আল-হেলাল-

সুনামগঞ্জের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুস্পস্তবক অর্পনের মধ্যে দিয়ে নতুন জেলা প্রশাসক মোঃ সাবিরুল ইসলাম তার কর্মযজ্ঞ শুরু করেছেন। মঙ্গলবার বিকেলে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রতিনিধিদের নিয়ে পাবনা জেলা সদরের কৃষ্ণপুর গ্রামের প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিরুল ইসলাম বাদশাহ মিয়ার পুত্র মোঃ সাবিরুল ইসলাম ৭১ এর শহীদানদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। এর আগে সকাল ১০টায় পবিত্র মাহে রমজানকে সামনে রেখে ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সাথে মত বিনিময় করেন তিনি। দুপুর ১২টায় স্থানীয় সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সাথেও পৃথক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে। নবাগত জেলা প্রশাসক মোঃ সাবিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন,অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ কামরুজ্জামান,সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার তাপস রঞ্জন ঘোষ, পৌরসভার প্যানেল মেয়র হোসেন আহমদ রাসেল,সুনামগঞ্জ সরকারী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ পরিমল কান্তি দে,মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ দিলীপ কুমার মজুমদার,সাবেক প্রফেসর ম্যাথানিয়াল ফেয়ার ক্রস, নারীনেত্রী শীলা রায়,জেলা জাসদ সভাপতি আ ত সালেহ,দৈনিক সুনামগঞ্জ প্রতিদিনের উপদেষ্টা সম্পাদক কামরুজ্জামান চৌধুরী সাফি,সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক অধ্যক্ষ শেরগুল আহমদ,সাবেক পিপি মোঃ শফিকুল  আলম,এডভোকেট রইছ উদ্দিন। এছাড়াও সাংবাদিকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন,দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি আল হেলাল, দৈনিক যুগান্তর প্রতিনিধি মাহবুবুর রহমান পীর, দৈনিক কালের কন্ঠ প্রতিনিধি শামস শামীম,সুনামগঞ্জ সময়ের সম্পাদক সেলিম আহমদ তালুকদার,দৈনিক আমাদের সময়ের প্রতিনিধি বিন্দু তালুকদার, সাংবাদিক জসিম উদ্দিন,এনটিভির প্রতিনিধি দেওয়ান গিয়াস চৌধুরী,শাহজাহান চৌধুরী,সময় টিভির প্রতিনিধি হিমাদ্রি শেখর ভদ্র,আকরাম উদ্দিন,এডভোকেট এনামুল হক, ও রাজু আহমেদ রমজান প্রমুখ।
সভায় জেলা প্রশাসক বলেন,কবি বন্দে আলীর কবিতার মতোই সহজ সরল ও প্রাঞ্জল ভাষায় সম্প্রীতি ও ঐক্যের কথা উল্লেখ করে বলেন,আমি একটি কঠিন সময়ে এই জেলার দায়িত্ব নিয়েছি। ইতিপূর্বে ময়মনসিংহ জৈন্তাপুরসহ যত জায়গায় কাজ করেছি সবগুলো কর্মক্ষেত্রকেই নিজের বাড়ী মনে করে আন্তরিকতার সাথে কাজ করেছি। সুনামগঞ্জেও যাতে আমরা সবাই মিলে এক হয়ে কাজ করতে পারি সেজন্য আমার প্রচেষ্টার কোন ত্রুটি হবেনা। চলতি দুর্যোগ মোকাবেলায় আমরা সবাই মিলে এক পরিবারভূক্ত হয়ে কাজ করবো। সম্মিলিত সামাজিক শক্তি ও প্রশাসন একসাথে কাজ করলে সমস্যা মোকাবেলার পাশাপাশি সমাধানও করতে পারি। তিনি বলেন,সরকারের ত্রাণ ও পূণর্বাসন কার্যক্রমের মধ্যে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে হবে। চেয়ারম্যান মেম্বার যারাই ভিজিএফ ভিজিডির তালিকা করেননা কেন যেকোন তালিকা চুড়ান্ত করে ইউনিয়ন পরিষদ,উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে অবশ্যই সাঁটাতে হবে। ক্ষতিগ্রস্থের আংশিক নয় পূর্ণাঙ্গ তালিকা চাই। সাংবাদিকদেরকে অনুরোধ করবো পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজে ও পরবর্তীতে ত্রাণ বিতরনে অনিয়মের ব্যাপারে যত সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে সবগুলোর পেপার কাটিং আমাকে দিন। জামালগঞ্জ থানায় ওএমএস এর চাল কালোবাজারে বিক্রির ব্যাপারে জিডি হয়ে থাকলে সেখান থেকেই পুলিশ প্রশাসন যেন নিজ উদ্যোগে তদন্ত কাজ শুরু করে। এখন থেকে নিয়মিত জেলা তথ্য বাতায়ন আপগ্রেড করা হবে। কোথায়ও আইনের ব্যত্তয় ঘটাতে দেয়া হবেনা। বাঁধ বাণিজ্যর ব্যাপারেও সুনির্দিষ্ট তথ্য অবগত করুন ব্যবস্থা অবশ্যই নেয়া হবে। বকেয়া কৃষি ঋণ মওকুফের ব্যাপারে আমরা সরকারের কাছে পত্র লেখবো। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রুব্যমূল্য বিক্রয় সহজ থেকে সহজতর করার জন্য চেম্বার ও টিসিবির ডিলারদের সাথে আলোচনা করে সিদ্বান্ত নেবো। জেলার স্থল ও শুল্কবন্দর উন্মুক্ত রেখে ব্যবসা বাণিজ্যের সম্ভাবনার দ্বার যাতে উন্মুক্ত করা যায় সে ব্যাপারেও উদ্যোগ নেবো। জলমহালগুলো উন্নয়ন স্কীমের আওতায় বন্দোবস্ত নিয়ে কেউ যাতে সেচ পাম্প বসিয়ে জলমহাল শুকিয়ে মাছের বংশ নাশ করতে না পারে সেলক্ষ্যে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে সিদ্বান্ত নেবো। জিও এনজিওর সকল ক্ষুদ্র ঋণ আদায় স্থগিত রাখা হবে। ভিপি বাড়ী বন্দোবস্ত নিয়ে একজন পঙ্গু সাংবাদিক ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের সাথে যদি অন্যায় অবিচার করা হয়ে থাকে সেব্যাপারেও ব্যবস্থা নেবো। যেসব জায়গায় এখনও সরকারী ত্রাণ পৌছায়নি সেগুলো অনুসন্ধানের জন্য জেলা দুর্যোগ কমিটিকে সংশ্লিষ্ট সকল এলাকায় পাটানো হবে। এর আগে কবি বন্দে আলী মিয়ার রচিত“আমাদের ছোট গায়ে ছোট ঘর/থাকি সেথা সবে মিলে নাহি কেহ পর। পাড়ার সকল ছেলে মোরা ভাই ভাই/একসাথে খেলি আর পাঠশালে যাই”কবিতাটির উদ্ধৃত্তি দিয়ে বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী আল-হেলাল। তিনি সাবেক জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম কর্তৃক ভূয়া নাগরিকত্ব ও জাল সনদে চাকুরীপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসকের বাংলোর কর্মচারী মীরু হাওলাদার আলী ও ৭১এর রাজাকারের ভাই চেইনম্যান মছদ্দর আলীকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের আদেশ লঙ্ঘণক্রমে স্বজনপ্রীতির আশ্রয়ে ভিপি বাড়ী বন্দোবস্ত দেয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন,সাবেক জেলা প্রশাসক অত্যন্ত আপন মানুষ হওয়ার পরও আমার মতো একজন পঙ্গু সাংবাদিক ও যোদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের সাথে মারাত্মকভাবে বেআনসাফ করেছেন। সাংবাদিকরা হাওর রক্ষা বাঁধের কাজে ঠিকাদার-ভাগীদার ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির পিআইসির সভাপতি সম্পাদকদের নজিরবিহীন অনিয়ম দুর্নীতির কথা অকপটে তুলে ধরেন। নবাগত জেলা প্রশাসক মোঃ সাবিরুল ইসলাম দায়িত্ব সমজিয়ে নিয়ে তিনি হাওরাঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্থ মানুষজনের পাশে থেকে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তিনি এজন্য বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্র মিডিয়ার গণমাধ্যমকর্মীদের একান্ত সহযোগিতা কামনা করেন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn