সংবাদের পরবর্তী শিরোনাম আমি নই তো?
পিংকি আক্তার :
হাতুম দাদু গাড়ি চড়ে না যদি চাকা উল্টে যায়, রাস্তায় হাটে না যদি কুকুর কামড়ে দেয়, এমনকি সাপে দংশনের ভয়ে পুকুরে গোসল করে না। ছোট বেলায় মায়ের মুখে হাতুম দাদুর এমন গল্পই ছিল হাসির খোরাক। আরে মানুষ এমন ভীতু হয় নাকি, তবে মানুষ এমন ভীতু না হলেও বর্তমান প্রাণের ঢাকার পরিস্থিতিটা যেনো একটু ভীতিকরই বটে। এবারে এশিয়ার সবচেয়ে নিকৃষ্টতম দেশের দ্বিতীয় স্থানে ঠাঁই করে নিয়েছে ঢাকা, আর বিশ্বে ২০৮ তম। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক পরামর্শ সেবাদানকারী সংস্থা মার্সারের করা এইটিনথ কোয়ালিটি অব লাইফ র্যাংকিং শীর্ষক জরিপে এমনটিই উঠে এসেছে। সমীক্ষাটিতে এও বলা হয়েছে গত বছরের তুলনায় ১০ ধাপ পিছিয়েছে ঢাকা।
শুনতে একটু খারাপ লাগলেও নিজ দেশের এ সত্যটুকু শুনতে হচ্ছে বিশ্ববাসীর সামনেই। কথা হলো উন্নয়নের এত বুলি আওড়ানোর পরো কেন ১০ ধাপ পিছিয়ে আমরা! মাথার ওপর যেমন একের পর এক আকাশছোঁয়া উড়াল সড়ক নির্মাণ হচ্ছে, তেমনি সেই সাথে পাল্লা দিয়ে জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে বিলাসবহুল ব্যক্তিগত পরিবহনের সংখ্যাও। যেখানে গণপরিবহন চাই বলে আর্তনাদ করে চলেছে মানুষ, সেখানে দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। আবার পরিবহন খাতে অব্যবস্থপনাও প্রকট। তবে কী করে যানজট সমস্যা নিরসন হতে পারে? “বসন্তে বাতাসে বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি” আসে শাহ্ আবদুল করিমের গানের পঙক্তি শুনে হৃদয় জুড়ালেও বাস্তব প্রেক্ষাপট ভিন্ন। কেননা বাতাস এখন ফুলের গন্ধই বহন করে না ফুলের গন্ধের সাথে পিএম ২.৫ বহন করে, যা কি না মানবদেহের জন্য ভয়ানক ক্ষতিকর।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা হেলথ ইফেক্টস ইনস্টিটিউট এবং ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক অ্যান্ড ইভালুয়েমনের যৌথ উদ্যোগে বৈশ্বিক বায়ু পরিস্থিতি-২০১৭ শীর্ষক প্রতিবেদনে বায়ু দূষণে বাংলাদেশের স্থান দ্বিতীয়। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বায়ু দূষণে বছরে বাংলাদেশে প্রায় এক লাখ ২২ হাজার ৪০০ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। এই দূষণের ফলে গর্ভাবস্থায় শিশুর বিকাশেও মারাত্মক প্রভাব পড়ে যা কি না আগামী প্রজন্মের জন্য হুমকি। তাহলে এত উন্নয়ন দিয়ে কী হবে, যদি সেই উন্নয়নের তরী এগিয়ে নেয়ার কেউ নাই থাকে? কতদিন টিকবে সেই উন্নয়নের ধারা? আসা যাক এবার হর্ন ‘প্রতিযোগিতা’ নিয়ে। চালকদের কাছে হর্ন যেনো বিয়ে বাড়িতে সানাইয়ের মধুর সুর। তা না হলে নিরর্থক হর্ন বাজিয়ে কেন জানান দিতে হবে যে রাস্তায় গাড়ি আছে?
মালিবাগ -মৌচাক ফ্লাইওভারের কাজ আদতে কবে শেষ হয় তা এখন অজানা। বছরের পর বছর প্রকল্প ব্যয় বাড়লেও কাজের অগ্রগতি এখন পর্যন্ত আশানুরুপ নয়। এই কাজের সুফল ভোগ করতে ভুক্তভোগীদের সহ্য করতে হচ্ছে মিনি বন্যাসহ নানান রকমের দুর্ভোগের। শুধু মালিবাগ-মৌচাক মোড়ই নয়, সবুজ উৎখাত করে উঁচু ইমারত তৈরিতে মানা হচ্ছে না নির্মাণ আইন। এর খেসারতেও কেবল জনদুর্ভোগই নয়, দিতে হচ্ছে প্রাণও। প্রতি বছর এসব ইমারত উঠে আর অপমৃত্যু ঘরে অজানা সংখ্যক মানুষের। এইতো সেদিন মালিবাগ উড়ালসড়কের গার্ডার পরে মৃত্যু হয় স্বপন নামের এক জনের। গত বছরেও দুইজন শ্রমিকের প্রাণহানি ঘটে। ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ ছয়টা ঋতু যতই অপরূপে সাজুক না কেন, এ শহরের মানুষের কাছে যেন ছয় রকমের জঞ্জাল। বৃষ্টিতে ভেজা উপভোগ না করলেও কাদাতে ডোবার অভিজ্ঞতা অনেকেরই রয়েছে। ঢাকনা খোলা ম্যানহোলে পড়ে মৃত্যুও বিরল নয়। বাড়ি থেকে বের হলে শত সতর্কবাণী আপন মানুষটির কাছে। সবকিছু হেসে উড়িয়ে দিলেও এমতবস্থায় মনে মনে ভাবতে বাধ্য হই, কোন ম্যানহোল আমার অপেক্ষায় আছে। তবে সংবাদের পরবর্তী শিরোনাম আমি নই তো?