শিশুরা ভয়ে বঙ্গবন্ধুর আঁকা ছবি লুকাতে শুরু করেছে
সেজুল হোসেন-
সারাদেশে সরকারের ব্রাঞ্চ আছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সেরকম একটি ব্রাঞ্চ। তৃণমুলে সরকারের এই ব্রাঞ্চে সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। যেহেতু ভিলেজ পলিটিক্স একটি ভয়াবহ ব্যাধি, যেহেতু তৃণমূলে শিক্ষার হার কম, যেহেতু তৃণমূলে জমিজিরাতসহ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে বৃহৎ হানাহানি হয়, যেহেতু তৃণমূলের নেতা-পাতি নেতাদের দৌরাত্ব থাকে বেশি ও ভয়াবহ, সেহেতু একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জেলা প্রশাসকের নির্দেশ মেনে, স্থানীয় এমপির মন রক্ষাসহ অনেক সাবধানতা, অনেক সতর্কতা নিয়ে চলতে হয়। মানতে হয় সরকারি আদেশ নিষেধ ও যাবতীয় নির্দেশনা। সরকারের প্রতিনিধি হয়ে তাকে এই কাজ করতে গিয়ে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। ঈদে গ্রামে যেতে পারেন না, অসুস্থ হলে শুয়ে শুয়েও অফিস করতে শুনেছি, দেখেছি আমার নিজ উপজেলাতেও।
বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে এসিল্যান্ড, ইউএনও পদে পদোন্নতি পেয়ে বেশ কিছু ভালো, সৎ, শিল্পমনা, কবি বিভিন্ন উপজেলায় দায়িত্ব পালন করছেন। অনেকের সঙ্গেই ব্যক্তিগত আলাপ আছে। তারা অনেকটা নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করে তৃণমূলের ওইসব অপদার্থ আওয়ামী নামধারীদের সঙ্গে আপোষ করে দায়িত্ব পালন করছেন।
গাজী তারেক সালমান। ইউএনও। কবি। মাত্র আটমাস আগৈলঝাড়ায় কাজ করেছেন। সেখানে তিনি প্রভাবশালী মহলের অনেক অপকর্মের বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। কোনও ঠিকাদার বা জনপ্রতিনিধির অন্যায়কে মেনে নেননি। তার ভাষ্যমতে- ‘কাজ ঠিকমতো না হওয়ায় দুই কিস্তির টাকা দিয়ে বাকি টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছি।’ সেই লোকগুলা বঙ্গবন্ধুর প্রতি প্রেম দেখানোর নামে নিজেদের প্রতিহিংসার বাস্তবায়ন ঘটালো। মামলা করলো। অ্যারেস্ট করালো। আশ্চর্য হই তাদের ক্ষমতা দেখে! আর ভেবে পাইনা একটা জেলায় জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ সরকারের এতো সিনিয়র কর্মকর্তার চোখের সামনে একজন ইউএনওকে কনস্টেবল অনেকটা জঙ্গি পাকড়াও করার মতো ধরে নিয়ে যায়। আশ্চর্য লাগে- মামলাটি যিনি আমলে নিলেন তার বিচার বুদ্ধি ও কান্ডজ্ঞান নিয়ে। এ কেমন ম্যাজিস্ট্রেট!
শুনেছি এই ঘটনার পর দেশের অনেক শিশুরা ভয়ে বঙ্গবন্ধুর আঁকা ছবি লুকাতে শুরু করেছে। বুঝতে পারছেন কি ভয়াবহ বার্তা রেখে গেল এই ঘটনা? প্রধানমন্ত্রী ক্ষুব্ধ হয়েছেন। শুধু ক্ষুব্ধতায় কাজ হবে না। অ্যাকশন চাই। ওই স্টুপিড আওয়ামী লীগারের বিরুদ্ধে অ্যাকশন। ডিসি, এসপি, ওসি, ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে অ্যাকশন। আর পুরষ্কৃত করতে হবে সেই শিশুকে ও ইউএনওকে। পুরুষ্কার প্রদানের ছবি লাইভ সম্প্রচার হোক। তা না হলে শিশুদের ভয় কাটবে না সহজে, আওয়ামী লীগের ভিতর থেকে শনির আছর কাটবে না সহজে, অ্যাডমিনেস্ট্রেশন থেকে শনির আছর কাটবে না সহজে।
( বরিশালের চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে প্রায় ৯৪ হাজার টাকা সার্কিট হাউজে থাকা বাবত বকেয়া পাওনা জেলা প্রশাসনের। বকেয়া পরিশোধের জন্য বারবার চিঠি দিয়েছে প্রশাসন। সর্বশেষ চিঠির কপি একটু আগে পেয়েছি বিশ্বস্থ সূত্রে। ভাবনার বিষয় হলো, এই ম্যাজিস্ট্রেটই বরিশাল জেলা প্রশাসনের আওতাধীন এই ইউএনওকে জেলে পাঠিয়েছেন। শুধু কি আওয়ামী লীগ নেতার মামলা? নাকি ম্যাজিস্ট্রেটের ব্যক্তিগত ক্ষোভ, সেটাও বিবেচ্য!!! আবার নতুন তথ্য জানা গেলো- তারিক সালমানের প্রতি অবিচার শুধু ম্যাজিস্ট্রেট করেন নি, বহিষ্কৃত নেতার সুর ধরে নিজের অধীনস্থ কর্মকর্তার প্রতি অবিচার করেছিলেন খোদ জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার। ছবি পছন্দ না হওয়ায় তিনি কারণ দর্শানোর নোটিশ করেছিলেন।