা গেছে, উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয় ২০০৮ সালে। সম্মেলনে প্রবীণ রাজনীতিবিদ অ্যাডভোকেট ইকবাল আহমদ চৌধুরী সভাপতি ও রফিক আহমদ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এ কমিটি গঠনের পর ৯ বছর অতিবাহিত হলেও নতুন কোনো কমিটি হয়নি। একাধিকবার সম্মেলনের উদ্যোগ নিলেও শিক্ষামন্ত্রীর অনুসারী ও তার বিরোধী গ্রুপের দ্বন্দ্বের কারণে সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি। ফলে ৬ বছর থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে চলছে উপজেলা আওয়ামী লীগ। শুধু আওয়ামী লীগই নয়, সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের অবস্থা একই। এ সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও নতুন কমিটি হচ্ছে না।
উপজেলা থেকে ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়ে দলের একই অবস্থা। বারবার চেষ্টার পর নতুন কমিটি না হওয়ায় দলের ত্যাগী অনেক নেতা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। আগের মতো এখন আর তাদের কোনো দলীয় কার্যক্রম চোখে পড়ে না। এই উপজেলায় দ্বন্দ্ব ও কোন্দলের মূল কারণই হচ্ছে দলীয় প্রভাব বিস্তার। গেল সংসদ, উপজেলা, পৌর ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এ চিত্র ফুটে ওঠে। ২০১৪ সালে উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ইকবাল আহমদ চৌধুরী। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হন জেলা আওয়ামী লীগ নেতা হুমায়ূন ইসলাম কামাল। তাদের বিভক্তির কারণে নির্বাচনে বিজয়ী হন জামায়াত প্রার্থী হাফিজ নজমুল ইসলাম। গত পৌর নির্বাচনে সরাসরি দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে উপজেলা আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠন। নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীকে হারিয়ে বিজয়ী হন বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সিরাজুল জব্বার চৌধুরী। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী ছিল। নির্বাচনে ১১ ইউনিয়নের মধ্যে ৯টিতেই নৌকার ভরাডুবি হয়। দলের এ ভরাডুবির জন্য দায়ী করা হচ্ছে দলীয় কোন্দলকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী জানান, এ দ্বন্দ্বের মূল কারণ হল ব্যক্তিস্বার্থ। এ উপজেলায় শিক্ষামন্ত্রীর গ্রুপ শক্তিশালী হওয়ার কারণে তাদের প্রতিপক্ষ ভয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। মন্ত্রী তার বলয়ের লোকজনের মাধ্যমে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করলেও অন্যদের পাত্তাই দিচ্ছেন না। ফলে ক্ষোভের দাবানলের বিস্ফোরণ ঘটতে পারে আগামী নির্বাচনে। তারা জানান, সুযোগ এলে এর জবাব দেয়া হবে।
সূত্র: যুগান্তর