সামাজিক মাধ্যমে যা খুশি প্রচারের দিন শেষ হচ্ছে
মোস্তাফা জব্বার-সেপ্টেম্বরের পর সরকার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউবে সরাসরি নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা অর্জন করবে বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।তিনি বলেন, সেপ্টেম্বরের পর কেউ ইচ্ছা করলেই আর ফেসবুক-ইউটিউবে যা খুশি তা প্রচার করতে পারবে না। শনিবার দুপুরে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত ‘তারুণ্যের ভাবনায় আওয়ামী লীগ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা জানান। মোস্তাফা জব্বার আরও বলেন, আমরা এখন ইচ্ছে করলে যে কোনো ওয়েবসাইট নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। এটি আমাদের একটা বড় অর্জন। বিশেষ করে নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে আমরা এ সক্ষমতা অর্জন করেছি। এ কারণে সেই সময় কেউ কোনো গুজব ছড়াতে পারেনি। ইতিমধ্যে ইন্টারনেটকে নিরাপদ করার জন্য ২২ হাজার পর্নো সাইট বন্ধ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি বেটিং সাইটও বন্ধ করা হয়েছে। তিনি বলেন, সোশ্যাল মিডিয়াতে যখন-তখন স্ট্যাটাস দেয়াই হচ্ছে এখন বড় সংকট। ভিডিও প্রচারও একটা সংকট। এগুলোর ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয় না। এর প্রধান কারণ হল- ফেসবুক ও ইউটিউব মার্কিন প্রতিষ্ঠান। এগুলো সেখানকার কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ করে পরিচালিত হয়। আমরা হস্তক্ষেপ করতে পারি না।ডাক ও টেলিযোগযোগমন্ত্রী জব্বার বলেন, তবে সুখবর হল আমরা আশা করছি সেপ্টেম্বরের পর আমরা এক্ষেত্রেও সরাসরি হস্তক্ষেপ করার সক্ষমতা অর্জন করতে পারব। অর্থাৎ কেউ ইচ্ছা করলেই যা খুশি তাই সোশ্যাল মিডিয়ায় (ফেসবুক-ইউটিউবে) দিতে পারবে না, প্রচার করতে পারবে না। তিনি আরও বলেন, বিশেষ করে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ধন্যবাদ দেই। কারণ এক্ষেত্রে তারা দক্ষতা ও সক্ষমতা অর্জন করেছেন। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানাই। এটা অবশ্যই গর্ব করার বিষয়।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, তরুণ আইনজীবী, চিকিৎসক, বিভিন্ন সামাজিক ও অরাজনৈতিক সংগঠনের সংগঠকসহ তরুণ উদ্যোক্তারা অংশগ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার শাহ আলী ফরহাদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মেরিনা জাহান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। তরুণদের বিভিন্ন প্রশ্নের তারা উত্তর দেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার আরও বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে কিছু অনলাইন নিউজ পোর্টাল মিথ্যা ও গুজব ছড়ায়। এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে সমস্যা হয়। এ সময় তথ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশে করে জব্বার বলেন, নিবন্ধন তালিকা শেষ করেন, তাহলে আমরা অনিবন্ধিত পোর্টালগুলো বন্ধ করে দিতে পারব। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, সবাই সতর্ক হলে মৌলিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
ডাক ও টেলিযোগযোগমন্ত্রীর বক্তব্যের পর তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমরা অনলাইনগুলো রেজিস্ট্রেশনের আবেদনের জন্য সময় বেঁধে দিয়েছি। এরপর তথ্য মন্ত্রণালয়, আইসিটি মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে বৈধ অনলাইন পত্রিকার তালিকা প্রকাশ করা হবে। তিনি বলেন, প্রথমে শুনেছিলাম তিন হাজার আবেদন জমা পড়েছে। এরপর আবার নাকি আরও পাঁচ হাজার জমা পড়েছে। আমরা হয়তো আর ১ সপ্তাহ বা ১০ দিন সময় বাড়াব। কিন্তু সবাইকে রেজিস্ট্রেশন করতেই হবে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ভারতের সঙ্গে বৈরিতার মধ্যদিয়ে এগিয়ে যাওয়া কঠিন। ভারত আমাদের বৃহৎ প্রতিবেশী। তাদের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু আমাদের স্বার্থ আদায়ে আমরা একচুলও ছাড় দেইনি। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, বিএনপি-জামায়াত ভারতের বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা করে সস্তা রাজনীতি করছে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের শিকড়ের সম্পর্ক রয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত আমাদের শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছিল। খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে সব ধরনের সহযোগিতা করেছে। ভারতকে হেয়প্রতিপন্ন করে সস্তা রাজনীতি করতে চায় না আওয়ামী লীগ। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের শরণার্থীদের খাওয়া-দাওয়ার খরচ মেটাতে তৎকালীন ভারত সরকার ভ্যাটের পরিমাণ বাড়িয়ে আমাদের সাহায্য-সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছিল।
বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার বলেন, বঙ্গবন্ধু খুনিদের মধ্যে ছয়জনের রায় কার্যকর করা যায়নি। একজন বিদেশে থাকাকালে মারা গেছে। বিদেশে পালিয়ে থাকা খুনিদের মধ্যে দু’জনের অবস্থান আমরা পরিষ্কারভাবে জানি। এর বাইরে তিনজনের অবস্থান নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তিনি বলেন, যাদের অবস্থান নিশ্চিত তাদের ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর করা না গেলে নিজেকে আমার ব্যর্থ মনে হবে। শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, শেখ হাসিনা প্রথমবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসে কৃষি গবেষণার ওপর জোর দিয়েছিলেন। এজন্য আজ কৃষি গবেষণায় বাংলাদেশ পৃথিবীর অনেক দেশ তথা পশ্চিমা বিশ্ব থেকেও এগিয়ে গেছে। এ সময় শিক্ষা, বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণায় আওয়ামী লীগ সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তিনি তুলে ধরেন।
ছাত্র রাজনীতি নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, আমরা যখন ছাত্র রাজনীতিতে যোগ দেই তখন জানতামই না ক্ষমতা কি। তখন আমাদের চিন্তা-চেতনায় একটা বিষয় ছিল কিভাবে বঙ্গবন্ধুর ঘাতকদের বিচার হবে। কিভাবে হবে সেটাও আমরা জানতাম না। কোনো বৈষয়িক বিষয়ও আমাদের মাথায় ছিল না। তখন বাংলাদেশ সচিবালয় কোথায় সেটাও জানতাম না। ভিজিটিং কার্ড করার কথা জানতাম না। তবে আজকের রাজনীতি যেটা শুধু আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন নয়, অন্য সবার কথাই বলছি। তারা যতটা না আদর্শের জন্য রাজনীতি করে, তার চেয়ে বেশি মাথায় থাকে ব্যক্তিগত প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি। এটা আমাদের জন্য, সমাজের জন্য মোটেই সুখকর নয়। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে উপস্থিত হন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম। সমাপনী বক্তব্যে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এগিয়ে গেছে।