সংসদ নির্বাচন শেখ রেহানা প্রার্থী হচ্ছেন !
সোহেল সানি-
নির্বাচন দেড় বছর বাকি থাকলেও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। এক বছর আগেই নির্বাচন হতে পারে এমন গুঞ্জন থেকে দলটির বর্তমান সংসদ সদস্যদের মতো বঞ্চিত নেতারাও প্রার্থিতার ইঙ্গিত দিয়ে নিজ নিজ এলাকায় মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।
অবশ্য আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিলেও দলটির সংসদীয় বোর্ডের প্রভাবশালী সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, অনানুষ্ঠানিকভাবে এক বছর আগেই দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হবে। এই লক্ষ্য নিয়ে নীরবে প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই অনেক দূর এগিয়েছে।
শোনা যাচ্ছে, নির্বাচনকে সামনে রেখে শিগগিরই ঢেলে সাজানো হবে মন্ত্রিসভা। সরকারি গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিভিন্ন এজেন্সির মাঠ পর্যায়ের সরেজমিন প্রতিবেদনে ইতোমধ্যে বর্তমান সংসদ সদস্যদের অবস্থান উঠে এসেছে। এসব প্রতিবেদনে প্রায় এক তৃতীয়াংশ সংসদ সদস্যের অবস্থা শোচনীয় উল্লেখ করা হয়েছে। সংসদ সদস্যের আসনগুলোতে যোগ্য প্রার্থীদের বিষয়ে সুপারিশ রাখা হয়েছে।
বিভাগীয় পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনগুলো এখন প্রধানমন্ত্রীর হাতে রয়েছে। এর সঙ্গে সর্বশেষ আরেক দফা সমীক্ষার পর সংসদীয় বোর্ড বসবে। ব্যাপক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর প্রার্থীদের একটি খসড়া তালিকা তৈরি করে রাখা হবে। অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থীদের নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় সক্রিয় হওয়ার একটা নির্দেশনাও থাকবে হাইকমান্ড থেকে। সময় মতো সংসদীয় বোর্ড মনোনীত প্রার্থীদের নাম এক যোগে প্রকাশ করবে বলে জানা যায়। বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে ঢাকা বিভাগের ৭০টি সংসদীয় আসনের পর্যবেক্ষণমূলক একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। যে প্রতিবেদনে অন্ততপক্ষে ৫০ আসনেই একাধিক প্রার্থীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আর ২১টি আসনে রয়েছে একক প্রার্থী।
একক প্রার্থীর তালিকায় যাদের নাম রয়েছে
গোপালগঞ্জের তিনটি আসনের মধ্যে গোপালগঞ্জ-২ শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও গোপালগঞ্জ-৩ শেখ হাসিনা। গোপালগঞ্জ-১ আসনে নতুন মুখ হিসেবে নাম রয়েছে শেখ রেহানার। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সাবেক মন্ত্রী কর্নেল ফারুক খান। শেখ রেহানা নির্বাচনে প্রার্থী হলে কর্নেল ফারুক খানকে রাজধানীর একটি আসন থেকে মনোনয়ন দেয়া হবে।
মাদারীপুরের আসনও তিনটি। মাদারীপুর-১ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য নূরে আলম লিটন চৌধুরী ও মাদারীপুর-২ আসনে বর্তমান নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান একক প্রার্থী হলেও মাদারীপুর-৩ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাসিমের সঙ্গে সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের নাম রয়েছে।
শরীয়তপুরের তিনটি আসনেই একাধিক প্রার্থীর নাম উঠে এসেছে। এসব আসনের মনোনয়ন নিয়ে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস মিলছে। শরীয়তপুর- ১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক। এই আসনে কেন্দ্রীয় নেতা ইকবাল হোসেন অপু, দুই উপজেলা চেয়ারম্যান তনাই মোল্লা ও মোবারক আলী শিকদার, সদরের মেয়র রফিকুল ইসলাম কোতোয়াল মনোনয়ন দৌঁড়ে রয়েছেন।
শরীয়তপুর-২ আসনে এক প্রার্থী হিসেবে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীমের মনোনয়ন নিশ্চিত বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সাবেক ডেপুটি স্পিকার কর্নেল (অব.) শওকত আলী।
শরীয়তপুর-৩ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য প্রয়াত জননেতা আব্দুর রাজ্জাকের পুত্র নাহিম রাজ্জাকের মনোনয়ন নিশ্চিত বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
ফরিদপুরের চারটি আসনের মধ্যে সব তিনটিতেই নতুন মুখ দেখা যেতে পারে। ফরিদপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান। ছাত্রলীগের এ সাবেক সাধারণ সম্পাদকের বিপরীতে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন অন্ততপক্ষে পাঁচ জন শক্তিশালী প্রার্থী। এরা হলেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও গ্রামীণ জুয়েলার্সের কর্ণধার ডা. দিলীপ রায়, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত শিকদার, দৈনিক নবচেতনার সম্পাদক প্রকাশক লায়ণ সাখাওয়াৎ হোসেন ও মোশাররফ হোসেন মুসা প্রমুখ।
ফরিদপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য হলেন জাতীয় সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। এই আসনে তার পুত্র আয়মন আকবর চৌধুরীর প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
ফরিদপুর-৩ আসনে এলজিআরডি মন্ত্রী খোন্দকার মোশাররফ হোসেন একক প্রার্থী। ফরিদপুর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহকে হারিয়ে সংসদ সদস্য হন মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন। শেখ হাসিনার নিকট আত্মীয়তার কারণে এবং সম্প্রতি আওয়ামী লীগে যোগ দেয়ার কারণে ধারণা করা হচ্ছে নিক্সন চৌধুরীই মনোনয়ন পাচ্ছেন। তিনি মাদারীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য নূরে আলম লিটন চৌধুরীর ছোট ভাই।
রাজবাড়ী-১ আসনে সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী ও ফকির আব্দুর জব্বারের মধ্যে মনোনয়ন নিয়ে তীব্র লড়াই হবে।
রাজবাড়ী-২ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য জিল্লুল হাকিম একক প্রার্থী।
নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবুর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সাবেক সমাজ কল্যাণ সম্পাদক মমতাজ হোসেন ও ইকবাল পারভেজ প্রার্থী হিসাবে আলোচনায় আছেন।
নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে সংসদ সদস্য গাজী গোলাম দস্তগীর একক প্রার্থী।
নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল কায়সার হাসনাতের দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত বলে জানা গেছে। এই আসনটি গত নির্বাচনে সংকট দেখা দিলে জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়া হয়। জনপ্রিয় তরুণ নেতা কায়সার হাসনাতকে বঞ্চিত হতে হয়।
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য শামীম ওসমান একক প্রার্থী।
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে সাবেক এমপি এস এম আকরামই মনোনয়ন পাচ্ছেন। তবে জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি শুক্কুর মাহমুদ ও আবুল হাসনাত শহীদ বাদলও মনোনয়ন চাইবেন।
