সিলেটে ঈদ বাজারে ভাটা, হতাশ বিক্রেতারা
দেবকল্যাণ ধর বাপন-
রমজানের ২০ দিন শেষ হতে চললেও সিলেটে এখনো জমে নি ঈদের বাজার। কাপড়ের দোকোনগুলোতে নেই আশানুরুপ কেনাবেছা। ফলে হতাশ বিক্রেতারা। ব্যবসায়ীদের দাবি, নগরীর ক্রেতারা মূলত শেষের দিকে ঈদের কেনাকাটা করেন। এরকম মধ্যবর্তী সময়ে শহরের বাইরের ক্রেতারা কেনাকাটায় আসেন। কিন্তু হাওর অঞ্চলের ফসল তলিয়ে যাওয়ায় বাইরের ক্রেতারা আসছেন না। এছাড়া প্রবাসীরাও কম এসেছেন ফলে ভাটা পড়েছে ঈদের ব্যবসায়। গত মার্চে অকাল বন্যায় তলিয়ে যায় সিলেট বিভাগের হাওরাঞ্চলের প্রায় নব্বই শতাংশ ফসল। এতে বিভাগের সবগুলো জেলাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একমাত্র ফসল হারিয়ে সুনামগঞ্জসহ হাওরপ্রধান এলাকাগুলোতে চলছে চৈত্রের নিদান। ফলে এবার ঈদে নতুন পোষাক কিনছেন না এসব এলাকার বাসিন্দারা। এর প্রভাব পড়েছে সিলেটের ঈদ বাজারে।
গত বুধ ও বৃহস্পতিবার সিলেটের বিভিন্ন শপিং মল ও ফ্যাশন হাউসের বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এখনো ঈদের কেনাকাটা জমে না উঠায় হতাশা প্রকাশ করেছেন তারা। নগরীর সিটি সেন্টার, ব্লু ওয়াটার, কাকলি শপিং সিটি, মিলেনিয়াম শপিং সিটি,শুকরিরা মার্কেট, সিলেট প্লাজা, মধুবন মার্কেট সহ নগরীর আরো কিছু বিপণী বিতান ও নয়াসড়ক এলাকার কয়েকটি ফ্যাশন হাউস ঘুরে দেখা যায় এই চিত্র। ব্যবসায়ীরা জানান, হাওরে বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে মানুষের হাতে টাকাপয়সা নেই। ফলে তারা কেনাকাটা করতে পারছেন না। এছাড়া আগে সিলেটের লোকজন প্রবাসের স্বজনদেরকেও ঈদ উপহার পাঠাতেন। এখন তাও কমে গেছে। এছাড়া এবার ঈদের সময় ছুটি না থাকায় প্রবাসীরাও দেশে আসেননি। সবমিলিয়েই এবারের ঈদের বাজারে লেগেছে মন্দা ভাব।
ব্যাবসায়ীরা জানান, আগে গ্রাম থেকে ক্রেতারা এসে শহরে ঈদের জন্য কেনাকাটা করতেন কিন্তু হাওর অঞ্চলে অকাল বন্যার কারণে গ্রামের ক্রেতারা আসছেন না। অন্যান্যবছর এমন সময়ে বিপণী বিতানগুলোতে মানুষের উপচেপড়া ভিড় থাকলেও এবার অনেকটাই ব্যতিক্রম। দিনের বেশিলবাগ সময়ই শপিংমলগুলো ক্রেতাশূণ্য থাকতে দেখা যায়। দু’একটি ব্যতিক্রম ছাড়া শপিং মলের মতো বড় বড় ফ্যাশন হাউস ও ব্র্যান্ড শপগুলোতেও কেনাবেচা নেই বললেই চলে। ঈদ উপলক্ষ্যে প্রায় সব পোষাক ব্যবসায়ীই বাড়তি বিনিয়োগ করে নতুন ডিজাইনের কাপড় তুলেছিলেন নিজেদের শো-রুমে। তবে এখন পর্যন্ত আশানুরুপ ব্যবসা করতে পারেননি তারা।
নগরীর সিলেট সিটি সেন্টারের মল্লিকা শাড়ী ফ্যাশনের সত্বাধীকারী বলেন, ‘ এবারের ব্যাবসা ভয়াবহ খারাপ। যদি বিকিকিনি ভালো হতো তাহলে আপনার সাথে কথা বলারও সময় হতো না। কিন্তু এ বছর তেমন কিছুই নেই। ক্রেতাশূন্যই বলা চলে।’ তিনি আরো বলেন ‘আমার ১০ বছরের ব্যাবসায়ী জীবনে সবচেয়ে খারাপ বাজার দেখলাম এবার।’ কাকলি শপিং সিটির তামান্না লেডিস ফ্যাশন এন্ড গার্মেন্টসের সত্বাধীকারী মো. জাকারিয়া ইমরুল বলেন, ‘আমাদের দোকানে নিম্ন আয়ের মানুষই মূল ক্রেতা। হাওরের ফসলের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের বেচাকেনাও পানিতে তলিয়ে গেছে।
সিটি সেন্টারের ফেয়ার লেডি ও ড্রেস লাইনের সত্বাধীকারী মোহাম্মদ মুন্না আহমদ বলেন, ইবারোর ব্যাবসা ‘পুরা চাঙ্গো’ (লাটে উঠেছে)। তিনি আরো বলেন, ‘ব্যাবসার অবস্থা এতোটাই খারাপ যে, পার্টিদের টাকা কিভাবে দেবো তা নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অন্য বছরগুলোতে এই সময় কেনাবেচার ধুম থাকত। এখন তেমন কিছুই নেই। তবে কিছু মানুষ তাদের শিশুসন্তানের জন্য সামান্য কেনাকাটা করছেন।’
সিটি সেন্টারের শাড়ী কুঞ্জের সত্বাধীকারী বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর কালেকশন অনেক বেশী। কিন্তু দোকানে ক্রেতা শূন্য। এর কারণ হিসাবে এবারের প্রাকৃতিক দূর্যোগকেই দায়ী করলেন তিনি। তিনি বলেন, এ বছর আগাম বন্যা আর হাওর অঞ্চলে বুরো ফসল নষ্ট হওয়ায় এবারের বাজারে ক্রেতা কম। নয়াসড়ক এলাকার মাহা ফ্যাশন হাউসের কর্মকর্তা শাহান উদ্দিন আহমদ বলেন, অন্যান্য বছরের চাইতে এবছর ব্যবসা অনেকটাই খারাপ। প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি প্রবাসীরা এবার ঈদে দেশে আসেননি। ফলে ক্রেতাসঙ্কট দেখা দিয়েছে।