সারা দেশে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই স্থগিত
জামুকার মহাপরিচালক পুণ্যব্রত চৌধুরী গত রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দেওয়ার আগে কিছু কমিটি তাদের যাচাই-বাছাই কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। তাদের প্রতিবেদন এখন জামুকার হাতে রয়েছে। এসব প্রতিবেদন আপাতত ফাইলবন্দি করে রাখা হয়েছে। আদালতের পরবর্তী সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে সেগুলোর ভবিষ্যৎ। এ জন্যই এসব প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আমরা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছি না। ’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা আদালতে আইনিভাবে জবাব দেব প্রতিপক্ষের। চূড়ান্ত শুনানি শেষে আদালত যে সিদ্ধান্ত দেবেন আমরা তা মেনে নেব। তবে আশা করি, আমরা আদালতকে সঠিক বিষয়টি বোঝাতে পারব এবং আদেশ আমাদের পক্ষে আসবে বলে প্রত্যাশা রাখি। ’
হাইকোর্ট গত ২৩ জানুয়ারি মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কার্যক্রমের ওপর চার মাসের স্থগিতাদেশ দেন। এ অবস্থায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিমের অভিমত নিয়ে জামুকা যাচাই-বাছাই কার্যক্রম স্থগিত করল। অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম তাঁর অভিমতে বলেন, হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যাচাই-বাছাই করা হলে সেটা হবে আদালত অবমাননা।
এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম বলেন, সারা দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা যাচাই-বাছাই কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালতের এ আদেশের পর আর কোনো যাচাই-বাছাই কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে না। যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার পরবর্তী সব কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। তবে স্থগিতাদেশের আগে যেসব কমিটি যাচাই-বাছাই করে প্রতিবেদন দিয়েছে বা যাচাই-বাছাই কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে সেসব বিষয়ে কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে আদালতের সিদ্ধান্তের ওপর। আদালত যদি সেটাকে বৈধতা দেন তবেই শুধু যাচাই-বাছাই কমিটির রিপোর্ট আমলে নিতে পারবে মন্ত্রণালয় ও জামুকা। অন্যথায় এ বিষয়ে তাদের কিছুই করণীয় নেই।
সারা দেশে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় গত ১২ জানুয়ারি এক গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সব উপজেলা, জেলা ও মহানগরের জন্য কমিটি করে। গত বছর ১০ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা যাচাই-বাছাইসংক্রান্ত নির্দেশিকা জারি করে জামুকা। এতে ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। পরে গত ৫ জানুয়ারি আরেকটি গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে যাচাই-বাছাইয়ের তারিখ পরিবর্তন করা হয়। পরবর্তী সময়ে ৪৫৯টি উপজেলা কমিটি, তিনটি জেলা কমিটি ও আটটি মহানগর কমিটি পুনর্গঠন করে ১৯ জানুয়ারি নতুন আদেশ জারি করে জামুকা। ১৯ জানুয়ারির ওই আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করা হলে স্থগিতাদেশ দেন হাইকোর্ট।
কমিটি গঠন নিয়ে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে এরই মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মাগুরা সদর, খুলনার বটিয়াঘাটা ও কয়রা, সাতক্ষীরার আশাশুনি, ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা, লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ এবং বান্দরবানসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে মুক্তিযোদ্ধারা একের পর এক রিট আবেদন করেন হাইকোর্টে। এসব রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টসংশ্লিষ্ট উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করেন। এ ছাড়া সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে ১৯৭৩ সালে নিয়োগ পাওয়া (বিশেষ সুপিরিয়র সার্ভিস) কর্মকর্তাদের মুক্তিযোদ্ধা সনদ যাচাই-বাছাই কার্যক্রম স্থগিত করা হয় আলাদা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে।
রিট আবেদনকারীদের দাবি, গেজেট প্রকাশের সময় ওই গেজেটকে চূড়ান্ত তালিকা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। গেজেটভুক্ত কোনো মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু আইন অনুযায়ী এভাবে গণহারে গেজেটভুক্ত সব মুক্তিযোদ্ধাকে পুনরায় যাচাই-বাছাই করার ক্ষমতা জামুকার নেই। প্রকারান্তরে এভাবে যাচাই-বাছাই করে মুক্তিযোদ্ধাদের সুনাম ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে।