জাতীয় শোক দিবসেও এক হতে পারলো না দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগ। স্থানীয় প্রয়াত সংসদ সদস্য বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের মৃত্যুর কিছুদিন পর থেকেই দিরাই আওয়ামী লীগের হযবরল অবস্থা। গত ১১ মাসের মধ্যে ১ বারও এলাকায় আসেননি স্থানীয় সংসদ সদস্য। এ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন একাধিক ত্যাগী আওয়ামী লীগ কর্মী। দলীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায় সমর্থকরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি এডভোকেট সোহেল আহমদ, সহ সভাপতি সিরাজদৌলা, সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায়, দিরাই পৌরসভার মেয়র বিশ্বজিৎ রায়ের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে উপজেলা রোডের দলীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভা করেন। এ সময় দলটির সহযোগী সংগঠনের তাদের বলয়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
অপর দিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, দিরাই পৌরসভার সাবেক মেয়র মোশাররফ মিয়া, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলম চৌধুরী, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রঞ্জন রায় ও উপজেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মোহন চৌধুরীর নেতৃত্বে মোশাররফ বলয়ের নেতাকর্মী বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দিরাই বাজার লঞ্চঘাট রোডস্থ দলের অস্থায়ী কার্যালয়ে দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভা করেন। এ সময় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের মোশাররফ বলয়ের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
দলের এ হযবরল অবস্থায় হতাশায় পড়েছেন কর্মীরা।
একাধিক নেতাকর্মী বলেন, আমাদের নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের জীবদ্দশায় কোনো গ্রুপিং ছিল না। সে সময় দলের নেতৃত্ব দিতেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্নেহধন্য উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, দিরাই পৌরসভার সাবেক মেয়র মোশাররফ মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায়। সুরঞ্জিত বিরোধী হিসেবে পরিচিত উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আলতাব উদ্দিন বলয় মাঝেমাঝে জানান দিলেও বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বলয়ের সাথে পাল্লা দিয়ে রাজনীতির মাঠে ঠিকে থাকতে পারেননি তারা। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত তার জীবদ্দশায় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে সম্মেলনের মাধ্যমে আছাব উদ্দিন সরদার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায়, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ মিয়া কে নির্বাচিত করে নিজ বলয়ের লোকদের দিয়ে কমিটি গঠন করলে অনেকটা বেকায়দায় পড়ে যান আলতাব উদ্দিন অনুসারীরা। দলের হরতাকর্তা হয়ে যান মোশাররফ-প্রদীপ। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুর পরও দলে তাদের ছিল একক আধিপত্য। গত উপজেলা নির্বাচনে প্রদীপ রায় কে দলীয় প্রার্থী করা ও পরাজয় থেকেই সুরঞ্জিত বলয়ে শুরু হয়েছে মতবিরোধ। দলীয় প্রার্থী পরাজয়ের জন্য প্রদীপ বলয় মোশাররফ মিয়া, সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান তালুকদার, এডভোকেট অভিরাম তালুকদার সহ মোশাররফ বলয় কে দায়ী করেন। দিন দিন বিরোধ চরম আকার ধারন করছে।
তারা ক্ষোভের সাথে আরও জানান, দলীয় নিয়ম অনুযায়ী সভাপতি-সম্পাদক অথবা তাদের অনুপস্থিতিতে সহ সভাপতি-যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক সভা আহ্বান করার কথা থাকলেও গত বৃহস্পতিবার শোক দিবসের প্রস্তুতি সভা ডাকলেন সাংগঠনিক সম্পাদক অভিরাম তালুকদার। সভাপতির অনুপস্থিতিতে সিনিয়র সহ সভাপতি সভায় সভাপতিত্ব করার নিয়ম থাকলেও সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায় সভাপতি নির্ধারন না করেই নিজে পরিচালনা করে সভা শেষ করে দেন। অথচ সিনিয়র সহসভাপতি এডভোকেট সোহেল আহমদ, সহসভাপতি সিরাজ দৌলা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের জীবদ্দশায় আলতাব উদ্দিন ও তার অনুসারীরা রাজনীতির মাঠে না থাকলেও মোশাররফ-প্রদীপ বিরোধকে পূঁজি করে তারা এখন খাঁটি সুরঞ্জিত প্রেমিক। তারা এখন প্রদীপ বলয়ের হরতাকর্তা। এটা অধিকাংশ সুরঞ্জিত ভক্তরা ভালো চোঁখে দেখছেন না।
কয়েকদিন আগে প্রদীপ বলয়ের নেতাকর্মীরা জানে আলম নামের মোশাররফ বলয়ের এক ছাত্রলীগ কর্মীর উপর হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করেস। এ ঘটনায় সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদ সদস্য নাজমুল হক কে প্রধান আসামি করে মামলা হলে প্রদীপ বলয়ের ছাত্রলীগ কর্মী সোহেল মিয়া কে পুলিশ গ্রেপ্তার করে সে বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছেন।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
১৩৫ বার