মানুষের কথায় বিভ্রান্ত না হয়ে কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমি জানি আমাদের পত্র-পত্রিকা নানা কথা লিখবে, টকশোতে অনেক কথা বলবে, বিরোধী দলরা কথা বলবে, হ্যাঁ বিরোধী দলরা বলবেই বা তাদের বলাই কর্তব্য। তারা তাদের কথা বলে যাক। কিন্তু আমাদের আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। আমরা সঠিক পথে আছি কি না? সঠিকভাবে দায়িত্বপাল ন করছি কি না? সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি কি না? কে কি বলল সেটা শুনে হয়ত আমরা দেখতে পারি কোথায় আমাদের কোন ঘাটতি আছে কি না? সেটুকু আমরা নেব। কিন্ত ওই কথায় যেন কেউ বিভ্রান্ত না হন। নিজেরা যেন হতাশা না হন। কেউ হতাশাগ্রস্থ না হয়ে পড়েন, সবাইকে সচেতন থাকবেন। হতাশা হবার মতো কিছু নেই। যখন যে অবস্থা হবে সেই অবস্থার সাথে মানিয়ে নিয়েই আমাদের চলতে হবে।
শনিবার (২৩ জুলাই) সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জনপ্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য ৩১ জন কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠানকে ‘বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক-২০২২’ পদক প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন। জাতীয় পাবলিক সার্ভিস দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মনোনীতদের হাতে পদক তুলে দেন মন্ত্রিসভার সিনিয়র সদস্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস সংকটে হিমশিম খাচ্ছে, সেই অবস্থায় আমরা কিন্তু আমাদের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের গতিটা অব্যাহত রাখতে পেরেছি। বর্তমান বিশ্বে কোন দেশই এককভাবে চলতে পারে না। বর্তমান বিশ্ব হচ্ছে গ্লোবাল ভিলেজ একে অপরের উপর অনেকে ক্ষেত্রে আমরা নির্ভরশীল। এটাও যেমন ঠিক এবং জাতির পিতার একটা কথা আমি বারবার স্মরণ করি এবং বারবার বলি, যুদ্ধবিধস্ত বাংলাদেশে তিনি যখন দায়িত্ব নিয়েছিলেন, বিদেশি সাংবাদিক তাকে জিজ্ঞেস করেছিল এদেশে তো কোন রকম কোন সম্পদ নেই। আপনি এদেশটাকে কিভাবে গড়ে তুলবেন। তিনি বলেছিলেন আমার মাটি আছে মানুষ আছে। আমি মাটি মানুষ দিয়েই এদেশ গড়ে তুলব। আমি সেটা বিশ্বাস করি। বাংলাদেশের মাটি অত্যান্ত উর্বর। যে দেশে একটা বীজ ফেললে গাছ হয় সে গাছ ফল দেয় সেদেশের মানুষ না খেয়ে কষ্ট করতে পারে না। এটাও জাতির পিতারই কথা।
তিনি বলেন, আমরা সেভাবেই চিন্তা করি। আমাদের যেটুকু সম্পদ সেটুকু যদি আমরা যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারি। আমাদের মানবসম্পদ এবং মাটি এ নিয়েই আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব। এটা আমি বিশ্বাস করি। কাজেই আমি মনে করি যে আজকে করোনাভাইরাস মোকাবেলা করা তার উপর আরেকটা আঘাত আসল রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সঙ্গে সঙ্গে আবার আমেরিকা রাশিয়ার উপর স্যাংশন দিল। ডলারের যে টাকা আদান-প্রদান সুইফট বন্ধ করে দেয়া। কাজেই আমাদের মতো দেশ না; আজকে উন্নত দেশগুলও বা ইউরোপ আমেরিকার বহু জায়গা সকলেই এখন কিন্তু ভুক্তভোগী। এই একটা সিদ্ধান্তের কারণে আজকে আমাদের সার কেনা বা খাদ্য কেনা অথবা আমাদের জ্বালানি তেল কেনা সব ক্ষেত্রেই কিন্তু বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। এটা শুধু আমরাই না সারাবিশ্বই আজকে একটা দুর্বিসহ অবস্থার মধ্যে পড়ে গেছে। এটা হল বাস্তবতা।
‘‘কাজেই আমি মনে করি যে, কেউ যদি মনে করেন একটা স্যাংশন দিয়ে দিলেই একটা দেশকে শিক্ষা দেয়া গেল কিন্তু সেই শিক্ষাটা দিতে যেয়ে সবাই কিন্তু এখন সেই শিক্ষা ভোগ করছে। সেই শিক্ষায় সবাই এখন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। আমাদের দেশে যেমন মূল্যস্ফীতি বেড়েছে কিন্তু উন্নত দেশগুলিতে অনেক অনেক বেশি মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেছে। জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে গেছে। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের কথা শুধু আমরা বলছি না আজকে উন্নত দেশগুলি তারা কিন্তু সুর্নিদিষ্ট করে দিয়েছে, বিদ্যুৎ সাশ্রয় তাদের করতে হবে। সেটা আপনি ইংল্যান্ড বলেন, আমেরিকা বলেন বা ইউরোপের দেশ বলেন, প্রত্যেকেটা উন্নত দেশ; আমি উন্নত দেশগুলির কথাই বেশি বলব, আমরা তো অনেক দূরে রয়ে গেছি। কিন্তু তাদের অবস্থাই হচ্ছে এই ধরনের করুণ, সেখানে আমরা কোথায়?
তারপরও আমি মনে করি আমাদের যেহেতু প্রশাসনিকভাবে দক্ষতার সাথে আপনারা আমাদের প্রশাসনের কর্মকর্তারা বা আমাদের অন্যান্য সমস্ত সংস্থা; প্রত্যেকেই স্ব স্ব দায়িত্ব পালন করছেন বলেই কিন্তু আমরা এখনো অনেক দেশ থেকে ভাল অবস্থায় এগিয়ে যাচ্ছি। তবুও ভবিষ্যৎ চিন্তা করে আমাদেরকে সাশ্রয়ী হতে হবে। আমাদেরকেও মিতব্যয়ী হতে হবে। এবং আমাদের অহেতুক যেন কোন অপচয় না হয় সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের সভাপতিত্ব অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এইচ এন আশিকুর রহমান। পদক প্রদান অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন জনপ্রশাসন সচিব কে এম আলী আজম।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
৭২ বার