অচিরেই শুরু হচ্ছে মেডিকেল কলেজ ও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে’র কাজ
বিন্দু তালুকদার-
সুনামগঞ্জে ৫০০ শয্যার একটি হাসপাতালসহ মেডিকেল কলেজ ও একটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপনের দাবি জেলাবাসীর দীর্ঘদিনের। দেশ স্বাধীনের পর থেকে নানা সময়ে জেলার দায়িত্বশীল জনপ্রতিনিধি ও সরকারের উচ্চ পদে আসীন সুনামগঞ্জের কর্মকর্তাগণ বিভিন্নভাবে এসব দাবি বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছেন। সব চেষ্টা বাস্তবে রূপ নিতে চলছে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে।
একনেকে সুনামগঞ্জে ৫০০ শয্যার একটি হাসপাতালসহ মেডিকলে কলেজ স্থাপন প্রকল্প অনুমোদন হওয়ার পর কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে একটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপন অনুমোদন হওয়ায় আশার আলো দেখতে পায় জেলাবাসী।
সর্বশেষ গত ১৬ মে সুনামগঞ্জে ৫০০ শয্যার একটি হাসপাতালসহ মেডিকলে কলেজ ও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপনে প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণের জন্য সিদ্ধান্ত হয়েছে। জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা স্থান নির্বাচন কমিটির সভায় দুইটি প্রতিষ্ঠানের জন্য দুইটি স্থান বাছাই করা হয়। সভার রেজুলেশন মোতাবেক সুনামগঞ্জে ৫০০ শয্যার একটি হাসপাতালসহ মেডিকলে কলেজ স্থাপনের জন্য দিরাই রাস্তার মোড়ের উত্তর-পশ্চিম দিকে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ১৫৬ নং জেএল-এর কাঠইর মৌজায় মোট ৮৪টি দাগে ২৯.২৪ একর জমি স্থায়ীভাবে অধিগ্রহণের জন্য নির্বাচন
করা হয়। একইসাথে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপনের জন্য সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ৩৯ জে.এল-এর কুতুবপুর মৌজার (সুরমা নদীর আব্দুজ জহুর সেতুর পশ্চিম দিকে) ৫ একর জমি জমি স্থায়ীভাবে অধিগ্রহণের জন্য নির্বাচন করা হয়।
সভায় ওই দুইটি স্থান দু’টি প্রকল্পের জন্য উপযুক্ত বলে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়। ওই সভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), সহকারি পুলিশ সুপার হেলাল উদ্দিন ভুইয়া, এসসি সুনামগঞ্জ এর অধ্যক্ষ বেলাল হোসেন, ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. গৌতম রায়, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান, জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা অনজন দাস ও গণপূর্ত বিভাগের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী আশরাফুল আলম উপস্থিত ছিলেন। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা স্থান নির্বাচন কমিটির ওই দিনের সভার রেজুলেশন গত ২৪ মে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহা পরিচালক ও কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহা পরিচালককে পাঠানো হয়।
বিএমএ সুনামগঞ্জ জেলার শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. নুরুল ইসলাম বলেন,‘ সুনামগঞ্জে একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের দাবি দীর্ঘদিনের। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ৫০০ শয্যার হাসপাতালসহ একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপন হচ্ছে। এতে পিছিয়ে পড়া জেলার উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হবে। জেলার ছাত্র-ছাত্রীরা বাড়িতে থেকে ডাক্তার হওয়ার সুযোগ পাবে। মেডিকেল কলেজের জন্য যে জায়গাটুকু বাছাই করা হয়েছে তা বেশ উপযুক্ত হবে। কারণ এই জায়গাটুকু সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের পাশে ও বেশ কয়েকটি উপজেলার সংযোগ সড়কের পাশে।’
সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পরিমল কান্তি দে বলেন,‘প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সুনামগঞ্জে একটি বিশ্ববিদ্যালয় ও একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপনে আমরা দ্রুত বাস্তবায়ন চাই। মেডিকেল কলেজের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করায় আমরা আনন্দিত। আমরা আশা করি এই দুই প্রতিষ্ঠান স্থাপনে দ্রুত পূর্ণতা পাবে। ’
অবসরপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ও বিএমএ জেলা শাখার সাবেক সভাপতি ডা. আব্দুর নূর বলেন,‘মেডিকেল কলেজ স্থাপনের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের উদ্যোগ নেয়ায় আমরা খুশি। তবে এটা স্থাপনের জন্য দ্রুত কাজ শুরু করতে হবে। সুনামগঞ্জের ৫০০ শয্যার হাসপাতালসহ মেডিকেল কলেজ স্থাপনের জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই। দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ কামনা করি।’
জেলা স্থান নির্বাচন কমিটির সদস্য সচিব অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সাবেরা আক্তার জানান, সুনামগঞ্জে ৫০০ শয্যার হাসপাতালসহ একটি মেডিকেল কলেজ ও একটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপনের জন্য জেলা স্থান বাছাই কমিটির সভায় দুইটি প্রতিষ্ঠানের জন্যই স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। সভায় মেডিকেল কলেজের জন্য সদর উপজেলার মদনপুরে মেডিকেল কলেজ ও আব্দুর জহুর সেতুর পশ্চিম দিকে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপনের জন্য স্থান নির্ধারণ করা হয়। স্থান নির্ধারণের বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট চিঠির মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। ’
উল্লেখ্য, সুনামগঞ্জ-৩ আসনের (দক্ষিণ সুনামগঞ্জ ও জগন্নাথপুর) সংসদ সদস্য, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান গত বছরের ৪ অক্টোবর রাজধানীতে একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করেছিলেন হাওরের জেলা সুনামগঞ্জে একটি আধুনিক হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ স্থাপনের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেদিনের সভায় অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতমন্ত্রী এম এ মান্নানকে বলেছিলেন, ‘সুনামগঞ্জে হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হবে, আপনারা পরবর্তী কাজ শুরু করুন।’
এর পরপরই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মোতাবেক কার্যক্রম শুরু হয়। সরকারের এনইসি-একনেক ও সমন্বয় সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সুনামগঞ্জে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ স্থাপনের উদ্যোগ দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা অনুবিভাগ দ্রুত কাজ শুরু করে। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে গত বছরের ২২ নভেম্বর সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জনকে চিঠি দেয়া হয়। একইসাথে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ৩০ একর ভূমি খোঁজার জন্য সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসককে চিঠি দেয়া হয়।
গত ৪ অক্টোবর একনেকের সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা অনুবিভাগ থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহা পরিচালককে সুনামগঞ্জে হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ স্থাপনের লক্ষ্যে ডিপিপি প্রণয়ন করে মন্ত্রণালয়ের প্রেরণের নির্দেশ দেয়া হয়। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিকল্পনা ও গবেষণা পরিচালক ডা. রাশিদুন নেছা গত ২২ নভেম্বর সুনামগঞ্জে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল ও একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাই করে দ্রুত এই বিষয়ে একটি মতামত প্রদানের জন্য সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জনকে একটি চিঠি লিখেন। সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল হাকিম সুনামগঞ্জে নতুন করে ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ও একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা ও সম্ভাব্যতা উল্লেখ করে গত ৪ ডিসেম্বর চিঠি দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিকল্পনা ও গবেষণা পরিচালককে অনুরোধ করেন।-সহযোগী দৈনিকের সৌজন্যে।