মানিকগঞ্জ-১ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য নাঈমুর রহমান দুর্জয়, মানিকগঞ্জ-২ আসনে মমতাজ বেগম ও মানিকগঞ্জ-৩ আসনে জাহিদ মালেক স্বপন মনোনয়ন পাচ্ছেন।
মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে সুকুমার রঞ্জন ঘোষ ও ডা. বদিউজ্জামান মুন্সিগঞ্জ-২ আসনে সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি প্রকৌশলী ওয়াহেদ ও এর্টনী জেনারেল মাহবুবে আলম মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনে মৃণাল কান্তি দাশ ও সাবেক সংসদ সদস্য ইদ্রিস আলী মনোনয়ন দৌঁড়ে রয়েছেন।
কিশোরগঞ্জ-১ আসনে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ-৪ আসনে রেজওয়ান আহমেদ তৌফিক, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে অ্যাডভোকেট আফজাল ও কিশোরগঞ্জ-৬ আসনে নাজমুল আহসান পাপন একক প্রার্থী। অন্যদিকে কিশোরগঞ্জ-২ আসনে সোহরাব উদ্দীন ও রাসেল আহনেদ তুহিন ও আফজাল হোসেন, কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে ড. মিজানুল হক ও শেখ কবির আহমেদ মনোনয়ন দৌঁড়ে আছেন।
গাজীপুর-১ আসনে মন্ত্রী আকম মোকাম্মেল হক, গাজীপুর-২ আসনে জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুর-৩ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য রহমত আলীর পুত্র জামিল হাসান দুর্জয় একক প্রার্থী হচ্ছেন বলে জানা গেছে। অন্যদিকে গাজীপুর-৪ আসনে সিমিন হাসান রিমি ও সাবেক সংসদ সদস্য আফসার উদ্দীন আহমেদ খান, গাজীপুর-৫ আসনে মেহের আফরোজ চুমকী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আখতারুজ্জামান মনোনয়ন দৌঁড়ে আছেন।
নরসিংদী-১ আসনে নজরুল ইসলাম হীরু, নরসিংদী-২ আসনে কামরুল আশরাফ খান পোটন ও আনোয়ারুল আশরাফ খান, নরসিংদী-৪ আসনে নুরুল মজিদ হুমায়ুন একক প্রার্থী। নরসিংদী-৩ আসনে সিরাজুল ইসলাম মোল্লা ও জহিরুল হক মোহন মনোনয়ন দৌঁড়ে আছেন বলে জানা গেছে। নরসিংদী-৫ আসনে ব্যরিস্টার তৌফকুর রহমানের মনোয়ন চূড়ান্ত। বয়সের কারণে রাজিউদ্দীন আহমেদ রাজু এবার মনোনয়ন পাচ্ছেন না। তার পুত্র রাজিব আহমেদ পার্থও মনোনয়ন চাচ্ছেন।
ঢাকা-১ আসনে আব্দুল মান্নান খান, ঢাকা-২ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য কামরুল ইসলাম, ঢাকা-৩ আসনে সংসদ সদস্য নসরুল হামিদ বিপু, ঢাকা-৭ আসনে ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দীন, ঢাকা-৮ আসনে মোজাফফর হোসেন পল্টু, ঢাকা-৯ আসনে সাবের হোসেন চৌধুরী, ঢাকা-১০ আসনে সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, ঢাকা-১১ আসনে এ কে এম রহমতউল্লাহ, ঢাকা-১২ আসনে আসাদুজ্জামান খান কামাল, ঢাকা-১৩ আসনে জাহাঙ্গীর কবীর নানক ও ঢাকা-১৪ আসনে আসলামুল হকের একক প্রার্থীতা নিশ্চিত।
ঢাকা-৪ আসনে ড. আওলাদ হোসেন ও সানজীদা খানম, ঢাকা-৫ আসনে হাবিবুর রহমান মোল্লা, হারুন উর রশীদ মুন্না, কাজী মনিরুল ইসলান মনু ও হাবিবুর রহমান মোল্লার পুত্র মশিউর রহমান সজল, ঢাকা-৬ আসনে শাহে আলম মুরাদ, শহীদ কমিশনার ও ঢাকা মহানগর শ্রমিক লীগের (দক্ষিণ) সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব মোল্লা, ঢাকা-১৫ আসনে কামাল আহমেদ মজুমদার ও এখলাস উদ্দীন মোল্লা ও মঈনুল হাসান খান নিখিল, ঢাকা-১৬ আসনে ইলিয়াস উদ্দীন মোল্লা ও এম এ মান্নান কচি, ঢাকা-১৭ আসনে কর্নেল ফারুক খান ও ওয়াকিল আহমেদ, ঢাকা-১৮ আসনে সাহারা খাতুন, হাবিব হাসান ও তোফাজ্জল হোসেন, ঢাকা-১৯ আসনে ডা. এনামুর রহমান, যুবলীগের তুহিন ও মুরাদ জং, ঢাকা-২০ আসনে আব্দুল মালেক ও সাবেক সংসদ সদস্য বেনজীর আহমেদ মনোনয়ন দৌঁড়ে আছেন।