সাগরপথে অস্ট্রেলিয়াগামী এক বাংলাদেশীর করুণ আর্তনাদ
২০১৩ সালের জানুয়ারিতে রাসেল মাহমুদ বাংলাদেশ থেকে ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে মালয়েশিয়া যান। সেখানে এক সপ্তাহ থাকার পর যোগাযোগ হয় মানব-পাচারকারী একটি চক্রের সঙ্গে। ৭ হাজার মার্কিন ডলারের বিনিময়ে তাদেরকে অস্ট্রেলিয়ায় নিয়ে যাবে তারা। এই অর্থ তিনি নিয়ে এসেছিলেন বাংলাদেশ থেকে। একটি উপকূলীয় এলাকা থেকে নৌকায় করে তারা প্রথমে ইন্দোনেশিয়া রওনা হন। প্রায় ১৮ ঘণ্টা পর নৌকা ইন্দোনেশিয়ার উপকূলে পৌঁছায়। তার সহযাত্রীদের মধ্যে ছিলেন অনেক রোহিঙ্গা, সোমালি, ইরানি।মেডান শহরের একটি বাড়িতে তাদের এক সপ্তাহ রাখা হয়। তারপর নিয়ে যাওয়া হয় জাকার্তায়। জাকার্তা থেকে তাদের বিমানে করে নিয়ে যাওয়া হয় সুরাবায়া শহরে। সেখান থেকে আবারও নৌকায়।
এবারের গন্তব্য অস্ট্রেলিয়ার উপকূল। নৌকায় ছিল প্রায় একশো মানুষ। মাঝারি সাইজের নৌকা। ঘুমাতে হতো নৌকার পাটাতনে। নয়দিন নয়রাত সাগরে ছিলেন। একদিন সাগরের মাঝখানে দূর থেকে দেখা গেল এগিয়ে আসছে অস্ট্রেলিয়ান নৌ-বাহিনির একটি জাহাজ। রাসেল মাহমুদ এবং তাদের সঙ্গীরা ছিলেন উল্লসিত। এবার তাদের নিশ্চয় উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হবে অস্ট্রেলিয়ায়।কিন্তু তাদের ভাগ্য ছিল খারাপ। তাদের নিয়ে যাওয়া হয় ক্রিসমাস আইল্যান্ডে। সেখানে কয়েকদিন ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়। এরপর জানিয়ে দেয়া হয় অস্ট্রেলিয়ায় তাদের আশ্রয় দেয়া হবে না। তাদের সবাইকে নিয়ে যাওয়া হয় পাপুয়া নিউ গিনির এক ছোট্ট দ্বীপ মানাস আইল্যান্ডে। সেখানেই গত চার বছর ধরে বন্দী জীবন কাটছে রাসেলদের। রাসেল জানান, মানাস দ্বীপের বন্দী শিবিরে এখনো এক হাজারের মতো বন্দী আছেন। এদের বেশিরভাগেরই আশ্রয়ের আবেদন প্রত্যাখান করেছে অস্ট্রেলিয়া কর্তৃপক্ষ। এখানে বন্দি ৫০ জন বাংলাদেশীর মধ্যে ২০ জনের আশ্রয়ের আবেদন গৃহীত হয়েছেগত ৪ বছর ধরে বন্দি থাকলেও দেশে ফিরতে চান না রাসেল। তিনি বলেন, ‘যখন টেলিফোনে বাবা-মার সঙ্গে কথা হয়, তখন তারা দেশে ফিরে যেতে বলেন। কিন্তু আমি কিভাবে যাবো! ১২ লাখ টাকা খরচ করে ফেলেছি অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার জন্য। এখন কোন মুখে দেশে ফিরে যাবো? কিভাবে তাদের মুখ দেখাবো। আমি দেশে ফিরে যেতে চাই না।’তিনি আরো বলেন, ‘আত্মহত্যা ছাড়া আর উপায় নেই। শুধু আমি না, আমার সঙ্গে যারা আছে, তাদেরও একই চিন্তা। আপনি লিখে রাখেন, আমি রাসেল মাহমুদ, যদি আমাকে দেশে ফেরত পাঠায়, আমি আত্মহত্যাই করবো।’