সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার (সিকৃবি) মো. বদরুল ইসলাম শোয়েব বলেছেন, আমরা এখনো শিক্ষাক্ষেত্রে পরাজিত হয়ে আছি। বার বার ওই ক্ষেত্রকে পরাজিত করা হচ্ছে। শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নয়ন না হলে কোনভাবেই এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। আর বিজ্ঞান মনষ্ক জাতি গড়ে তুলতে হলে আগে শিক্ষিত হতে হবে। যে জাতি যত শিক্ষিত তারাই কিন্তু বিজ্ঞান মনষ্ক। বক্তারা বলেন আমাদের দেশে অনেক প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। যে গুলো কাজে লাগানো যায় সঠিক বিজ্ঞান চর্চার মাধ্যমে। বিজ্ঞানের উন্নয়ন হলে দেশ এগিয়ে যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। গতকাল শনিবার সিলেট সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে বিএফএফ-সমকাল ৫ ম জাতীয় স্কুল বিজ্ঞান বিতর্ক প্রতিযোগিতার সিলেট অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথাগুলো বলেন। বিতর্কে অংশ নেয় সিলেট সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় স্কুল এন্ড কলেজ, ব্রাম্মণবাড়িয়ার অন্ন দা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, মৌলভীবাজারের দি ফ্লাওয়ার্স কেজি এন্ড হাইস্কুল ও হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়।
বক্তারা বলেন, দেশের মোট জনসংখ্যার বিশাল অংশ তরুণ। দেশের কিছু তরুণকে বিপথগামী করছে কিছু ধর্মান্ধগোষ্টি। তারাই বেছে নিচ্ছে জঙ্গীবাদের পথ। তারপরও আশার কথা ভবিষ্যৎ তরুণরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এজন্য তাদেরকে বিজ্ঞানমনস্ক করে গড়ে তুলতে হবে। বক্তারা বলেন, বিজ্ঞানের উদ্দেশ্য বিতর্কের মধ্যে দিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া। আর যারা জীবনে বিতর্ক ভালবেসেছে তাদের এগিয়ে যাওয়ার সংখ্যা বেশী। আর যেখানে যুক্তি বেশী সেখানে যুক্তির কাছে সংঘাত পরাজিত। এ কারনে নতুন, নতুন উদ্ভাবনের প্রতি গুরুত্বারোপ করে বক্তারা বলেন, দেশের সার্বিক উন্নতির জন্য শহরের পাশাপাশি গ্রামের শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান মনস্ক করে গড়ে তুলতে হবে।
ঘড়ির কাটায় ঠিক সকাল ৯ টায় শুরু হয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা। প্রথম রাউন্ড, দ্বিতীয় রাউন্ড সেমি ফাইনাল শেষে ফাইনালে মুখোমুখী হয় সিলেট সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও ব্রাম্মণবাড়িয়ার অন্ন দা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। ফাইনালে বিতর্কের বিষয় ছিল ‘বিজ্ঞান মনষ্কতাই পারে তরুণ প্রজন্মকে জঙ্গিবাদ থেকে দূরে রাখতে’। বিতর্কের পক্ষে ছিল অন্ন দা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এবং বিপক্ষে ছিল সিলেট সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজ। পক্ষ দলের পয়েন্ট ছিল ৩৯১ দশমিক ৫ আর বিপক্ষ দলের পয়েন্ট ছিল ৪১২। বিচারকরা বিপক্ষ দলকে বিজয়ী ঘোষনা করেন। শ্রেষ্ট বক্তা নির্বাচিত হয় অগ্রগামীর সুপ্রভা সুবহা জামান।
সকাল থেকে শুরু হওয়া বিতর্কে কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। সবাই যেন যুক্তি নিয়ে প্রস্তুত। একে অপরকে যুক্তি দিয়ে কোনঠাসা করতে আপ্রাণ চেষ্ঠা চালায় দিনভর। সবশেষে দুটি বিদ্যালয়কে পেছনে ফেলে ফাইনালে উঠে সিলেট সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং অন্ন দা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। পক্ষে বিপক্ষে একে অপরকে সব ধরনের যুক্তি দিয়ে ঘায়েল করার চেষ্ঠা চালায় দুই দলেরই বিতার্কিকরা। সবশেষে বিজয়ের হাসি হাসে অগ্রগামীর শিক্ষার্থীরা। গেলবারের ন্যায় এবারও চ্যাম্পিয়ন হয় অগ্রগামী।
সমকাল সিলেট ব্যুরো প্রধান চয়ন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও স্টাফ রিপোর্টার ফয়সল আহমদ বাবলুর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার মো. বদরুল ইসলাম শোয়েব। বিশেষ অতিথি ছিলেন সিলেট সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক বাবলী পুরকায়স্থ, সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. কবীর খান, বসুন্ধরা টিস্যু এন্ড এফোর পেপার এন্ড হাইজিন প্রোডাক্টের সেলস ম্যানেজার মো. আব্দুল মান্নান। শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য দেন সমকাল সুহৃদ সমাবেশ সিলেট জেলা শাখার আহবায়ক সুব্রত বসু।
প্রতিযোগিতায় বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য মোকাদ্দেস বাবুল, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় (শাবি) ডিবেটিং সোসাইটির সাবেক সভাপতি তাসলিমা আক্তার ও একই প্রতিষ্ঠানের ইংরেজী বিতর্ক বিভাগের সভাপতি জান্নাতুল তাজরীন। এসময় উপস্থিত ছিলেন সমকালের স্টাফ ফটো সাংবাদিক ইউসুফ আলী, সুহৃদ সুজিত দাস, সজিব চৌধুরী, আব্দুল আলীম, সাবের হোসেন রানা, সাব্বির আহমদ। সিলেট অঞ্চল পর্বের ফাইনাল শেষে অতিথিরা চ্যাম্পিয়ন, রানার্সআপ ও অংশগ্রহণকারী দলের বিতার্কিকদের মধ্যে ক্রেস্ট ও অন্যান্য পুরস্কার তুলে দেন। এ পর্বে বিজয়ীরা ঢাকায় জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn