ওয়েছ খছরু:আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আছে এন্তার প্রশ্ন। বিএনপি রাজপথের আন্দোলনে। নির্বাচন নিয়ে সিলেট বিএনপি’র নেতারা ভাবছেন না। দলীয় প্রধানের সঙ্গে বৈঠকের পর আওয়ামী লীগের নেতারা নড়াচড়া করছেন। তবে এখনো নেতারা পুরোপুরি অ্যাক্টিভ হননি। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কী হচ্ছে. কী হবে- এমন হাপিতেশে উদ্বিগ্ন মানুষ। এই অবস্থায় ক্ষমতায় থাকা মন্ত্রী ও এমপিরা সিলেটমুখী হচ্ছেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে তারা এলাকামুখী হয়েছেন। সিলেট জেলায় আছেন দু’জন পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী। এরা হলেন- পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন ও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মর্যাদাপূর্ণ সিলেট-১ আসনের এমপি। প্রথমবার এমপি হয়েই তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছেন। তার বড় ভাই প্রয়াত আবুল মাল আবদুল মুহিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী। তিনিও সিলেট-১ আসনের এমপি ছিলেন। বড় ভাইয়ের পর তিনি সিলেটে নৌকার টিকিট পান। বিগত ৫ বছর সিলেটের উন্নয়ন নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। এ নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এবার সিলেট-১ আসন থেকে ফের নৌকার টিকিট প্রত্যাশী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। পররাষ্ট্র দপ্তরের মন্ত্রী হওয়ায় দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়ানোর কারণে বিগত ৫ বছর তার কম সময় দেয়া হয়েছে সিলেটে। তবে দেশে থাকলে তিনি সপ্তাহে একবার সিলেট আসেন। এই আসা এখনো অব্যাহত রয়েছে। গত দু’মাস ধরে তিনি ঘন ঘন সিলেটে আসছেন। বিশেষ করে সিলেট সদর উপজেলার অবহেলিত জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্পে তিনি মনোনিবেশ করেছেন।
এসব এলাকায় সাহায্য সহযোগিতা এবং উন্নয়নের মাত্রা বাড়িয়েছেন। সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে সিলেট আওয়ামী লীগের অভিভাবক বলতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে সবাই মানেন। আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তিনি ছাড়াও সিলেট সিটি ও সদরের আওয়ামী লীগ নেতারা সক্রিয় হচ্ছেন। সিলেট-২ আসনের এমপি হচ্ছেন বিগত নির্বাচনের ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী মোকাব্বির খান। বিগত ৫ বছর তিনি মূলত এলাকায় সময় বেশি দিয়েছেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি ওসমানীনগর ও বিশ্বনাথে ঘন ঘন যাচ্ছেন। কিন্তু গণফোরামের এ কেন্দ্রীয় নেতা ৫ বছরে এলাকায় উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন করতে পারেননি। ফলে তাকে নিয়ে ক্ষোভ আছে এলাকায়। জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা কম রয়েছে তার। সিলেট-২ আসনে এমপি না হলেও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরী সব সময় সক্রিয় আছেন। নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনাও বিএনপি ও বিরোধী জোটের নেতাকর্মীদের অভিভাবক হিসেবে এলাকায় ঘন ঘন সফর করছেন। এবং দলীয় ও সামাজিক কর্মকা-ে তাকে সম্পৃক্ত হতে হচ্ছে। প্রায় দেড় বছর আগে সিলেট-৩ আসনে উপনির্বাচনে প্রার্থী হয়ে এমপি নির্বাচিত হন হাবিবুর রহমান। তাকে বলা হচ্ছে সিলেটের একমাত্র সরব এমপি। নির্বাচিত হয়েই তিনি দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জে চষে বেড়াচ্ছেন। ওই