সিলেটে চার বন্ধুর একসঙ্গে বিদায়
ওয়েছ খসরু:
মর্মান্তিক। হৃদয় বিদারকও। চারবন্ধু একসঙ্গেই মারা গেলেন। এ ঘটনায় মাতম চলছে সিলেটের টুকেরবাজারে। বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগরেও শোকে কাতর মানুষ। এমন ঘটনা কেউ চায়নি। বন্ধুর বিয়েতে গিয়েছিলেন তারা। কিন্তু ফিরতে হলো লাশ হয়ে। গতকাল জানাজায় হাজার হাজার মানুষ কেঁদেছেন। ঘটনাটি ঘটেছে সিলেট-ছাতক সড়কের তাজপুরে। চার বন্ধু বিশ্বনাথের মাহতাবপুরের গিয়াস উদ্দিনের ছেলে তোফায়েল আহমদ (২৭), সিলেটের জালালাবাদ থানাধীন টুকেরবাজার শেখপাড়া গ্রামের সোরাব আলীর ছেলে রাজু আহমদ (৩৫), একই গ্রামের ফজলুল হকের ছেলে তায়েফ (২৭) ও ওসমানীনগর উপজেলার গোয়ালাবাজারের শাহজাহান (৩০)। তাদের সঙ্গে ছিলেন আরেক বন্ধু গৌবিন্দগঞ্জের মাসুম আহমদ। টুকেরবাজারের ব্যবসায়ী বন্ধু রুহুল আমীনের বিয়ে ছিল শুক্রবার। কন্যার বাড়ি ছাতকে। এ কারণে শুক্রবার দুপুরে তারা বন্ধু রুহুলের বিয়েতে ছাতক গিয়েছিলেন। প্রাইভেট কারে ছিলেন ৫ বন্ধু। নিজের গাড়ি চালাচ্ছিলেন শাহজাহান। যাওয়ার সময় তিনি গাড়ি চালিয়ে যান। তারা বিয়ের আসরে গিয়ে হই-হুল্লোড় করেন। খাওয়া-দাওয়া শেষে বিকালে তারা ছাতক থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। আসার সময় রাজু চালাচ্ছিল গাড়ি। সিলেট-ছাতক সড়কের তাজপুর নামক স্থানে এসে প্রাইভেট কারের হঠাৎ ব্রেক কষেন রাজু। কিন্তু গাড়ি থামেনি। দ্রুত বেগে থাকা প্রাইভেট কারটি গিয়ে ধাক্কা খায় রাস্তার পাশে থাকা গাছের সঙ্গে। এরপর গাড়িটি গিয়ে পড়ে খালের পানিতে। কচুরিপানা ভর্তি খালে গাড়িটি দ্রুতই পানিতে তলিয়ে যায়। গাড়ি পানিতে পড়ার পর স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এসে তাদের উদ্ধারের চেষ্টা চালান। প্রথমেই উদ্ধার হন তাদের বন্ধু মাসুম। ফলে মাসুম আহত হলেও প্রাণে বেঁচে যান। কিন্তু তোফায়েল, রাজু, তায়েফ ও শাহজাহানকে যখন উদ্ধার করা হয় ততক্ষণে তারা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। এরপর একটি মিনি ট্রাকে করে চারজনকে দ্রুত পাঠিয়ে দেয়া হয় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। চার বন্ধুর একসঙ্গে মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে সিলেটে। সবচেয়ে বেশি শোকাহত হয়েছেন টুকেরবাজারবাসী। মারা যাওয়া চার জনের মধ্যে রাজু ও তায়েফের বাড়ি টুকেরবাজারে। দুইজনই কাজীরবাজারের মৎস্য আড়তের ব্যবসায়ী। ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান। তাদের মৃত্যুতে গোটা এলাকায় মাতম চলছে। গতকাল বাদ জোহর টুকেরবাজারে ঈদগাহে রাজু ও তায়েফের জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এই নামাজে হাজার হাজার মানুষ অংশ নেন। এরপর তাদের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। এলাকার লোকজন জানিয়েছেন- রাজু ও তায়েফ এলাকার সন্তান হিসেবে সবার কাছে প্রিয়পাত্র ছিলো। তারা কখনো কারও সঙ্গে খারাপ আচরণ করেননি। তাদের এমন মৃত্যুতে শোকাহত হয়ে পড়েছেন সবাই। শাহজাহান ছিল ওসমানী নগরের ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান। গতকাল ১০ টায় জানাজা শেষে তার মরদেহ দাফন করা হয়। আর বিশ্বনাথের তোফায়েলের জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয় সকাল ১১ টায়। এরপর তাকে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়। গতকাল সন্ধ্যায় কথা হয় মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনা থেকে প্রাণে বাঁচা মাসুমের সঙ্গে। মাসুমের বুকের পাঁজর ভেঙে গেছে ডাক্তাররা ধারণা করছেন। মাসুম জানান- বিয়ে থেকে তারা ফেরার পথে জোর করে রাজু বন্ধু শাহজাহানকে সরিয়ে নিজেই ড্রাইভিং সিটে বসে। শাহজাহান ছিল তার পাশে। শাহজাহান ড্রাইভিং ভালো জানে। কিন্তু রাজু তেমন ভালো ড্রাইভিং পারে না। এ কারণে ব্রেক কষার সঙ্গে সঙ্গে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়।