সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থপাচার নিয়ে গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদ ‘অতিশয়োক্তি’ বলে দাবি করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেছেন, ‘যে হিসাবগুলো পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে এগুলো হলো লেনদেনের হিসাব, সম্পদের হিসাব। এটাকে অন্যায়ভাবে পাচার বলে প্রচার করা হয়েছে, এজন্য দেশে একটা ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হচ্ছে। বিদেশে অর্থপাচার হয় না—এ কথা বলা যাবে না। সত্যিই কিছু পাচার হয়, কিন্তু এটা নজরে পড়ার মতো নয়, অত্যন্ত যৎসামান্য।’ অর্থমন্ত্রী মঙ্গলবার সংসদে সুইস ব্যাংকে অর্থপাচার বিষয়ে ৩০০ বিধিতে দেয়া এক বিবৃতিতে একথা বলেন। তিনি বলেন, ‘দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। সুইজারল্যান্ডেও আমাদের এ ধরনের ব্যবসায়িক লেনদেন রয়েছে। সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকিং ব্যবস্থা অত্যন্ত উন্নত। তাই নিকটস্থ অন্যান্য দেশের সাথে ব্যবসায়িক দেনা-পাওনা, লেনদেন ও নিষ্পত্তি সুইস ব্যাংকের মাধ্যমেও পরিচালনা হয়ে থাকে।’

মন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের এবং সুইজারল্যান্ডের মধ্যে ব্যাংকের মাধ্যমে যে ব্যবসা-বাণিজ্যের হিসাব হয় সেটি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। বাস্তবে এটি মোটেই অর্থপাচার নয়। এসব হিসাবে ব্যক্তি খাতে অনেক বাংলাদেশি নাগরিক আছেন যারা বিদেশে কাজ করেন অথবা স্থায়ীভাবে অবস্থান করেন। তাদের হিসাবেও এটা অন্তর্ভুক্ত আছে। সে হিসাবটি দেয়া যাচ্ছে না। কেননা যেসব বাংলাদেশি তাদের পাসপোর্টকে পরিচয় চিহ্ন হিসেবে ব্যবহার করেছেন তাদের সংখ্যা আমাদের জানা নেই। এতে প্রতিপন্ন হয়, টাকা পাচারের বিষয়টি মোটেই তেমন কিছু নয়।’

মুহিত বলেন, ‘সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ২০১৫ সালে ছিল ৫৮২ দশমিক ৪৩ মিলিয়ন ডলার। বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্স ইন্টিলিজেন্স ইউনিট অতিরিক্ত তথ্য সংগ্রহ করেছে এবং তা বিশ্লেষণে করে একটি প্রতিবেদন অর্থ মন্ত্রণালয়ে দাখিল করেছে।’

তিনি বলেন, ‘২০১৩, ১৪, ১৫ ও ১৬ সালে সম্পন্ন প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে দেখা গেছে যে, সুইজারল্যান্ডের সাথে ব্যবসায়িক কারণে অনেক লেনদেন হয়েছে এবং ২০১৬ সালের হিসাব চূড়ান্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশের খাতে সুইস ব্যাংকগুলোর সম্পদের পরিমাণ হচ্ছে ২০১৬ সালে ১ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা। এ সময় তাদের দেনা হচ্ছে ৫ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ১ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা তারা ঋণ দিয়েছে এবং তাদের কাছে জমা হয়েছে ৫ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা।’

আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘সুইস ফ্রাঙ্কের বিনিময় হার হলো, ৮৪ টাকায় ১ সুইস ফ্রাঙ্ক। ২০১৫ সালে বাংলাদেশের যে দেনা ছিল সেটা এ বছরের দেনার চেয়ে প্রায় ২০ শতাংশ কম। আমাদের এবং সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোর দেনা-পাওনার পরিমাণ খুব বেশি। এটি অবশ্য ব্যক্তির আমানত অথবা দেনার হিসাবে অতি সীমিত একটি অনুপাত। ৩৯৯ দশমিক ৮ কোটি টাকার আমানতের ব্যক্তি খাতে দেনা হলো মোট দেনার মাত্র ৭ শতাংশ। আর সম্পদের ক্ষেত্রে ব্যক্তি খাতে মোট সম্পদ ১ হাজার ৮২৩ কোটি টাকার মধ্যে মাত্র ১৮৩ কোটি টাকা অর্থাৎ ১০ শতাংশ।’

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn