শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে ২ রানে হারল বাংলাদেশ
দলের প্রয়োজনে আবারও দেখা দিলেন ব্যাটসম্যান মাশরাফি বিন মুর্তাজা। তার ভয়াবহ ব্যাটিং তাণ্ডবে কিছুক্ষণের জন্য হলেও দুরমুশ হয়ে গেল শ্রীলঙ্কান প্রেসিডেন্ট একাদশ। মাশরাফি যখন আউট হলেন; একাই দলকে জেতানোর চেষ্টা করলেন রিয়াদ। কিন্তু পারলেন না। বাংলাদেশ হেরে গেল ২ রানে। রিয়াদ ৭১ রান করে অপরাজিত থাকলেন। বোলিংটা ভালো না হলেও এদিন ব্যাটিং প্র্যাকটিসটা মন্দ হয়নি টাইগারদের। সৌম্য, সাব্বির, মোসাদ্দেক, রিয়াদ এবং মাশরাফি রান পেয়েছেন। ম্যাশের ব্যাটিং কিন্তু দলের জন্য ইতিবাচক আবহ তৈরী করল।
এদিকে লঙ্কানদের ৩৫৫ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। তামিম ইকবাল প্রস্ততি ম্যাচে না খেলায় সৌম্য সরকারের সঙ্গী হয়েছেন ইমরুল কায়েস। প্রথম বলেই ইমরুল আউট। এরপর ওয়ান ডাউনে নামা সাব্বির আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে ফিফটি তুলে নিয়েছেন। বাংলাদেশ ইনিংসের ১২তম ওভারে দাসুন শানাকার বলে সিঙ্গেলস নিয়ে ৫০ রান পূর্ণ করেন সাব্বির। ৪৫ বল মোকাবেলায় ৮ চার ও ১ ছক্কায় ফিফটি তোলে নেন তিনি।
সাব্বিরের পর সৌম্য সরকারের কাছ থেকে ফিফটির প্রত্যাশায় ছিল বাংলাদেশি সমর্থকরা। কিন্তু ফিফটির আগে ৩ রানের আক্ষেপ নিয়ে ফিরতে হয়েছে তাকে। সিরিবর্ধানার বলে শানাকার হাতে তালুবন্দি হলে সৌম্যের ৪৭ রানের ইনিংসে ছেদ পড়ে। ৪৩ বল মোকাবেলায় তার এ ইনিংসটি ৫ চার ও ২ ছক্কায় সাজানো ছিল। এর পরের ওভারে ডি সিলভার বলে থিসারা পেরেরা হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান সাব্বির রহমান(৭২)।
এরপর মুশফিকুর রহিম মোসাদ্দেক হোসেনের সঙ্গে আরও ২৮ রান যোগ করেন। ১৫২ রানে ব্যক্তিগত ২০ রানে চতুরঙ্গ ডি সিলভার বলে দাসুন সানাকার ক্যাচে পরিণত হন তিনি। ইনিংসের ৩৩ তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ধনঞ্জয়াকে ওভার বাউন্ডারীতে আছড়ে ফেলে ফিফটি পূরণ করেন মোসাদ্দেক। ফিফটি পূরণ করতে ৪৫ টি বল খেলেন মোসাদ্দেক। ব্যক্তিগত ৫৩ রানে ধনঞ্জয়ার বলে মাদুশঙ্কার হাতে ধরা পড়েন মোসাদ্দেক। আর ইনিংসের ৩৭তম ওভারের তৃতীয় বলে ধনঞ্জয়ার বলে এলবিডব্লিউর শিকার হয়ে মাঠ ছাড়েন শুভাগত হোম। ২ রান করে শুভাগত আর ৫ রান করে সানজামুল ফিরে যাওয়ার পর শুরু হয় আসল খেলা।
রিয়াদের সঙ্গী হন ৯ নম্বরে ব্যাট করতে নামা অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। তার ব্যাটিং তাণ্ডবে কলম্বো ক্রিকেট ক্লাব গ্রাউন্ডে ঝড় বয়ে যায়। ২৮ বলে তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি। তাকে থামানো যাচ্ছিল না। জয় থেকে মাত্র ১৫ রান দূরে থাকতে ৩৫ বলে ৪ বাউন্ডারি এবং ৪টি ওভার বাউন্ডারিতে ৫৮ রান করে আউট হন মাশরাফি। একা হয়ে যান রিয়াদ। ১ বলে দরকার ছিল ৪ রানের। একটি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে শেষ পর্যন্ত তিনি দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যেতে পারেননি। তিনি নিজে ৬৮ বলে ৪ বাউন্ডারি আর ১টি ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে ৭১ রানে অপরাজিত থাকেন। ৩৫২ রানেই শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস।
এর আগে টসে হেরে লঙ্কান ব্যাটসম্যানদের দৃঢ়টায় নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ৩৫৪ রান সংগ্রহ করেছে প্রেসিডেন্ট একাদশ। স্বাগতিকদের প্রথম উইকেট তুলে নেন পেসার তাসকিন আহমেদ। তিনি মুনারাবিরাকে এলবিডাব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন। আউট ফেরার আগে ২১ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ২৪ রান করেন মুনাবীরা। এরপর ১১৪ রানের জুটিতে এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা। এরপর বিরাককোডিকেও ৬৭ রানে ফিরিয়ে দেন রুবেল হোসেন।
এরপর ২৩তম ওভারে প্রথমবারের মতো বোলিংয়ে এসে উইকেটের স্বাদ পান সাইফউদ্দিন। তবে দ্বিতীয় উইকেটে বিরাকোডিকে সঙ্গে নিয়ে শতরানের জুটি গড়েন কুশল পেরেরা। দলকে নিয়ে যাচ্ছিলেন বড় সংগ্রহের দিকে। অবশেষে বোলিংয়ে এসে জুটি ভাঙলেন সাইফউদ্দিন। অর্ধশত করা বিরাকোডিকে রুবেল হোসেনের তালুবন্দি করে সাজঘরে ফেরান টাইগার এই তারকা। আউট হওয়ার আগে তার বাট থেকে আসে ৬৭ রান।
বিরাকোডির বিদায়ের পর ব্যক্তিগত ৬৪ রান করে স্বেচ্ছায় অবসরে যান পেরেরা। এরপর সিরিবর্ধনকে সাজঘরে ফেরান সানজামুল। আউট হওয়ার আগে ৩২ রান আসে এই ব্যাটসম্যানের ব্যাট থেকে। শেষ দিকে ধনঞ্জয় ডি সিলভা ও পেরেরা দ্রুত রান তুললে প্রেসিডেন্ট একাদশ ৩৫৪ রানের সংগ্রহ পায় স্বাগতিকরা।
কলম্বো ক্রিকেট ক্লাব মাঠে অনুষ্ঠিতব্য এই প্রস্তুতি ম্যাচটিতে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ দলের চার তারকা তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মোস্তাফিজুর রহমান এবং শুভাশিস রায়কে।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ১-১ সমতায় শেষ হলেও ওয়ানডে সিরিজ জয়ে আশাবাদী বাংলাদেশ। সেই লক্ষ্যে মূল লড়াইয়ের আগে প্রস্তুতি সারছেন মুশফিক-সৌম্যরা।
প্রস্তুতি স্কোয়াড (বাংলাদেশ):
মাশরাফি বিন মুর্তজা (অধিনায়ক), সৌম্য সরকার, ইমরুল কায়েস, মুশফিকুর রহিম, সাব্বির রহমান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, রুবেল হোসেন, তাসকিন আহমেদ, সানজামুল ইসলাম, শুভাগত হোম, নুরুল হাসান সোহান, আবুল হাসান রাজু এবং মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন।
প্রস্তুতি স্কোয়াড (শ্রীলঙ্কা):
মিলিন্দা শ্রীবর্ধনে (অধিনায়ক), কুশাল জানিথ পেরেরা, দিলশান মুনবেরা, সান্দুন রেকাকোডি, ধনঞ্জয় ডি সিলভা, চতুরঙ্গ ডি সিলভা, থিসারা পেরেরা, লাহিরু মাদুসাঙ্কা, দাসুন সানাকা, আকিলা ধনঞ্জয়া ও সাচিথ পাথিরানা।