সিলেটে সীমাহীন দুর্ভোগে পানিবন্দী মানুষ
সিলেটের সাত উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হয়নি। বরঞ্চ কিছু কিছু স্থানে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। জেলার ৭টি উপজেলার অন্তত ৩ লাখ পানিবন্দী মানুষ রয়েছেন চরম দুর্ভোগে। বন্যাকবলিত এলাকায় দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। বাড়ছে পানিবাহিত নানা রোগের প্রকোপ। কাজ না থাকায় দিনমজুর মানুষরা কর্মহীন হয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। ত্রাণ না পেয়ে দীর্ঘায়িত হচ্ছে মানুষের হাহাকার।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ভারতের পাহাড়ি অঞ্চলে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। সিলেটের বালাগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, ওসমানীনগর, গোলাপগঞ্জ, জকিগঞ্জ ও কোম্পানিগঞ্জ উপজেলা বন্যার পানিতে তলিয়ে রয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কুশিয়ারা ও সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। সোমবার বিকেলে পর্যন্ত কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমারা ১৩৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল পানি। এছাড়া নদীর আমলসিদ পয়েন্টে বিপদসীমার ৯৪ সেন্টিমিটার ও শেওলা পয়েন্টে ১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। এদিকে, সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার দশমিক ৫৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় পানিবন্দী মানুষের দুর্ভোগ কমছে না।
সোমবার সরেজমিনে বিয়ানীবাজারে গিয়ে দেখা যায়, এ উপজেলার দশটি ইউনিয়নের মধ্যে সাতটিই বন্যাকবলিত। উপজেলার দুবাগ ইউনিয়নের সাদিমাপুর, সিলেটিপাড়া গ্রাম ও মেওয়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এসব গ্রাম পানির নিচে তলিয়ে আছে। গ্রামের বাড়িঘর, রাস্তাঘাট সবকিছুই পানির নিচে নিমজ্জিত। যানবাহন চলাচলের রাস্তার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় সেখান দিয়ে নৌকা চলাচল করতে দেখা গেছে। যাদের নৌকা নেই, তারা হাঁটু ও কোমর পানি ভেঙে কষ্ট করে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছেন। বন্যাকবলিত গ্রামগুলোর অনেক বাড়িতেই অসুস্থ মানুষজন রয়েছেন। কিন্তু চারদিকে থৈ থৈ পানি থাকায় অসুস্থদের নিয়ে চিকিৎসাকেন্দ্রে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বন্যাদুর্গত মানুষরা জানান, দুই দিন পানি কিছুটা কমলেও সোমবার থেকে আবারও পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
সরেজমিনে বালাগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় গিয়েও একই অবস্থা প্রত্যক্ষ করা গেছে। ফেঞ্চুগঞ্জে প্রায় এক মাস ধরে দীর্ঘমেয়াদী বন্যায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন মানুষ। বালাগঞ্জ উপজেলার প্রায় আশি ভাগ এলাকা বন্যাকবলিত। বন্যার পানিতে ডুবে গেছে উপজেলা পরিষদ, ডাকবাংলো, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সও। এদিকে, বন্যার কারণে নলকূপ তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়া খাদ্য সংকটও তীব্র হয়ে ওঠছে। ছড়িয়ে পড়ছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ পানিবাহিত নানা রোগের প্রকোপ।