ভারতের ডাউকি নদী ও বাংলাদেশের পিয়াইন নদের মিলনস্থলে পড়েছে সিলেটের জাফলং। ডাউকি থেকে উৎপত্তি পিয়াইনের। নদ-নদীর মিলনস্থলটি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের শূন্যরেখায় পড়েছে। দুই নদীর তীর বলতে সুউচ্চ পাহাড়। ঘন সবুজ প্রকৃতি আর পাহাড়ি ঝরনা। আছে বালু-পাথরের আচ্ছাদন। পাহাড়-নদীর সবুজ প্রকৃতি জাফলং দেশে-বিদেশে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। জাফলংকে ঘিরে সিলেটের জেলা প্রশাসন ‘প্রকৃতিকন্যা ব্র্যান্ডিং’ উদ্যোগ নিয়েছে।সিলেট শহর থেকে প্রায় ৫৬ কিলোমিটার দূরে জাফলং। গোয়াইনঘাট উপজেলার সীমান্ত অংশ জাফলংয়ে সারা বছরই প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকদের ভিড় থাকে। প্রাকৃতিক পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে প্রায় তিন দশকের বেশি সময় ধরে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণ ছড়াচ্ছে জাফলং। ওপারে আছে ডাউকি, এপার থেকে দুই পাহাড়ে যোগাযোগের যে ঝুলন্ত সেতু দেখা যায়, সেটি ঐতিহাসিক ‘ডাউকি ফল্ট’। সিলেট অঞ্চলে ‘বড় ভৈসাল’ নামে পরিচিত ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে দীর্ঘ ফাটল থেকে পাহাড় দুটির উৎপত্তি।

এপারে জাফলংয়ের সোনাটিলা চষে বেড়ানো পর্যটকদের কাছে আরেক আকর্ষণের। সেই সঙ্গে আছে খাসি রাজত্বকালে ‘মন্দিরজুম’। প্রায় হাজার বছরের পুরোনো খাসি সম্প্রদায়ের ঐতিহাসিক ‘মালনিয়াং রাজ্য’ থাকাকালে রাজধানী ছিল জাফলংয়ের বল্লাপুঞ্জি। প্রাচীন মালনিয়াং রাজ্য থেকে এসেছে জাফলং নামটিও। আনন্দের হাট বোঝাতেই নামের উৎপত্তি। এই দুই ঐতিহাসিক স্থাপনা ছাড়াও জাফলং বেড়ানোর উপলক্ষ এখন ভারতের মায়াবী ঝরনা। সীমান্তের শূন্যরেখায় গোসল আর খাসিপল্লি ঘুরে বেড়ানো পর্যটকদের কাছে বেশ প্রিয়। সিলেটের মধ্যে শুধু জাফলংযাত্রায় যানবাহন থেকে শুরু করে হাঁটা ও নৌকায় যাতায়াত করতে হয়। জাফলং থেকেই গোয়াইনঘাটের বিছনাকান্দি, রাতারগুল, জৈন্তাপুরের লালাখাল হয়ে মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওর, মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত ও লাউয়াছড়া উদ্যানে বেড়ানোর উপলক্ষ হয় পর্যটকদের। গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল হাকিম চৌধুরী জানালেন, যেকোনো ছুটির অবসরে পর্যটকদের ঢল নামে। গেল ঈদের পরে টানা তিন দিন লাখো পর্যটকের আনাগোনা হয়েছে জাফলংয়ে।
ঠিক কবে থেকে জাফলং পর্যটকদের কাছে পরিচিত হয়—এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর কারও কাছে নেই। তবে আশির দশকে বাংলা সিনেমার শুটিং স্পট হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হওয়ায় অনেকের ধারণা, সেই থেকে জাফলংয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেশের মানুষ জানতে শুরু করে। প্রাকৃতিক পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে জাফলংয়ের যাত্রা শুরু তখন থেকেই। মাসখানেক সময় ধরে সিলেটের জেলা প্রশাসন ‘প্রকৃতিকন্যা’ নামে শুধু জাফলং নয়, পুরো সিলেটকে ব্র্যান্ডিং করার উদ্যোগ নিয়েছে। জেলা প্রশাসক মো. রাহাত আনোয়ার গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রকৃতিকন্যা সিলেট নাম দিয়ে পুরো সিলেটকেই আমরা ব্র্যান্ডিং করার জন্য নানামুখী কাজ করছি। এর মধ্যে জাফলং অন্যতম। আমরা ভেবে দেখেছি, যদি জাফলংয়ে পাথর উত্তোলন ব্যবস্থা থেকে কেবল অবৈধ যন্ত্র (বোমামেশিন) অপসারণ করা যায়, তাহলে প্রাকৃতিকভাবেই জাফলং আরও আকর্ষণীয় ও সুন্দর হয়ে উঠবে।’
জেলা প্রশাসক আরও জানান, জাফলংয়ের খাসিয়াপুঞ্জি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারহীন অবস্থায় ছিল। বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ডের উদ্যোগে সাড়ে ১৭ লাখ টাকা ব্যয়ে সেটির সংস্কারকাজ শুরু হয়েছে। এ ছাড়া জাফলংয়ের পাশের তামাবিল স্থলবন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন, জেলা পরিষদের ব্যবস্থাপনায় রেস্টহাউসের আঙিনার সৌন্দর্য বৃদ্ধিকরণসহ নানা কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। আগের তুলনায় জাফলংয়ে প্রচুর পরিমাণে পর্যটন-পুলিশ নিযুক্ত করা হয়েছে। এক কথায়, জাফলংকে পর্যটনবান্ধব করতে সব ধরনের উদ্যোগ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn