সুনামগঞ্জে ‘ধোপাজান চলতি নদী’র খনন নিয়ে নানা প্রশ্ন এলাকাবাসীর
সুনামগঞ্জ :: সীমান্তের ওপর থেকে আসা ধোপাজান চলতি নদীতে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নদী খনন কাজের শুরুতেই বিরূপ প্রশ্ন দেখা দিয়েছেন এলাকাবাসীর মধ্যে। গভীর নদীতে খনন কাজ শুরু করার কারণেই এই প্রশ্ন উদ্রেগ। সরকারের পক্ষ থেকে বরাদ্দ বড় অংকের টাকা নামমাত্র কাজ করে নয়ছয়ের আশঙ্কা করছেন তারা। চারদিন পূর্বে সদর উপজেলার কুচগাঁও এলাকা থেকে ধোপাজান চলতি নদীতে একটি ড্র্রেজার দিয়ে খনন কাজ শুরু করে অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের নিযুক্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স নবারুণ ট্রেডার্স। নৌ-যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে এই খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অভ্যন্তরীণ নৌ-পথের ৫৩টি রুটের ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের ২৪টি নদী খনন প্রকল্পের আওয়তায় ১৯ কোটি ৫৭ টাকা ব্যয়ে ৯ কিলোমিটার নদী খননের কার্যাদেশ গত ৩ জানুয়ারি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। চার দিন আগে কাজ শুরু কর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স নবারুণ ট্রেডার্স। চুক্তির শর্ত মোতাবেক শুষ্ক মৌসুমের শেষ পর্যায়ে এসে নদীর পানি যখন তলানীতে ঠেকে তখন ১০ ফুট গভীর ও ১২০ ফুট প্রস্থে নদী খনের কথা রয়েছে। সরেজমিন খনন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, চারদিন আগে চলতি নদীর কুচগাঁও এলাকায় একটি ড্রেজার মেশিন দিয়ে খনন কাজ শুরু করেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ৯ কিলোমিটার নদী খনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও নদীগর্ভ থেকে বালু-পাথর উত্তোলণ করার কারণে নদীর অনেক স্থানেই গভীর পানি রয়েছে। ফলে যে স্থানে নদী খনন শুরু হয়েছে সেই স্থানটি প্রাকৃতিকভাবেই অনেক গভীর।
উরারকান্দা গ্রামের কবির হোসেন বলেন, চলতি নদী খননের উদ্যোগ নেওয়া আমরা খুশি হয়েছিলাম, কিন্তু বাস্তবে দেখছি গভীর নদীতে কাজ শুরু করেছেন ঠিকাদার। এতে খনন কাজে সততা নিয়ে এলাকাবাসীর মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আমরা চাই সরকারি বরাদ্দের টাকা যাথে যথাযতভাবে জনগণের কল্যাণে ব্যয় হয়। নৌ-যান শ্রমিকরা জানান, ধোপাজান চলতি নদীর উজানে গত দুই দশকে বালু-পাথর উত্তোলণের কারণে অনেক স্থানেই গভীরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু অনেক স্থানে আবার উপর থেকে নেমে আসা বালুতে বড় বড় চর জেগেছে। খননের সুফল পেতে হলে গভীর স্থানগুলোতে লোকদেখানো খনন কাজ না করে চরজাগা এলাকাগুলোতে খনন কাজ শুরু করা জরুরি। এতে সরকারি অর্থ ব্যয় জনসাধারণের জন্য উপকারে আসবে। সদর উপজেলার ইব্রাহিমপুর গ্রামের নৌকা চালক আকিকুর রহমান বলেন, খনন শুরুর পূর্বে চলতিনদীতে যাতায়াতকারী নৌযান শ্রমিকদের সাথে কথা বলে কোথায় কোথায় শুষ্ক মৌসুমে পানি কমে যান চলাচল ব্যহত হয় সেটা চিহ্নিত করে সেখানে খনন করা উচিৎ। তিনি বলেন, নদীর অনেক স্থানে বড় বড় চর জেগেছে। সেগুলো খনন করে দিলে নদীর গতিপথ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতো। অনেকক্ষেত্রে নদীভাঙনও রোধ হতো। খনন কাজ শুরু হওয়া কুচগাঁও এলাকায় বুধবার সরেজমিন গিয়ে অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের কোন প্রকৌশলীকে পাওয়া যায়নি। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন খনন কাজের দেখভাল করছেন। ঠিকাদারের নিযুক্ত সহকারী মনির হোসেন বলেন, কর্তৃপক্ষের দেখানো স্থানে আমরা খনন শুরু করেছি। আমাদের যেভাবে নির্দেশনা দেওয়া হবে সেভাবেই খনন কাজ করা হবে।
অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) নির্বাহী প্রকৌশলী আ স ম মারেকুল আরেফিন বলেন, নদীর মোহনা থেকে উজানের দিকে ৯ কিলোমিটার নদী খননের জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নদীর স্বাভাবিক গতিপথ যেদিকে আছে সেদিকেই খনন করা হবে, তবে চরগুলো খননের কোন পরিকল্পনা আমাদের নেই। তিনি বলেন, ১২০ ফুট প্রস্থ করতে গিয়ে যদি কোন চর পড়ে সেটা খনন করা হবে। দুই বছরের মধ্যে কাজ শেষের সময়সীমা থাকলেও চলতি শুষ্ক মৌসুমের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা জানান এই প্রকৌশলী।