সাবেক ছাত্রলীগ নেতার বক্তব্য এমন হয় কী করে?-তওহীদ ফিতরাত হোসেন
তওহীদ ফিতরাত হোসেন-
সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম তুষার ছাত্রদলের হত্যার উদ্দেশ্যে করা আক্রমণে মারাত্মক আহত এবং রাজপথে কোন প্রতিবাদ না হওয়ায় আমরা মুজিবাদর্শের সকলেই ব্যথিত। বিশেষ করে আমরা যারা ছাত্রলীগের রাজনীতি করে এসেছি। সাবেক যারা তারা অনুজের জন্য ব্যথিত। যেকোনো মুজিবাদর্শের জনের জন্য এই আক্রমণ শঙ্কার বিষয়। ছাত্রলীগের সর্বোচ্চ নেতার এমন মার খাওয়া সিলেটে এই প্রথম। কিন্তু কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বিগত কমিটির সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলমের করা দুটি ফেইসবুক পোষ্ট এবং পরবর্তীতে তাকে নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে যে কথামালার চালাচালি তাতে আমি আরো বেশী শঙ্কিত, এবং তার ভাষা ব্যবহারে ক্ষুব্ধ। তিনি সাবেক নেতা হিসাবে ব্যথিত হতে পারেন, কিন্তু যে ভাষায় সিলেটিদের নিয়ে মন্তব্য করেছেন তা অগ্রহণযোগ্য।
যুক্তরাজ্য ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি ঘোষণার পর বিখ্যাত সাংবাদিক আব্দুল গাফফার চৌধুরী সিদ্দিকী নাজমুল আলমকে নিয়ে তাঁর এক লেখনিতে কিছু কথা বলেছিলেন। সেদিন খুব মর্মাহত হয়েছিলাম। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলাম। কিন্তু আজ গাফফার ভাইয়ের সাথে একমত হয়ে ক্ষমা চাচ্ছি তাঁর কাছে। তিনি যা দুই তিন বছর আগে দেখেছিলেন আমরা আজ দেখছি।
নাজমুল দুটো শব্দ ব্যবহার করেছেন প্রথম পোষ্টে তা একজন সাবেক ছাত্রনেতার ভাষা হয় কি করে বুঝিনি। ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের এমন ভাষা হতে পারেনা।
সিলেটের বর্তমান কমিটি নাজমুলের সময়ে করা। ‘ভাইতন্ত্রের’ শুরুটা তাইলে তার হাতে ধরেই হয়েছে; তার মন্তব্যই প্রমাণ।
সিলেটে অনেকেই বলেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় কমিটি বিশাল অর্থের বিনিময়ে ভাইদের খুশী করতেই কমিটি বিক্রি করেছিলেন। ব্যক্তিগতভাবে তা বিশ্বাস করি নাই। সব সময় বিশ্বাস করি ছাত্রলীগ এমনভাবে অসত্ পথে রাজনৈতিক চর্চা করেনা।
বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সুযোগ্য সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন। তাকে নাকি তিনি তুলে এনেছেন। তার মানে জাকিরের নিজস্বতা নাই। ‘ভাইতন্ত্র’ এখানেও! সিলেটের কৃতিসন্তান জাকিরের কি কোন যোগ্যতাই ছিল না?
নাজমুল তাঁকে তুলে এনেছেন? ছাত্রলীগের নেতা নির্বাচন করেন তৃণমূল কর্মীরা, আর মাননীয় নেত্রী অনুমোদন দেন। আমি বিশ্বাস করি ছাত্রলীগ তার নেতৃত্ব নির্বাচন করে এবং সঠিক নেতাকেই পদে বসায়। জাকিরের একের পর এক কর্মই তার প্রমাণ।
এটা বলে নিজের দাম্ভিকতাই প্রকাশ করেছেন জনাব নাজমুল। ছাত্রলীগের পতন তাহলে আপনার জন্যই? এই পতনের কারণেই কি তিনি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ ছেড়ে ইংল্যান্ড পড়ে আছেন? ছাত্রলীগের এই বারোটা বাজানোর কারণেই কি নেত্রী লন্ডন এলে হোটেলের লবি থেকে নেত্রীর নিরাপত্তা কর্মীরা তাকে চলে যেতে বলে, এবং একজন সদ্য বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক নেত্রীর কাছাকাছি যেতে পারেন না।
আমরা খোলা চোখে অবাক হয়ে তাই দেখছি। বিগত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় ছাত্রলীগের সাবেকদের পুনর্মিলনীতে নাজমুলকে দেখিনি!
একজন সদ্য সাবেক ছাত্রনেতার হাতে যদি কোটি টাকা দামের ঘড়ি থাকে, এবং ইংল্যান্ডের মত দেশে কোন বৈধ উপার্জন ছাড়াও রাজকীয় জীবনযাপন করেন নিশ্চয় জনগণের মনে অনেক প্রশ্নের উদ্রেক করে। এই দেশে আমরা দিনান্ত কাজ করেও তার মত জৌলুস আর বাহারি জীবনযাপন করতে পারিনা। তিনি করেন। মানুষ যখন এমন প্রশ্ন করে তখন উত্তর থাকেনা। আশা করি তিনি সে উত্তর দেবেন।
তাঁকে চ্যালেঞ্জ করছি সত্ এবং সাহসী নেতা যদি হয়ে থাকেন এক সপ্তাহর মধ্যে দেশে যান। রাজনৈতিক কর্মী ওয়ালাদের আকাল। দল ক্ষমতায় বিদেশে কেন তিনি? দেশ ও জাতির জন্য ছাত্রলীগের পদ ছাড়াও কি কাজ করা যায়না?
পরিশেষে ছোট ভাইদের বলি পক্ষ বিপক্ষ হবার আগে একটু ভাবুন। সাদাকে সাদা বলুন। দাদা মানেই সাদা না। যাকে তাকে গালি দেবার অভ্যাস করবেন না। একদিন আপনিও বিগত হবেন। জেলা এবং জনগণ নিয়ে মন্তব্য করা অন্যায়। এই অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া মানে অস্তিত্ব বিকিয়ে দেওয়া। তা উচিত বা মঙ্গলকর নয়।