বার্তা ডেক্সঃ-শ্যামাচরণ বর্মণ হত্যা অভিযুক্ত সুনামগঞ্জ ১ আসনের সাংসদ মোয়াজ্জম হোসেন রতন ও তার ভাই উপজেলা চেয়ারম্যান রোকেনের বিরুদ্ধে মামলা নেয়নি থানা। আদালতে মামলা করতে গিয়ে ও বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন বাদী পক্ষ। বর্মণ হত্যা দুই সপ্তাহ হতে চললো। অসহায়দের ন্যায় বিচার পাবার পক্ষে কথা বলতে আজো কেউ রাস্তায় নামেনি। জলমহালে চলমান এই মগের মুল্লুক দেখে সংক্ষুব্ধ আজ নাগরিক আন্দোলন । এই অন্যায়ের প্রতিবাদে ২১ শে জানুয়ারী সিলেটে ‘জলমহালে মগের মুল্লুকে সংক্ষুব্ধ নাগরিকবন্ধন’।  সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় পালিত হবে এই নাগরিকবন্ধন। সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন কমিটি নাগরিকবন্ধনে সাংসদ রতন ও তার ভাইয়ের মগের মুল্লুকের অবসান  কল্পে ও নির্যাতিত মৎস্যজীবীদের পাশে দাঁড়াতে সাধারনকে যোগদানের আহ্বান জানিয়েছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম-এ নিয়ে তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন- দেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের বরাতে জানা গেছে সুনামগঞ্জের সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ও তার ভাইদের দাপটে হাওর অঞ্চল এখন সন্ত্রাসের জনপদ। হাওরের জলমহালে, বালুমহালে সাংসদ রতনের রাজ। হাওর এখন মগের মুল্লুক। এখানে সাংসদ রতন’কে টাকা না দিয়ে কিছুই করা যায় না। সুনই নদীর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি সাংসদ ও তার ভাই রোকন’কে মাসিক দশ লক্ষ টাকা চাঁদা ও লাভের ছয় আনা প্রদানে আপত্তি জানানোয় গত ৭ই জানুয়ারী রাতে সুনই জলমহালের দখল নিতে স্থানীয় সংসদ সদস্যের ভাইয়ের নেতৃত্বে তান্ডব চালানো হয়। এ সময় জলমহালে মৎস্যজীবীদের খলা (জেলেদের থাকার জন্য তৈরি স্থাপনা) আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এ সময় ৬৫ বছর বয়সের শ্যামাচরণ বর্মণের গলা কেটে হত্যা করা হয়। শ্যামাচরণ সুনই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি চন্দন বর্মণ-এর পিতা। সাংসদ বাহিনীর এ হামলায় সমিতির কমপক্ষে ২০ জন সদস্য আহত হয়।

মনাই নদী প্রকাশিত সুনই নদী জলমহাল ১৪২২ বঙ্গাব্দ থেকে ১৪২৭ বঙ্গাব্ধ পর্যন্ত ইজারা প্রাপ্ত হয়ে ভোগ করে আসছে এই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি। ২০১৮ সালে এ সমতিকে মৎস্য আহরণের জন্য জাতীয় পদক দেয়া হয়। কিন্তু সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এ এলাকায় সাংসদ রতন ও তার তিন ভাইকে শরিকানা না দিয়ে কোন কিছুই করা যায় না। তাই মৎস্য আহরণে জাতীয় পদকপ্রাপ্ত এ সমিতির ইজারার দিকে নজর পড়ে সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের। তার নির্দেশে ও আপন ছোট ভাই ধর্মপাশা উপজেলার চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন রোকনের নেতৃত্বে ৭ই জানুয়ারী হামলা ও হত্যার ঘটনা ঘটে। সাংসদের আরো দুই ভাই এই হামলায় সসস্ত্র হয়ে অংশ নেন। এদের একজন উপজেলা আওয়ামীলীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মোবারক হোসেন মাসুক, অন্যজন মোতাহার হোসেন যতন।

এই হামলা ও হত্যার ঘটনা আকস্মিক ঘটা কোন সংঘর্ষ নয়। এটি একটি পরিকল্পিত হামলা। গত ৩রা ডিসেম্বর ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই হামলার আশংকা প্রকাশ করেছিল সমিতির দরিদ্র মৎস্যজীবী। তারা সেদিন সংবাদ সম্মেলনে বলেছিল, সাংসদের অত্যাচারে আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আজ নিরুপায় হয়ে আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবে এসেছি। সংবাদ সম্মেলনে নির্যাতিত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এই মৎস্যজীবীরা রাষ্ট্রের সর্বচ্চো পর্যায় থেকে এই সাংসদের নির্যাতন থেকে তাদের রক্ষার জন্য সহায়তা চেয়েছিল। সেই সংবাদ সম্মেলনে ওরা বলেছিল, যে কোন দিন আমাদের উপর হামলা হবে। আমাদের সবকিছু জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হবে। আমাদের আশংকা সমিতির নেতাদের হত্যা বা গুম করা হবে।

কিন্তু কেউ তাঁদের কথা আমলে নেয়নি। সুনামগঞ্জের পুলিশ ওদের নিরাপত্তা দিতে পারেনি। এই একমাসে কোন মানবাধিকার সংগঠন, সংখ্যালঘুদের স্বার্থরক্ষাকারী কোন প্রতিষ্ঠান, এমন কি কোন সংবাদমাধ্যম এই অভিযোগের সত্যতা নিরুপণে ঘটনাস্থলে যায়নি। সোজা কথায়- ঢাকায় তাদের এই সংবাদ সম্মেলন কোন সুফল এনে দেয়নি। ফলে গত ৭ জানুয়ারী জলমহালে যা হওয়ার কথা ছিল তাই হয়েছে। হামলা হয়েছে, লুট হয়েছে, অগ্নি সংযোগ হয়েছে। আর সাংসদ রতনের ভাইয়ের নেতৃত্বে সেই হামলাকালে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে শ্যামাচরণ বর্মণ’কে।

নিহত শ্যামাচরণ বর্মণের ছেলে চন্দন বর্মণ ধর্মপাশা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করতে চেয়েছিলেন। সেই মামলায় মোট ৬৩ জনকে আসামী ও ২১ জনকে সাক্ষ্মী করা হয়। ১ নং আসামী করা হয় সাংসদ রতনকে। কারন এই হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হচ্ছেন সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন রতন। অভিযোগপত্রে সাংসদের নাম থাকায় থানা মামলা নেয়নি। থানার ভাবখানা এমন সাংসদ যেন আইনের বাইরে। অথবা সাংসদ রতন হচ্ছেন এমন এক ফেরেশতা যে এমন কাজ করতে পারে না। পুলিশের এই ভূমিকা থাকাটা স্বাভাবিক। এক জলমহাল থেকে মাসে শুধু চাঁদা যদি দশ লক্ষ আদায় হয় তবে এই সাংসদের ভান্ডারে কত ধন সঞ্চিত আছে। এমন ধনবানের জন্য সাত খুন মাফ।

থানায় মামলা না নেয়ায় নিহতের পরিবার সুনামগঞ্জের আদালতে মামলা করতে গিয়েছিল, সেখানেও সমস্যা। এতো সমস্যার কারন বুঝতে হলে উচ্চপর্যায়ের বিচার বিভাগীয় তদন্ত দরকার। দশ-বিশ কোটি টাকায় বিক্রি হয়ে যাবে এমন কাউকে দিয়ে নয়, নির্লোভ বিচারপতিদের দিয়ে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে সাংসদ রতনের এই মগের মুল্লুকের সমাপ্তি টানা উচিত। কিন্তু এই উচিত কাজ করার জন্য কে আহবান জানাবে?

ফেসবুক স্ট্যাটাসে মন্তব্যঃ-

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম এর এই স্ট্যাটাসের সমর্থনে ও সাংসদ রতন ও তার ভাই রোকনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে অনেক গুণি জন মন্তব্য করেন ।  এদের মধ্যে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর সিলেট প্রতিনিধি  উজ্জ্বল-মেহদী  ও আমেরিকা প্রবাসী ইশতিয়াক আহমদ রুপু মন্তব্য হচ্ছে এরকম-

‘হাওরে ওয়াটারলর্ড রাজত্ব ভাঙতে একটানা পাঁচ বছর রিপোর্ট করেছিলাম। সাত পর্বের প্রতিবেদন হয়েছিল প্রথম আলোয়। তারপর যবনিকা ঘটে ওয়াটারলর্ড প্রভাবের। নজরদারি না থাকায় এল মগের যুগ। প্রকৃতির সান্নিধ্যে থাকা সরল মানুষজনের হাওরভাটির জনপদে এই মগদের তাড়াতে সমন্বিত প্রতিরোধ দরকার।- উজ্জ্বল-মেহদ

“সুনামগঞ্জের রাজনীতিতে যারাই ক্ষমতায় আসেন তাদের প্রত্যেকের মুললক্ষ্য থাকে এসব জলমহাল। তা আওয়ামী লীগ হউক কিম্বা বিএনপি। এমপি বা নেতা (কেউ কেউ) হয়ে প্রথমে বিল খাও না হয় বালু পাথর। বর্তমান সরকারের যে আর্থিক ভিত আছে সেখানে এসব বিল বাদাল লিজ প্রক্রিয়া বাদ দিয়ে প্রকৃত মৎস্যজীবিদের ভোগ করতে দেয়া হলে এসব খুন খারাবি বন্ধ হবে। সুনামগঞ্জের শুধু রাজনৈতিক নেতারা না আরো অনেক টাউট বাটপারদের প্রভাব ও আদর যত্ন বিল ভিত্তিক। যিনি সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে সচিবালয়ে টাউটামি করে বিল লিজ আনবেন তিনি শহরে বা পুরা জেলায় হিরো।

অনেকে বলেন,আমাদের কিছু সাংসদ ( নাই) দের কাজ ছিলো বিল বাদালের মালিক দের সেবা দেয়া। বিনিময়ে সুনামগঞ্জ থেকে খাঁচা ভর্তি নানা জাতের মাছ আর টিন ভর্তি জিওল মাছ নিয়মিত উপকৌটন পাওয়া। শুধু এক এলাকার এক সাংসদ কিম্বা নেতার বিরুদ্ধে আন্দোলন করে লাভ কতটুকু হবে বুঝতে পারছি না। যে আসবে সেই হবে বিল খেকো আর বালু খেকো। তাই গোড়ায় এর সমস্যা সমাধান করা উচিত। সবচেয়ে দুঃখ হয় যে নির্বাচনী এলাকার সাংসদ ছিলেন সততার প্রতিক। সুনামগঞ্জ অঞ্চলে জাতির পিতার বিশ্বস্থ সুত্র আর ভরসার স্থান। সেই এলাকা থেকে বারবার উঠে নানা রকম দুর্নীতি আর মানুষ হত্যার চমকে উঠা খবর।

আর এ জন্য বর্তমান শাসক দল কোন অবস্থায় দায় এড়াতে পারবেন না। বহু বলা হয়েছে। কিন্তু কেউ তো কারো কথা শুনে না। দলের জন্য রাজপথে যারা মার খেলো মাথা ফাটালো তারা এখন মাল্যদানকারীর তালিকায় আর যারা সাংসদ পদ কে পূজি করে ক্ষমতা দেখায় মানুষ খুন করে বা করায়। তারা আজ ফিরে আসে বারবার। এসব নিয়ে একবার ভাবুন দলের কর্তারা প্লিজ। চোখ মুজে থাকলেই সমস্যা চলে যাবে না।”- ইশতিয়াক রুপু

 

 

 

 

 

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn