সিলেট কারাগারে রিপনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর যেভাবে করা হয়
২০০৪ সালে সিলেটে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর উপর গ্রেনেড হামলা ও তিনজনকে হত্যার দায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দেলওয়ার ওরফে রিপনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে বুধবার দিবাগত রাত ১০টা ১ মিনিটে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. ছগির মিয়া এ তথ্য জানিয়েছেন। জল্লাদ ফারুকের নেতৃত্বে রিপনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। এ সময় তাকে সহযোগিতা করেন আরো ৯ জল্লাদ। রিপনের ফাঁসি কার্যকরের সময় সিলেটের জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সাফাত মো. শাহেদুল ইসলাম, ডিআইজি প্রিজন একেএম ফজলুল হক, সিলেটের কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. ছগির মিয়াসহ প্রশাসন ও কারাগার সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
রিপনের লাশ অ্যাম্বুলেন্সে করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তার গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের কোনাগাঁও গ্রামে নিয়ে যাবেন। এর আগে, বুধবার রাত পৌনে ৯টায় কারাগারের ভেতর ঢুকের আবু তুরাব জামে মসজিদের ইমাম মুফতি বেলাল উদ্দিন ও ডিআইজি প্রিজন একেএম ফজলুল হক। মুফতি বেলাল কারাগারের ভেতর জঙ্গি রিপনকে তওবা পড়ান। রাত ৯টা ২২ মিনিটে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন তিনি। রাত ৯টা ১৭ মিনিটে কারাগারের ভেতরে ঢুকেন সিলেটের জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সাফাত মো. শাহেদুল ইসলাম। পরে রাত সাড়ে ৯টায় রিপনের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহকারি পরিচালক অমল রতন সাহা কারাগারে ঢুকেন। রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে কারাগারে ভেতর শাহজালাল অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের একটি অ্যাম্বুলেন্স ঢুকে। এ অ্যাম্বুলেন্সে করেই রিপনের লাশ তার গ্রামের বাড়ি নিয়ে যাওয়া হবে।
বুধবার সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে একটি মাইক্রোবাস ও সিএনজি অটোরিকশাযোগে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে যান রিপনের পরিবারের ২৫ সদস্য। এর মধ্যে তার বাবা আবু ইউসুফ ও মা সমিরুল নেসাও ছিলেন। রিপনের সাথে শেষ সাক্ষাৎ করে রাত ৮টা ২৫ মিনিটে তারা বেরিয়ে আসেন। ২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহ.) এর মাজারের প্রধান ফটকে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর উপর গ্রেনেড হামলা হয়। হামলায় পুলিশের এএসআই কামাল উদ্দিন, কনস্টেবল রুবেল আহমদ এবং হাবিল মিয়া নামের এক ব্যক্তি নিহত এবং আনোয়ার চৌধুরীসহ ৭০ জন আহত হন। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর মুফতি হান্নান, শরীফ শাহেদুল ওরফে বিপুল, দেলওয়ার ওরফে রিপনকে মৃত্যুদন্ড এবং মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ও আবু জান্দালকে যাবজ্জীবন দণ্ড দেন সিলেট দ্রুত বিচার আদালত।
রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা। গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি পূর্বোক্ত রায় বহাল রাখেন হাইকোর্ট। পরে আসামিদের আপিল গত ৭ ডিসেম্বর খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি আসামিরা রিভিউ আবেদন করেন। ১৯ মার্চ সে আবেদন খারিজ হয়। পরে গত ২১ মার্চ রিভিউ খারিজের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়।
২২ মার্চ হুজি নেতা মুফতি হান্নান, শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল এবং দেলওয়ার ওরফে রিপনের রিভিউ আবেদন খারিজের পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে এসে পৌঁছায়। সিলেট কারাগারে থাকা দেলওয়ার ওরফে রিপনকে এ রায় শুনানো হয়। পরে ওইদিন সন্ধ্যায় এ তিন জঙ্গির মৃত্যু পরোয়ানা বিচারিক আদালত থেকে কারাগারে পৌঁছায়। এরপর, গত ২৩ মার্চ নিজের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন সিলেট কারাগারে বন্দী থাকা দেলওয়ার ওরফে রিপন। পরে ২৭ মার্চ তিনি লিখিতভাবে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গত রবিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘তিন জঙ্গির প্রাণভিক্ষার আবেদন রাষ্ট্রপতি নাকচ করে দিয়েছেন। কারাবিধি অনুযায়ী তাদের দণ্ড কার্যকরের প্রস্তুতি চলছে।’ গত মঙ্গলবার সকালে রিপনের প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ হওয়ার চিঠি সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে এসে পৌঁছায়। এরপর ফাঁসি কার্যকর প্রক্রিয়া শুরু করে কারা কর্তৃপক্ষ। এদিকে, মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত মফিজুর ও আবু জান্দাল আপিল করেননি। ফলে তাদের ওই সাজাই বহাল থাকে।