পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বার বার নির্যাতিতা ওই কিশোরীর বাড়ি যশোরে। সে নগরীর ঘাসিটুলা এলাকার একটি বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করতো। সেখান থেকে প্রায় ৪ বছর আগে পান্না বেগম (৪০) নামের এক মহিলা তাকে বেড়ানোর কথা বলে ফুসলিয়ে নিয়ে গিয়ে ভারতের একটি পতিতাপল্লির দালালের কাছে বিক্রি করে দেয়। পরে ওই কিশোরীকে চেন্নাইয়ের একটি নিষিদ্ধ পল্লিতে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা হয়। দুই বছরে সেখানেই কাটে ওই কিশোরীর।

ভারতে থাকাকালীন ওই কিশোরীর সঙ্গে সুনামগঞ্জের রেবা বেগম ওরফে মীমের (৩০) পরিচয় হয়। একপর্যায়ে বছর দুই আগে ভারতের এক লোকের সহায়তায় ভিকটিম চেন্নাই থেকে পালিয়ে কলকাতা হয়ে সিলেটে আসে। মীমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় সে সিলেটে এসে মীমের সঙ্গে তার গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জে চলে যায়। পরে মীম কিশোরীকে আশ্বস্ত করে তার গ্রামের বাড়ি যশোরে তাকে পৌঁছে দেবে। কিন্তু মানব পাচারকারী মীম ওই কিশোরীকে কৌশলে তার গ্রামের বাড়ি থেকে সিলেট নগরীর বাদামবাগিচার একটি বাসায় নিয়ে আসে। ওই বাসায় কিশোরীকে জিম্মি করে আরও দুই বছর তাকে নানারকম নির্যাতন করে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করে।

একপর্যায়ে ভিকটিম নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে গত ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে মীমের বাসা থেকে পালিয়ে হাউজিং এস্টেট এলাকায় চলে আসে। সেখানে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক রুবেলের (২৯) নিকট সহায়তা চাইলে সে তাকে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখান থেকে অন্য এক সিএনজি চালক মামুনের (২৬) সহায়তায় ভিকটিম বর্তমান ফরহাদ আহমদের (২৬) বাসায় আশ্রয় গ্রহণ করে। এরপর গত শুক্রবার (২০ মে) পৌনে ৯টায় মানব পাচারকারী মীমের সহযোগি অপহরণকারীরা ছোরার ভয় দেখিয়ে আশ্রয়দাতা ফরহাদ আহমদকে অপহরণ করে বাদামবাগিচা ব্রিজ-সংলগ্ন এলাকায় নিয়ে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।

বিষয়টি জেনে ফরহাদের স্ত্রী ৬ হাজার টাকা আরেক সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক আনোয়ারের মাধ্যমে দেওয়ার জন্য অপহরণকারীদের নিকট পাঠায়। এক পর্যায়ে ফরহাদ বাধ্য হয়ে অবশিষ্ট ৪৪ হাজার টাকা পরে দেওয়ার কথা জানালে তার সকল কথা মোবাইল ফোনে ভিডিও করে রেখে তাকে ছেড়ে দেয়। পরে ফরহাদ পুলিশের আশ্রয় নিলে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে ওই ঘটনায় এক নারীসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করে মহানগর পুলিশের (এসএমপি) জালালাবাদ থানাপুলিশ। শুক্রবার (২১ মে) রাতে নগরীর বাদামবাগিচা এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে একজন মানবপাচারকারী ও তিনজন অপহরণকারী

গ্রেফতাররা হলেন- সুনামগঞ্জ জেলার দিরাইয়ের শামীম আহমদের স্ত্রী রেবা বেগম ওরফে সুমি ওরফে মীম (৩০), বিমানবন্দর থানাধীন বাদামবাগিচা এলাকার সেলিম মিয়ার ছেলে শাহেদ আহমদ (৩৩), দোয়ারাবাজারের মাছিমপুর গ্রামের কালা মিয়ার ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (৩৩) ও খাসদবির এলাকার ইমন আহমদ (৩২)।

সিলেট মহানগর পুলিশের বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাইনুল ইসলাম জাকির শনিবার (২২ মে) সন্ধ্যায় সিলেটভিউ-কে বলেন, ওই কিশোরীর মূল বাড়ি যশোর। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সে ভারতে এবং সিলেটে ৪ বছর ধরে নির্যাতনের শিকার। তবে পুলিশ খবর পাওয়ামাত্র অভিযান চালিয়ে মানব পাচারকারী দলের সদস্য মীম ও অপহরণকারী চক্রের আরও ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। এ ঘটনায় ভিকটিম কিশোরী ও ফরহাদ আহমদ থানায় দুটি পৃথক অভিযোগ দায়ের করেছেন বলে জানান ওসি মাইনুল ইসলাম জাকির।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn