তুহিনুল হক তুহিনসিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে সরব হয়ে উঠেছে মাঠের রাজনীতি। প্রধান দুই দলেই মনোনয়ন প্রত্যাশী একাধিক প্রার্থী। আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে দুই জন সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হতে চাওয়ায় অনেকটা বেকায়দায় রয়েছেন দুই হেভিওয়েট প্রার্থী বিএনপি সমর্থিত বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে তাদের নিয়েই আলোচনা বেশি। এদিকে এবার সিলেট সিটি নির্বাচনে বিএনপিকে কোনোভাবেই ছাড় দিতে নারাজ শরিক দল জামায়াত।অনেক আগেই তারা নিজেদের প্রার্থীও ঘোষণা করেছে। জাতীয় নির্বাচনের আগেই সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন হবে এমন খবরে আরও আগে থেকেই সরব ছিলেন মেয়র প্রার্থীরা। এ বছরের শুরু থেকেই মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করেন তারা। অংশ নেন পাড়া-মহল্লার সামাজিক ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, জয় নিশ্চিত করতে পারবেন এমন ভাবমূর্তির প্রার্থীদেরই হয়তো শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন দেওয়া হবে। আওয়ামী লীগ থেকে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান এবং নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ  এখন পর্যন্ত আলোচনায় আছেন। এদিকে বিএনপি থেকে বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর পাশাপাশি মনোনয়ন প্রত্যাশী নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম। তবে জামায়াত থেকে প্রার্থিতা পেয়ে কিছুটা ভারমুক্ত অবস্থানে আছেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও  মহানগরের আমির অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের।

সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচনের বিষয়ে বলেন, ‘নির্বাচন আসলেই অনেকেরই ইচ্ছা থাকে মেয়র পদে নির্বাচন করার জন্য। তা আবার দল থেকে মনোনয়ন নিয়ে। আমাকে যদি এবার দল থেকে মনোনয়ন দেয় তাহলে আমি নির্বাচন করবো। আর যদি না দেয় তাহলে নির্বাচন করবো না।তবে আমি শতভাগ আশাবাদী, সিলেটের উন্নয়নের জন্য আগে যেভাবে আমাকে দলের নীতি নির্ধারকরা মূল্যায়ন করেছেন এবারও তারা তা করবেন।’ তিনি আরও জানান, ‘সিলেটের উন্নয়ন যাতে বাধাগ্রস্ত হয় সেজন্য আমাকে দুটি মামলায় জড়ানো হয়েছে। ২৭টি মাস আমার সিলেটবাসীকে উন্নয়ন ও তাদের অধিকার নিয়ে কথা বলা থেকে দূরে রাখা হয়। তবুও আমি সিলেটের উন্নয়নে নিজেকে ঢেলে দিয়েছি। কারাগার থেকে মুক্তি পেলেও রাজনৈতিকভাবে একরকম বন্দি। একমাত্র জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থনেই টিকে আছি।’ সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও শরিক দল মহানগর জামায়াতের আমির এবার নির্বাচনে প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন, এ প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, ‘বিএনপি একটি বড় দল। এখান থেকে যে কেউ প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করতে পারেন। জামায়াত শরীক দল হলেও তারাও নির্বাচন করতে ইচ্ছুক। তবে দলের হাইকমান্ডের নির্দেশ শেষ পর্যন্ত সবাইকে মেনে নিতে হবে।’ এদিকে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান বলেন, ‘সিলেট মহানগরীর মানুষ তাদের ন্যায্য চাওয়া পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছে। অতীতে পৌরসভার চেয়ারম্যান হিসেবেও আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছিলেন এই অঞ্চলের মানুষ। এরপর তাদের ভালোবাসায় আমি ২০০২ সালে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হই। সিলেটের মানুষ আবারও আমাকে চায়। আমি নিশ্চিত, এবারও দল আমাকে মূল্যায়ন করবে। সিলেটের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আমি নৌকার বিজয় ঘরে তুলতে চাই।’ 

২০১৩ সালের ১৫ জুন অনুষ্ঠিত হয় সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন। প্রথমবার নির্বাচনে দাঁড়িয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী টেলিভিশন প্রতীক নিয়ে পেয়েছিলেন ১ লাখ ৭ হাজার ৩৩০ ভোট ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান আনারস প্রতীক নিয়ে পেয়েছিলেন ৭২ হাজার ২৩০ ভোট। নির্বাচিত হওয়ার পর মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএসএম কিবরিয়া হত্যা, অপরটি সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত হত্যা চেষ্টা মামলা দুই দফায় ২৭ মাস কারাভোগ করেছিলেন। সেই সঙ্গে মেয়র পদ থেকে তাকে বরখাস্ত করা হয় দুই বার। সিটি নির্বাচনে আলাদা করে প্রার্থী দেওয়ার বিষয় জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য মাওলানা হাবীবুর রহমান বলেন, ‘বিএনপি আমাদের শরিক দল হলেও এবারের সিটি নির্বাচনে আমাদেরও প্রার্থী রয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত আমাদের প্রার্থী মাঠে সরব রয়েছেন। নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সিলেট মহানগর এলাকায় আমাদের বিশাল ভোট ব্যাংক রয়েছে। যার কারণে আমরা অনেকটা নিশ্চিন্ত রয়েছি।’ মনোনয়ন প্রত্যাশী সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ বলেন, ‘দল থেকে যাকে যোগ্য মনে করা হবে তাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে। এজন্য কাজ করবেন দলের নীতি নির্ধারকরা। দল যাকে মনোনয়ন দেবে দলের নেতাকর্মীরা সেই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করে যাবেন।’ সিলেট নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সিলেটের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এবার আওয়ামী লীগ থেকে নতুন প্রার্থী চায়। যে প্রার্থীর সঙ্গে তৃণমূলের যোগাযোগ অত্যন্ত ভালো। আমি আশা করি তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে যদি প্রার্থী দেওয়া হয় তাহলে আমাকে মূল্যায়ন করা হবে।’  মহানগর জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের ও  মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম দেশের বাইরে থাকায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn