সুনামগঞ্জের হাওর পাড়ের মানুষের কান্না ভরা ঈদ
ঈদ মানেই আনন্দ। আর এই অানন্দ সমান ভাবে শহর গ্রামে ধনী দরিদ্রের মধ্যে সর্বত্রই বয়ে যায়। কিন্তু ব্যক্তিক্রম ঘটে সুনামগঞ্জের ফসলহারা হাওর অঞ্চলের লাখো মানুষের মধ্যে। এবারের ঈদ ছিল তাদের মধ্যে দুঃখের। বিগত শতবছরের মধ্যে এরকম অভাব অনটনে পড়েননি জেলার কৃষক সহ অবস্থাশালী গৃহস্থরা। ঈদের দিনে তাদের চোখে ছিল পানি। বোবাকান্না তাদেরকে কথা বলার ভাষা হারিয়ে দিয়েছে। সবার মুখে একই কথা ঈদে যাদের আনন্দ সবচেয়ে বেশী সেই ছেলে মেয়েদের জন্যে কিছুই করতে পারিনি। নুন আনতে পানতা ফুরায়। ঈদে কাপড় চোপর লাচ্ছি সেমাই কি দিয়ে আনব। এবারের ঈদ আমাদের দুঃখ কষ্ট বাড়িয়ে দিয়েছে। মনে করে দিয়েছে হাওরের সেই মহাদূর্যোগের কথা। ঈদে সন্তাদের কিছু করতে না পেরে হাওরের পারের মানুষ বার বার কন্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন। গত দুই দিন সুনামগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে সাধারন মানুষের মধ্যে থেকে এরকম মন্তব্য পাওয়া যায়। ধরমপাশার গৃহস্থ কৃষক শফিক মিয়া বলেন, প্রতি বছর আমি যেখানে প্রায় দেড় হাজার মত বোর ধার পেতাম সেখানে এবার এক ছটাকও ধান পাইনি।
তিনি বলেন, আমি ধানের উপর নির্ভর করে আমার ঘরের সংসার ছলে। ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া বিয়ে সাদি ঈদ উৎসব সহ বিভিন্ন খরচ এই ধান থেকে হয়ে থাকে। এবার খাওয়ারই খিছু নেই। খুব অভাবে কাটছে। ধারদেনা করে চলছি। ঈদে ছেলে মেয়েদের জন্যে কিছউ কিনে দিতে পানি নি। দোকান থেকে ঈদের জন্যে বাকিতে লাচ্ছি সেমাই নিয়ে এসেছি। গৃহস্থ কৃষক আব্দুস সহিদ কথা বলতেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি বলেন, আমার বয়সেও এরকম দূর্গতিতে পরেনি। সব সময় ঘরের ভাত খেয়েছি। ঈদ উৎসবে ছেলে মেয়েদের নিয়ে খুব আনন্দ করেছি। কিন্তু এবার তার বিপরীত হয়েছে। নিজেই খেতে পারছি না ছেলে মেয়েদের জন্যে কি কিনে দেব। তিনি জানান, প্রতি বছর আমি হাজার মনের উপরে ধান পাই। তা দিয়ে আমি চলে যেতান। আর ধান বিক্রি করে ছোটখাট ব্যবসাও করতাম। আগামী একটি বছর কত কষ্ট করে চলতে হবে তা আল্লাই জানেন। তিনি জানান, যারা হাত পেতে নিতে পারছে তারাই সাহায্য পাচ্ছে। গৃহস্থ কৃষক পরিবারের এক গৃহিনীর জানান, হাওরে প্রায় সবার অবস্থা একই, ঘরে খাবার নেই তাই ঈদে ছেলে মেদের নতুন পোশাকা বা ঈদের পিঠা সেমাই নিয়ে ভাবছেনা এই পরিবারগুলোা।
গত মার্চ এপ্রিল মাসে পাহাড়ি ঢলে হাওর রক্ষা বাধ ভেঙ্গে থলিয়ে যায় সুনামগঞ্জ হাওরে একমাত্র ফসল, সেই থেকে সুনামগঞ্জের হাওর এলাকার প্রায় ৪ লক্ষ কৃষক পরিবারের লোকজন অনেকটা দিশেহারা। তাই এবার হাওরপারে ঈদের আনন্দ যেন একটু বাড়তি কষ্ট এনে দিচ্ছে। বছরের এই সময়টা যখন গোলাভরা ধান থাকতো হাওরপাড়ের লোকজন ছেলে মেয়েদের নিয়ে আনন্দমুখর পরিবেশে ঈদ উৎসব করতেন কিন্তু এবার ছেলে মেয়েদের নতুন পোশাক দিতে পারেনি এই ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো। পৌছায়নি সরকারি কোন সহায়তা তাই হাওরে মানুষগুলোর কাছে ঈদের আনন্দ যেন মলিন। এদিকে জেলা প্রশাসন থেকে ঈদকে সামনে রেখে কিছু ঈদের খাদ্য সামগ্রী বিতরন করলেও তা ছিল নিতান্তই একেবারেই অপ্রতুল।
সুনামগঞ্জ সদর আসনের সাংসদ অ্যাড. পীর ফজলুর রহমান মিছবাহ বলেন, এবারের ঈদ সুনামগঞ্জবাসীর জন্যে খুবই কষ্টের ছিল। ঈদের আনন্দ আমরা ভাগাভাগি করে করেছি। আমি চেষ্ট করেছি যতটুকু সহযোগীতা করার। তিনি আগামী একবছর সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে সব ধরনের সহযোগিতা রাখার আহবান জানান।