অনেকটা ফিল্মি স্টাইলে রাজধানীর উত্তরায় একটি সিকিউরিটি কোম্পানির গাড়ি থেকে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ১১ কোটি টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সকাল সাড়ে ৭টার দিকে উত্তরার ১৬ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর ব্রিজ সংলগ্ন এলাকা থেকে ওই টাকা ছিনতাই হয়। দিনভর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতার পর বিকালে এই টাকার বড় অংশ উদ্ধার করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানিয়েছে, সকাল সাড়ে ৭ টার ডাচ-বাংলা ব্যাংকের টাকা বহনকারী মানি প্ল্যান্ট লিংক প্রাইভেট লিমিটেডের ঢাকা মেট্রো-চ-৫১-৬৫৭৯০ নম্বরের একটি গাড়ি বুথে টাকা ঢুকাতে ঢাকা থেকে সাভার ইপিজেড যাচ্ছিলো। গাড়িটি তুরাগ থানাধীন ১৬ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় গেলে একটি কালো রংয়ের মাইক্রোবাস তাদের গতিরোধ করে। ওই গাড়িতে ১০ থেকে ১২ জন ছিল। তারা টাকা বহনকারী গাড়ির চালক ও কর্মীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ওই গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নেয়। গাড়িটি কিছুদূর চালিয়ে নেয়ার পর গাড়িতে থাকা টাকার ট্রাংক নিজেদের গাড়িতে তুলে পালিয়ে যায়।
খবর পেয়ে ডিবি পুলিশ ও থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে যায়। ঘটনাস্থলে ছুটে যান ডিএমপি’র একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তারা বিষয়টি আশপাশের লোকজনের কাছ থেকে জানেন। পরে ভুক্তভোগীরা তুরাগ থানায় যান। প্রত্যক্ষদর্শী রিকশাচালক সাব্বির আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, সকালে সড়ক ফাঁকা ছিল। লোকজনের আনাগোনাও ছিল কম। এ সময় একটি মাইক্রোবাস হঠাৎ এসে আরেকটি মাইক্রোবাসের সামনে দাঁড়ায়। ওই গাড়িটির সামনে ডিবি লেখা ছিল।
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় চা দোকানি সবুজ জানান, ডিবি লেখা গাড়ি দেখে টাকা বহনকারী গাড়িটি দাঁড়িয়ে যায়। এরপরেই ঘটে অন্য ঘটনা। তিনি জানান, একটি কালো গাড়িতে করে টাকা ছিনতাইকারীরা চলে যাওয়ার পর টাকা বহনকারীরা চিৎকার করতে থাকে। তাদের চিৎকারে লোকজন জড়ো হয়। পরে বিষয়টি জানাজানি হয় যে, সেখান থেকে টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।
মানি প্ল্যান্ট লিংক প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক অজয় কর সাংবাদিকদের জানান, টাকা বহনকারী আমাদের গাড়িটি সাভার ইপিজেড যাওয়ার জন্য মিরপুর ডিওএইচএস অফিস থেকে বের হয়ে দিয়াবাড়ি পার হওয়ার সময় ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে। তারা ১০ থেকে ১২ জন ছিল। এরপর তারা আমাদের গাড়িটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। পরে টাকা নিয়ে চলে যায়। তিনি আরও জানান, ছিনতাই হওয়া টাকা ডাচ-বাংলা ব্যাংকের। আমাদের টাকাগুলো বহন করে সাভারে পৌঁছে দেয়ার কথা ছিল। টাকা বহনের আগে পুলিশকে জানানো হয়েছিল কি-না তা তিনি জানাতে পারেননি।
এ বিষয়ে উত্তরা বিভাগের ডিসি মোর্শেদ আলম বলেন, গাড়িটি মিরপুর ডিওএইচএস থেকে বের হয়ে রওয়ানা দেয় সাভার ইপিজেডের উদ্দেশ্যে। ওই গাড়িতে ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ছিল। এ বিষয়ে মানি প্ল্যান্ট লিংক প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক ড. যশোদা জীবন দেবনাথ বলেন, ৪ ট্রাংক টাকা ছিনতাই হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ৩ ট্রাংক উদ্ধার হয়েছে। টাকাগুলো ডিবি’র হেফাজতে রয়েছে। কিন্তু কী পরিমাণ টাকা উদ্ধার হয়েছে, তা এখনো জানা সম্ভব হয়নি। এ ঘটনায় মানি প্ল্যান্টের কেউ জড়িত থাকতে পারে কি-না জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, থাকতে পারে। তবে যদি কেউ জড়িত থাকে এবং তদন্তে প্রমাণিত হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। তুরাগ থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে তিনি জানান।
যেভাবে উদ্ধার হলো টাকা: ছিনতাই হওয়ার পর নড়ে চড়ে বসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকা মহানগর ডিবি পুলিশের উত্তরা বিভাগের টিমসহ একাধিক টিমকে মাঠে নামানো হয়। রাজধানীর একাধিক পয়েন্টে বসানো হয় চেক পোস্ট। সিসিটিভি’র ফুটেজ থেকে কালো রংয়ের মাইক্রোবাসটি দেখে ওয়াকিটকিতে পুলিশের পক্ষ থেকে সব নিরাপত্তা পোস্টে তথ্য দেয়া হয়। এ ছাড়াও আশপাশের জেলাগুলোর পুলিশ সুপারদেরও বিষয়টি অবগত করা হয় যে, উত্তরা থেকে মোটা অঙ্কের টাকা ছিনতাই হয়েছে। পরে ল্যা মেরিডিয়ান হোটেলের সামনে একটি কালো রংয়ের মাইক্রোবাস জব্দ করা হয়। সেখান থেকে এক ড্রাইভারকে আটকসহ ছিনতাই হওয়া ৩টি টাকার বাক্স উদ্ধার করা হয়। ওই টাকার গননা করছে ডিবি পুলিশ। বাকি একটি বক্স উদ্ধারের চেষ্টা করছে তারা।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তরা বিভাগের ডিসি মো. আকরামুল হোসেন জানান, ‘খবর পেয়ে আমাদের টিমকে মাঠে নামানো হয়। টাকার তিনটি বক্স উদ্ধার হয়েছে। বাকি টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি জড়িতদের চিহ্নিত এবং ধরতে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। তুরাগ থানার ওসি মওদুত হাওলাদার জানান, মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
৮৯ বার