আসনের আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন- উপনির্বাচনে এমপি হওয়ার পর থেকে তিনি এলাকা বিচ্ছিন্ন হননি। অন্তত সপ্তাহে ৩-৪ দিন নিজ এলাকায় সময় দিচ্ছেন। শেষদিকে এসে তার উন্নয়ন দৃশ্যমান হচ্ছে। সর্বশেষ গতকাল তার প্রচেষ্টার ফসল একনেকের বৈঠকে বড়ভাগা নদীতে ব্রিজের টাকা ছাড়ের অনুমোদন মিলেছে। ফলে দেড় বছরে তিনি নজরে পড়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি আরও বেশি সময় এলাকায় দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন নেতারা।
সিলেট-৪ আসনের এমপি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ। সিলেটের সীমান্তবর্তী জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জের এমপি তিনি। এ আসনের আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন, গত চার মাস ধরে পুরোপুরি অ্যাক্টিভ ইমরান আহমদ। প্রতি সপ্তাহে দু’দিন এলাকায় থাকছেন। এর বাইরে এলাকার নেতাদের ঢাকায় নিয়ে গিয়ে বৈঠক করছেন। এ আসনের বাসিন্দারা জানিয়েছেন- সিলেটের অবহেলিত এ জনপদের উন্নয়ন নিয়ে প্রশ্ন আছে। অনেক এলাকায় এখনো সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হয়নি। নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রান্তিক পর্যায়ে উন্নয়ন ঘটাতে এসব এলাকা সফর করছেন মন্ত্রী। আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে এ ক’মাসে তার যোগাযোগ বেড়েছে। মাঝে মধ্যে ঢাকা থেকে এসে এলাকার সামাজিক অনুষ্ঠানেও যোগদান করছেন। সিলেট-৫ আসনের এমপি হাফিজ আহমদ মজুমদারও এলাকামুখী হয়েছেন। এ সপ্তাহে তিনি এলাকা সফর করেছেন। তবে- বিগত ৫ বছরের বেশি ভাগ সময়ই তিনি এলাকায় অনুপস্থিত ছিলেন। এমনকি সিলেটেও আসেননি। তার ঘনিষ্ঠজন আওয়ামী লীগ নেতারা তার হয়ে এলাকায় মানুষের কাছাকাছি ছিলেন। তবে তাকে নিয়ে স্থানীয় জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট আওয়ামী লীগের মধ্যে মান-অভিমান আছে। নেতাকর্মীরা এমপি’র দেখা পান না অভিযোগ রয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, বিগত নির্বাচনের আগে আর নির্বাচন করবেন না বলে ঘোষণা দিয়ে সরে গিয়েছিলেন হাফিজ আহমদ মজুমদার।
এরপর তাকে এনেই দেয়া হয় নৌকার টিকিট এবং তিনি পাস করেন। কিন্তু বিগত ৫ বছর অভিভাবকহীনই থেকেছেন দু’থানার নেতাকর্মীরা। এমনকি সাধারণ মানুষও তার দেখা পাননি। সিলেট-৬ আসনে যাতায়াত বাড়িয়ে দিয়েছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও এ আসনের এমপি নুরুল ইসলাম নাহিদ। গত ৪-৫ মাস ধরে তিনি ঘন ঘন এলাকায় আসছেন। এর আগে কমই আসতেন। নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় তিনি এলাকায় তৎপরতা বাড়িয়েছেন। গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারের আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন, এখন তিনি এক সপ্তাহের জন্য এলাকায় অবস্থান করেন। সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে কাজ করছেন। এদিকে, এ আসনে আরেক আওয়ামী লীগ নেতা কানাডা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সরওয়ার হোসেন বিগত ৫ বছর জনগণের কাছাকাছি ছিলেন। ২০২২ সালের বন্যায় তিনি এলাকায় সবচেয়ে বেশি ত্রাণ বিতরণ করে নজর আসেন। ওই সময় বর্তমান এমপি’র ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছিল। সেই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য এখন নুরুল ইসলাম নাহিদ ঘন ঘন এলাকায় অবস্থান করছেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
১৯১ বার